ফাইল চিত্র।
কোভিড হাসপাতাল নয়। তবু সেখানেই অ্যাম্বুল্যান্সে করে মাকে এনে হাজির করে পনেরো বছরের ছেলে। সঙ্গে কিছু প্রতিবেশী। চিকিৎসকেরা করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখতে চান। সে সব সঙ্গে আনেনি কেউ। বেশ খানিকক্ষণ পরে যদি বা রিপোর্ট আনা হয়, তা নাকি ছিল ‘অস্পষ্ট’।
এই জটিলতার মধ্যে মহিলাকে নামানোই হয়নি অ্যাম্বুল্যান্স থেকে। পরের দিকে অবশ্য চিকিৎসক, নার্সরা এসে অক্সিজেন দেন। অন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই মারা যান বছর পঁয়তিরিশের মহিলা।
কাগজপত্রের জটিলতায় না গিয়ে সময় মতো চিকিৎসা করতে পারলে প্রাণে বাঁচানো যেত বলে মনে করছে পরিবারটি। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, কোভিড হাসপাতাল না হওয়ায় সেখানে রোগীকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব ছিল না। তবু যতটুকু চেষ্টা করার, তা করা হয়েছে।
সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড় ১ ব্লকের নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালে। ভাঙড়ের কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার তাড়দহ গ্রামের বাসিন্দা মহিলার বেশ কিছু দিন ধরে জ্বর, সর্দি কাশি ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো লালারস পরীক্ষা করান। রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। বাড়িতে নিভৃতবাসে থেকেই চিকিৎসা চলছিল। এ দিন হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। পরিবারের লোকজন তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
কয়েক বছর আগে মহিলার স্বামীও অসুখে মারা যান। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেলের বয়স ১৫। ছোটজনের সবে ১০ বছর। অভাবের সংসার। স্বামী মারা যাওয়ার পরে গৃহসহায়িকার কাজ করে সংসার সামলাতেন তিনি।
এ দিন বড় ছেলে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় মাকে হাসপাতালে আনে। সকাল থেকে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনে ভ্যাকসিন নেওয়ার লম্বা লাইন ছিল। করোনা আক্রান্ত রোগীকে সেখানে নিয়ে যেতেই অন্যান্য রোগী ও সাধারণ মানুষ চিৎকার করতে থাকেন। বাধ্য হয়ে মহিলাকে অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই শুইয়ে রাখা হয়।
হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা বাড়ির লোকের কাছে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখতে চাইলে তাঁরা প্রথমে কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বাড়ি থেকে কাগজ আনতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় মহিলার। সে সময়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সরা ওই রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরেই অক্সিজেন-সহ অন্যান্য চিকিৎসা শুরু করেন। চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর।
মহিলার ছেলের কথায়, প্রথম থেকে যদি গুরুত্ব দিয়ে মায়ের চিকিৎসা শুরু করা হত, তা হলে হয় তো বেঁচে যেতেন। অ্যাম্বুল্যান্সে যেটুকু অক্সিজেন ছিল, তা শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে যখন অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়, তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসায় গাফিলতির কারণেই মায়ের মৃত্যু হয়েছে।’’
তাড়দহ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাকেশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত ওই রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করছিলেন পরিবারের লোকজন। প্রথম থেকেই যদি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার ব্যবস্থা করা হত, তা হলে হয় তো বেঁচে যেতেন।’’
ভাঙড় ১ বিএমওএইচ অনিমেষ হোড়ের কথায়, ‘‘ওই রোগীর পরিবার প্রথমে করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট দেখাতে পারেননি। আমরা অক্সিজেন থেকে শুরু করে সব রকম চিকিৎসার চেষ্টা করেছিলাম। যেহেতু আমাদের হাসপাতাল কোভিড হাসপাতাল নয়, তাই ওঁকে এখানে ভর্তি রাখা সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া, ওই রোগীকে কোভিড হাসপাতালে পাঠাতে গেলে করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট লাগত। দীর্ঘক্ষণ পরে ওঁরা যে কাগজ দেন, তা-ও খুব অস্পষ্ট ছিল। যদি আগে থেকে ওঁরা কাগজপত্র দিতেন, তা হলে অন্য কোনও কোভিড হাসপাতালে পাঠাতে পারতাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy