দেওয়ালে দেওয়ালে লাগানো হয়েছে এই পোস্টারই। নিজস্ব চিত্র
শুরুটা হয়েছিল হাতাহাতি দিয়ে। ফরাক্কার এনপিসিসি কলোনিতে চায়ের দোকান নিরঞ্জন হালদারের। মাস্ক পরা নিয়ে সেখানে বচসা শুরু হয় এক সন্ধ্যাবেলা। তা গড়ায় হাতাহাতিতে। কিন্তু দিন দু’য়েকের মাথায় ওই দোকানের পাশেই এক যুবক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় নিরঞ্জন পুরোপুরি বেঁকে বসেন। তাঁর সাফ কথা, দোকানে চা খেতে গেলে মাস্ক পরতেই হবে। নিরঞ্জনের সেই ‘ফরমান’কে ঘিরেও বচসা থেকে মারামারি কিছুই বাদ যায়নি। কয়েক জন দোকান ‘বয়কট’-ও করেন। কিন্তু নিরঞ্জনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এলাকার বহু মানুষ। তাঁদের উদ্যোগেই প্রথমে দেখা গেল চায়ের দোকানের সামনে পোস্টার, ‘মাস্ক পরুন।’
আঁকাবাঁকা রেখা, রং ধেবড়ে গিয়েছে এমন অনেক পোস্টারই একে একে দেখা গেল এলাকায়। অনেক বাড়ির বাচ্চারা সেই সব ছবি দেওয়া পোস্টার এঁকেছে। তাতে আবার করোনাভাইরাসের ছবিও রয়েছে। সেগুলো দেওয়ালে, চায়ের দোকানের পাল্লায়, বেড়ায়, পাঁচিলের গায়ে সেঁটে দিয়েছেন বড়রা। গোটা মহল্লাই গত সপ্তাহ দু’য়েকে এমন সদর্থক পোস্টারে মুখ ঢেকেছে।
ফরাক্কা ব্যারাজ স্কুলের শিক্ষক স্বপনকুমার দে বলেন, ‘‘বারবার এই পোস্টারগুলো দেখার একটা অভিঘাত হয়েছে। মানুষ মাস্ক পরতে শুরু করেছেন। বাড়ির বাচ্চাদের কথা ফেলতে পারছেন না অনেকে।’’
রাতারাতি তার ফলও মিলেছে। চল্লিশ থেকে করোনা সংক্রমণ এই কয়েক সপ্তাহে নেমে এসেছে তিনে। প্রায় হাজার দশেক মানুষের বাস এই কলোনিতে। মুদি, মোমো, তেলেভাজা, স্টেশনারি, মোবাইল থেকে শুরু করে অসংখ্য চায়ের দোকান। ধীরে ধীরে সর্বত্রই এক জোট হয়ে যেন একটা আন্দোলনই গড়ে উঠেছে। সর্বত্র পোস্টার, ‘মাস্ক ছাড়া দোকানে প্রবেশে নিষেধ।’
কিছু ছবি বড়দের আঁকা। কিন্তু বাচ্চারাই কেন এত ছবি আঁকল? স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ গুপ্ত বলছেন, “বাচ্চাদের তো স্কুলে আঁকতে হয়, তাই ওদের কাছে রং-তুলি এমনিতেই থাকে। এক জন আঁকলে আরও এক জন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই করে এখন অনেক বাড়িতেই বাচ্চারা নতুন নতুন পোস্টার তৈরি করছে।” স্কুল পড়ুয়া পম্পি, ছোটন, কাজলরাও বলছে, তাদের এই ধরনের ছবি আঁকতে বেশ মজা লাগছে। সকলেই চেষ্টা করছে নতুনত্ব আনার।
পাশেই মোবাইলের দোকান সমি কর্মকারের। বলছেন, ‘‘এলাকার ৯০ শতাংশ মানুষে মুখ ঢেকেছেন মাস্কে। বাচ্চাদের আঁকা তো, মনে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। তার ফল পাচ্ছে গোটা সমাজ।’’
ফরাক্কার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সজল পন্ডিত বলছেন, “এই নিদর্শন দেখে অন্যেরাও এগিয়ে আসুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy