রাজ্যে সংক্রমণের হারও কিছুটা বেড়েছে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কোভিড মৃত্যুর সংখ্যার মাপকাঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নজরে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ জেলা— কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং মালদহ।
আক্রান্তের সংখ্যা এবং জাতীয় গড়ের চেয়ে যে সকল রাজ্যের মৃত্যুহার বেশি, তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে শুক্র এবং শনিবার বৈঠক করে কেন্দ্র। এখন কোভিড মৃত্যুর জাতীয় গড় ২.০৪ শতাংশ। এ দিন পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ রাজ্যে কোভিড মৃত্যুর হার ২.২৩ শতাংশ। তবে বঙ্গের পাঁচটি জেলা থাকলেও বাকি সাত রাজ্যের মাত্র একটি করে জেলা নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেরলের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা দুই। তালিকায় অসমের কামরূপ মেট্রো, বিহারের পটনা, ঝাড়খণ্ডের রাঁচী, উত্তরপ্রদেশের লখনউ, ওড়িশার গঞ্জাম, দিল্লি এবং কেরলের তিরুঅনন্তপুরম ও আলাপুঝার নাম রয়েছে। এ দিনের বৈঠকে নতুন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, কেরল, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লির প্রতিনিধিদের স্বাস্থ্যসচিব, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মিশন অধিকর্তা, ওই জেলাগুলির জেলাশাসক, পুর কমিশনার ছাড়া বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ হাজির ছিলেন।
এ দিন বঙ্গে নতুন করে ২৯৪৯ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড পজ়িটিভ রোগীর মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। এ দিন রাজ্যের মোট মৃতের সংখ্যা দু’হাজারের গণ্ডি অতিক্রম করেছে।
আরও পড়ুন: স্কটিশ সুন্দরীর ‘টোপ’, করোনা প্রতিষেধকের কাঁচামাল পাঠাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত বাঙালি ব্যবসায়ী
আরও পড়ুন: বাদুড়িয়ায় বসেই কাশ্মীরি যুবকদের ওয়াজিরিস্তানের জঙ্গি ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠাত তানিয়া
কেন্দ্রের তালিকায় থাকা পাঁচ জেলার পরিসংখ্যান হল—কলকাতায় এক দিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮৪ (মোট ২৭২৪১), উত্তর ২৪ পরগনা ৬৫৩ (মোট ১৯৯৬৭), হাওড়া ২১৭ (মোট ৯৫৫০), হুগলি ১৮৫ (মোট ৪৪৮৮) এবং মালদহ ১২২ (মোট ৩০২০)। রাজ্যে চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত ৫১ জনের মধ্যে শুধু কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
এ পর্যন্ত কলকাতায় মোট মৃতের সংখ্যা ৯২৭। উত্তর ২৪ পরগনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা ৪৬৩। হাওড়ায় নতুন করে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। মোট মৃত্যু ২৪৩। হুগলিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৮ জনের। মালদহে সেই সংখ্যা ১৭।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
কেন পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ-পাঁচটি জেলা নজরে এল, তা নিয়ে মন্ত্রকের বিবৃতিতে আলাদা কিছু বলা হয়নি। মন্ত্রকের বক্তব্য, সারা দেশের মোট অ্যাক্টিভ কেসের মধ্যে ৯ শতাংশের জন্য দায়ী এই জেলাগুলি। মোট মৃত্যুহারের মাপকাঠিতে ১৩টি জেলার অবদান হল ১৪ শতাংশ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সেই হিসাবে পশ্চিমবঙ্গেরই পাঁচটি জেলার নাম তালিকায় থাকলে বঙ্গের করোনা পরিস্থিতি তো উদ্বেগজনক! এ বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ রাজ্যে এক সময় গড় মৃত্যুর হার ছিল ১২-১৩ শতাংশ। তা দুই শতাংশে নামিয়ে আনা কি কৃতিত্ব নয়!’’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
মন্ত্রকের বক্তব্য, এই অঞ্চলগুলি থেকে পাওয়া রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, অনেক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগী মারা যাচ্ছেন। এই অবস্থায় পরীক্ষার হার বাড়ানো ও রোগীকে যথাসময়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোয় নজর দিতে বলছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের বক্তব্য, এই রাজ্যগুলিতে করোনা-পরীক্ষার ল্যাবগুলির যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় যত পরীক্ষা হওয়া উচিত, সে অনুপাতে পরীক্ষা হচ্ছে না। রিপোর্টও আসছে দেরিতে। ফলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার সময় পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি, উপসর্গহীন রোগীকে নিভৃতবাসে রেখে নজরদারি চালানো, তাঁর সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তা যথাযথ অনুসন্ধানে জোর দিতে বলেছে কেন্দ্র। অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা রোগী প্রত্যাখ্যান করলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বনের পাশাপাশি বলা হয়েছে আইসিইউ, অক্সিজেন, শয্যা পরিকাঠামো বৃদ্ধির কথা।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy