সরগরম: লকডাউনের মেয়াদ বেড়েছে। বিপজ্জনক লাল তালিকায় ঢুকেছে পশ্চিম মেদিনীপুর। সে সবের পরোয়া না করেই শনিবার বেলা সাড়ে বারোটাতেও ভিড় মেদিনীপুরের রাজাবাজারে। পথে নেমেছে টোটোও। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
আশঙ্কা সত্যি করেই কেন্দ্রের রেড জ়োনের তালিকায় ঢুকে পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুরও। পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর আগে থেকে ওই তালিকায় ছিল। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর এতদিন ছিল ‘অরেঞ্জ জোনে’। জেলা রেড জ়োনে ঢুকে পড়ায় বিভিন্ন মহলে উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। রাজ্য অবশ্য জানিয়েছে, রেড নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর অরেঞ্জ জ়োনেই রয়েছে। কেন্দ্রের তরফে রেড জ়োনের জেলাগুলিতে নজরদারিতে আরও গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার দাবি, ‘‘জেলায় নজরদারিতে বরাবর গুরুত্ব দিয়ে আসা হচ্ছে।’’
জেলার স্বাস্থ্যভবনের দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুর অরেঞ্জ জ়োনেই রয়েছে, রেড জ়োনে যায়নি। রাজ্যের তালিকায় জেলা রেড জ়োনে নেইও। জেলার অন্য এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘কেন্দ্রের এমন তালিকার কথা শুনেছি। কীসের ভিত্তিতে কেন্দ্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাকে রেড জ়োনে নিয়ে এসেছে, তা আমাদের জানা নেই। আমরা বুঝতেও পারছি না!’’ বস্তুত, করোনা সংক্রমণের নিরিখে জ়োন ভাগ নিয়ে ইতিমধ্যে সংঘাত বেধেছে কেন্দ্র-রাজ্যের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদন বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে রেড জ়োনের সংখ্যা ৪ থেকে বেড়ে ১০ হয়েছে। অরেঞ্জ জ়োনের সংখ্যা ১১ থেকে কমে ৫ হয়েছে। গ্রিন জ়োনের সংখ্যা একই রয়েছে, ৮। কেন্দ্রীয় মূল্যায়ণকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার। সংশোধিত তালিকাও প্রকাশ করতে বলেছেন তিনি। কেন্দ্রের তরফে অবশ্য আর কোনও তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
রেড জ়োনে থাকা ওই ১০টি জেলার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরও। অরেঞ্জ থেকে জেলা রেড জ়োনে ঢুকে পড়ল কেন? বিভিন্ন মহলের মতে, সম্প্রতি দিল্লি ফেরত, খড়্গপুরের ৭ জন আরপিএফ জওয়ান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই সূত্রে জেলায় আক্রান্ত বেড়েছে। এর ফলেই জেলা রেড জ়োনে ঢুকে পড়েছে। জেলার স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, শনিবার পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে খড়্গপুরের ৭ জন বাদে দাসপুরের ৩ জন ও ঘাটালের ১ জন রয়েছেন। দাঁতনেরও ১ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তবে তাঁর করোনা ধরা পড়ে ওড়িশায়, মৃত্যুও হয়েছে সেখানে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকও মনে করছেন, ‘‘দিল্লি ফেরত আরপিএফ-রাই সমস্যা বাড়ালেন! না হলে জেলা ঠিকঠাকই ছিল।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, দাসপুরের ৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সেই হিসেবে এখন জেলায় ‘অ্যাক্টিভ কোভিড- ১৯ কেস’ ৮টি।
কেন্দ্র জানিয়েছে, আগে করোনা আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হারের নিরিখে জেলাগুলিকে হটস্পট বা রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জ়োনে ভাগ করা হয়েছিল। এখন করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। তাই আক্রান্তের সংখ্যা, আক্রান্তের সংখ্যার দ্বিগুণ হওয়ার হার, করোনা পরীক্ষা এবং নজরদারির তথ্যের উপর ভিত্তি করে জেলাগুলির জ়োন-ভিত্তিক পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। কেন্দ্র এ-ও জানিয়েছে, এই তালিকা পরিবর্তনশীল। প্রতি সপ্তাহে তালিকা সংশোধিত হবে। কেন্দ্র স্পষ্ট জানিয়েছে, তাদের স্থির করে দেওয়া রেড বা অরেঞ্জ জ়োনের তালিকা থেকে কোনও জেলাকে রাজ্য নিজের মতো করে শিথিল করতে পারবে না। জানা যাচ্ছে, কেন্দ্র নতুন নিয়মে অনেকগুলি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে। আপাতভাবে সংক্রমণ কম হলেও ভবিষ্যতে যে জেলাগুলিতে সংক্রমণ ছড়ানোর পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে তাদের রেড জ়োনে রাখা হয়েছে। জনঘনত্ব, করোনা পরীক্ষার সংখ্যা প্রভৃতি আরও বেশ কিছু বিষয় দেখা হয়েছে।
জেলাস্তরে পশ্চিম মেদিনীপুরকে অরেঞ্জ থেকে গ্রিনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। অবশ্য তা এখন সম্ভব নয়। কারণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নতুন নিয়মে সেই জেলাগুলিকেই গ্রিন জ়োনের আওতাভুক্ত ধরা হবে, যেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও করোনা আক্রান্ত নেই অথবা গত ২১ দিন কোনও ‘কেস’ রিপোর্ট হয়নি, অর্থাৎ, নতুন আক্রান্ত মেলেনি। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৩০ এপ্রিল শেষ ‘কেস’ রিপোর্ট হয়েছে।
এ নিয়ে জেলায় রাজনৈতিক চাপানউতোরও চলছেছে। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের কথায়, ‘‘ভিন্ন মাপকাঠিতে জ়োনের পুনর্বিন্যাস করেছে কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রক। রাজ্যের উচিত, কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে চলা। নির্দেশগুলি পালন করা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দুর্ভাগ্য, রাজ্যে তা হচ্ছে না।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির বক্তব্য, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিস্থিতি অনেক ভাল। তারপরও কেন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে কেন্দ্র এ ভাবে জেলাকে রেড জ়োন করেছে তা পরিষ্কার নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy