গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আক্রান্ত এবং মৃত্যুর মাপকাঠিতে সর্বোচ্চের পরিসংখ্যান ভেঙে মঙ্গলবারও নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে বঙ্গ। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭৫২ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে জানানো হয়েছে। কলকাতা (১৫), উত্তর ২৪ পরগনা (১৪), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৬), হাওড়ার (৬) পাশাপাশি হুগলি (২), দার্জিলিং (৪), দক্ষিণ দিনাজপুর (২), মালদহ (১), মুর্শিদাবাদ (১), নদিয়া (১), পশ্চিম মেদিনীপুর (১) এবং পূর্ব বর্ধমান (১) মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় কোভিড পজ়িটিভ ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বুলেটিনে জানানো হয়েছে।
তবে এই পরিসংখ্যান বাদ দিলে এ দিন ওয়াকিবহাল মহলে ঘুরেফিরে এসেছে ৩৬ বছর বয়সি চিকিৎসক নীতীশ কুমারের মৃত্যুর ঘটনা।
আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বয়স এবং কো-মর্বিডিটি দুশ্চিন্তার কারণ বলে সংক্রমণের গোড়া থেকে বলে আসছেন ডাক্তারদের একাংশ। এই দু’টি বিষয়ই নীতীশের মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তা হলে এত অল্প বয়সে কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসকের মৃত্যুর কারণ কী?
বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘বয়স্ক মানুষের আনুষঙ্গিক রোগ (কো-মর্বিডিটি) থাকলে সংক্রমিত ব্যক্তির দেহে কতখানি ভাইরাস প্রবেশ করেছে এবং তার প্রেক্ষিতে কী পরিমাণ প্রদাহ তৈরি হচ্ছে, তার উপরে শারীরিক জটিলতা তরান্বিত হতে পারে ঠিকই। কিন্তু সেটাই সব নয়। আসল কথা আক্রান্তের দেহে কী মাত্রায় ভাইরাস প্রবেশ করেছে, তা কত দ্রুত শরীরে বংশবৃদ্ধি করছে, তার আঘাতের তীব্রতা কেমন। এর সঙ্গে অতিরিক্ত মাত্রায় প্রদাহ হলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ অর্থাৎ ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ জনিত বিপদই উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আক্রান্তের শরীরে ‘বহিরাগত’ ভাইরাসের প্রবেশের পরে মানবদেহের কোষে সাইটোকাইনের (এক ধরনের প্রোটিন) মাত্রা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ভাইরোলজিস্টদের একাংশ জানান, এ ধরনের ভাইরাস প্রবেশের পরে মানবদেহের কোষ থেকে সাইটোকাইন মুক্ত হলে প্রদাহ তৈরি হয়। প্রদাহই রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক অস্ত্র। কিন্তু তা অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় হলে শরীরের নিজের কোষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করে।
রাজ্যে এ পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত মোট ১৭৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, তার মধ্যে কো-মর্বিডিটির কারণে মৃত্যু হয়েছে ১৫৫৯ জনের (৮৭.৩)। কো-মর্বিডিটির বৃত্তের বাইরে ছিলেন ২২৬ জন (১২.৭)। সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায় জানান, তরুণ চিকিৎসক বা করোনা আক্রান্ত এসএসএমের নার্স প্রিয়ঙ্কা মণ্ডলের (৩৮) মৃত্যুকে ব্যতিক্রম হিসাবে দেখাই ভাল। তাঁর কথায়, ‘‘সর্বতোভাবে চেষ্টা করার পরও দেহে অক্সিজেনের মাত্রা না বাড়লে কিছু করার থাকে না।’’
আরজি করের মেডিসিনের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় পাল জানান, রোগীর শারীরিক অবস্থা জটিল হওয়ার পিছনে মূলত তিনটি কারণ রয়েছে। ‘সাইটোকাইন স্টর্মে’র পাশাপাশি হাসপাতালে থাকাকালীন ব্যাক্টিরিয়া জনিত সংক্রমণে সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর একটি কারণ হল, ‘থ্রম্বোজেনিক ফেনোমেনন’ বা রক্ততঞ্চনের সমস্যা। অর্থাৎ, ফুসফুসের মধ্যে যে রক্তবাহ আছে তার মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধলে রক্তের সরবরাহ কমে যায় এবং ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে বাইরে থেকে অক্সিজেন পাঠালেও ফুসফুসের রক্তনালীতে প্রবেশ করতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘সাইটোকাইনের মাত্রা কত হলে তা বিপজ্জনক হিসাবে ধরা হবে, কী ভাবে হচ্ছে, কাদের হচ্ছে, করোনা আক্রান্ত কোনও রোগীর সাইটোকাইন স্টর্ম হলে তা আগাম বোঝা সম্ভব কি না, এখনও পর্যন্ত এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।’’
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy