ছেলে সৌম্যদীপের সঙ্গে পার্থ ভট্টাচার্য। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
বাবা টোটো চালক, আর ছেলে স্কুলপড়ুয়া। করোনা-কালে টোটোয় চাপিয়েই সংক্রমিতদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দিচ্ছেন দু’জনে। একেবারে নিখরচায়।
ঝাড়গ্রাম শহরের স্টেশনপাড়ার বাসিন্দা বছর তিপ্পান্নর পার্থ ভট্টাচার্য ও তাঁর ছোট ছেলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র বছর সতেরোর সৌম্যদীপকে এলাকায় লোকে এখন এক ডাকে চেনে। গৃহ নিভৃতবাসে (হোম আইসোলেশন) থাকা করোনা আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার খবর পেলেই পিপিই কিট পরে টোটো নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছেন পিতা-পুত্র। নিজের টোটো ঝাড়গ্রাম শ্রমজীবী ক্যান্টিনের রেড ভলান্টিয়ারদের ব্যবহারের জন্যও দিচ্ছেন পার্থ।
স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার প্রৌঢ়ের। চার জনের পরিবারে পার্থই প্রধান রোজগেরে। বড় ছেলে শুভদীপ পলিটেকনিটের মেকানিক্যাল ডিপ্লোমা করেছেন। আপাতত একটি অতিথিশালা দেখভালের কাজ করেন তিনি। মূলত পার্থর টোটোর ভরসাতেই সংসারের চারা গড়ায়। কিন্তু করোনা রোগীদের নিখরচায় পরিষেবা দিতে গিয়ে সেই আয় কমেছে। টানাটানি পড়ছে সংসারে। তবু পরিষেবা থামেনি। সন্দেহভাজনদের করোনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হোক, বা গৃহবন্দি সংক্রমিতের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া, কিংবা গুরুতর করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছনো— পার্থর টোটো সদা প্রস্তুত। বাবার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছে সৌম্যদীপও ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের কলা বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সে।
পার্থ নিজে বেশিদূর পড়ার সুযোগ পাননি। বাবা ছিলেন প্রাক্তন সেনাকর্মী। বাবার মৃত্যুর পরে বছর পাঁচেক মহারাষ্ট্রের থানের এক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেছেন। পরে ঝাড়গ্রামে ফিরে কাঠের আসবাব তৈরির ব্যবসা করেছেন কয়েক বছর। বছর চারেক টোটো চালাচ্ছেন। ছোটবেলা থেকেই সাপ ধরার নেশা পার্থর। লোকালয়ে সাপ বেরোলেই ডাক পড়ে তাঁর। সাপ ধরে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসেন।
সেই পার্থ এখন করোনা রোগীদের সহায়। গত বছর করোনা-কালে ঝাড়গ্রাম শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালু হতে সেখানে যাতায়াত শুরু করেন। চলতি বছরে শ্রমজীবী ক্যান্টিনের সদস্যদের নিয়ে ‘রেড ভলান্টিয়ার টিম’ তৈরি হয়। সেই দলে ছোট ছেলেকে নিয়ে নেমে পড়েন পার্থ। অরণ্যশহরের এক করোনা আক্রান্তের মেয়ে বলছেন, ‘‘অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স
পাচ্ছিলাম না। খবর পেয়েই ছেলেকে নিয়ে পার্থবাবু হাজির হন। বাবাকে কোলে করে টোটোয় বসিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন।’’ কয়েকদিন আগে শহরের বাছুরডোবায় করোনা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এক বৃদ্ধা। পার্থ ও সৌম্যদীপ ওই বৃদ্ধাকে তড়িঘড়ি টোটোয় করোনা হাসপাতাল নিয়ে যান। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
পার্থ বলছেন, ‘‘অতিমারির কাছে জীবন, অর্থ, অহঙ্কার সব তুচ্ছ। টোটোয় সাধারণ যাত্রী পরিবহণ বন্ধ করে দিয়েছি। সংসারে সাময়িক টানাটানি হচ্ছে ঠিকই। তবে নিজে এখনও সুস্থ থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি এটাই পরম প্রাপ্তি।’’ ঝাড়গ্রাম রেড ভলান্টিয়ারদের টিম লিডার প্রতীক মৈত্রের কথায়, ‘‘পার্থদার মতো মানুষদের জন্যই পৃথিবীটা এখনও সুন্দর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy