প্রতীকী ছবি।
সংক্রমিত হলে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা কি সম্ভব? এ নিয়ে সরকারি নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর থেকে সংশয় ছিলই। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকেই বাস্তবে সফল করে করোনা-যুদ্ধে জয়ী হয়ে দেখাল হাওড়ার একটি পরিবার। তবে এই যুদ্ধে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন প্রতিবেশীরাও।
হাওড়ার বাসিন্দা, ওই পরিবারের ৮২ বছরের এক বৃদ্ধ প্রথম সংক্রমিত হন। গত মাসে জ্বরের পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। গত ১০ মে সেই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এর পরে তাঁকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করান তাঁর নাতনি। রসায়নে স্নাতক, ২৭ বছরের ওই তরুণীর নিজেরও মৃদু হাঁপানি রয়েছে। তাই সংক্রমণের ভয়ে এর পরেই মাথা নেড়া করে ফেলেন তিনি। একই বাড়িতে থাকার কারণে ওই তরুণী, তাঁর বাবা-মা, দিদি-জামাইবাবু, দু’বছরের বোনপো এবং আক্রান্তের ৭৬ বছরের স্ত্রীর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। রিপোর্টে জানা যায়, তরুণী ও তাঁর মা এবং জামাইবাবু পজ়িটিভ। কিন্তু তাঁর দিদি এবং বছর চৌষট্টির বাবার রিপোর্ট ইনকনক্লুসিভ অর্থাৎ অসম্পূর্ণ।
একই সঙ্গে তিন জন আক্রান্ত এবং দু’জনের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ আসায় চিন্তায় পড়ে যান পরিবারের সকলে। আক্রান্ত বৃদ্ধের স্ত্রী, ৭৬ বছরের বৃদ্ধা অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত। তাই ওই তরুণীকে ছাড়া তিনি আর কাউকেই চিনতে পারেন না। বাড়িতে রয়েছে বছর দুয়েকের শিশুও। ফলে সংক্রমিতেরা হাসপাতালে ভর্তি হলে এদের দেখাশোনা কে করবে, সেটাই ভাবিয়ে তোলে তাঁদের।
আরও পড়ুন: পুলিশে করোনা-আক্রান্ত ধাক্কা দিচ্ছে দেড়শোর দরজায়
ওই তরুণী জানাচ্ছেন, সেই সময়ে তাঁদের তিন জনের (যাঁদের রিপোর্ট পজ়িটিভ) মধ্যেই করোনার কোনও উপসর্গ দেখা দেয়নি। তবে তত দিনে হোম কোয়রান্টিনে থেকেই চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। তাই পরিবারের সকলে মিলে গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
বাড়িতে ঘরের অভাব না-থাকলেও গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকা মোটেই সহজ ছিল না তাঁদের পক্ষে। তবে পাশে দাঁড়ান প্রতিবেশীরা। তরুণী জানান, এক প্রতিবেশী দু’বেলা খাবার দিতেন। বৃদ্ধা এবং আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় ওষুধ-ফলমূল পৌঁছে দিতেন আরও কয়েক জন প্রতিবেশী। সাহায্য করেন স্থানীয় কাউন্সিলরও।
আরও পড়ুন: পণ্যবাহী গাড়ি নিয়ে ফিরল নিষেধাজ্ঞা
বাড়িতে কী ভাবে থাকতেন তাঁরা? তরুণীর কথায়, ‘‘দিদি এবং বাবার রিপোর্ট পরে নেগেটিভ আসে। ওঁরাই আমাদের দেখাশোনা করতেন। যে যার ঘরে থাকতাম, সেখানেই জামাকাপড় মেলতাম। এক সঙ্গে এত জন আক্রান্ত হওয়ায় শারীরিক অবস্থা বুঝে বাড়ির কাজে সাহায্য করতাম। মাস্ক, গ্লাভস এবং বারবার হাত ধোয়ার পাশাপাশি যতটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতাম।’’ এ ছাড়া কার কী প্রয়োজন, তা জানতে বাড়ির সদস্যদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও তৈরি করেন তাঁরা।
ওই তরুণীর বাবার এক ছাত্র সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমেই বাইরের জগতের সঙ্গে ওই ক’টা দিন যোগাযোগ রেখেছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার সুদীপ্ত বলেন, ‘‘ওই পরিবার যে ভাবে লড়াই করে সুস্থ হয়ে উঠেছে, তা প্রশংসনীয়।’’
হাওড়া পুরসভার করোনা সংক্রান্ত নোডাল অফিসার, চিকিৎসক রমা ভুঁইয়া বলেন, ‘‘উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যাই বেশি। বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে নিয়ম মেনে ঘরে আলাদা থেকেই যে সুস্থ হওয়া যায়, তা এই পরিবারটি করে দেখিয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটা ওঁদের দলগত সাফল্য। ওঁদের মতো পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরাও করোনার সঙ্গে মোকবিলার জন্য প্রস্তুত।’’ আর ওই তরুণী বলছেন, ‘‘শুরুতে ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন বলছি, আতঙ্কের কিছু নেই। তবে সুরক্ষা-বিধি কঠোর ভাবে মানতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy