Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

সংসার চালাতে আন্দামান পাড়ি লন্ড্রি ব্যবসায়ীর

যে যুবক এত দিন ধরে কলকাতা শহরে বসে লন্ড্রির ব্যবসা করেছেন, তিনি স্রেফ সংসার চালানোর তাগিদে পাড়ি দিচ্ছেন আন্দামানে।

বিমানবন্দরে বাপি বিশ্বাস।

বিমানবন্দরে বাপি বিশ্বাস।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ০০:৩১
Share: Save:

পেটের দায় বোধহয় একেই বলে!

যে যুবক এত দিন ধরে কলকাতা শহরে বসে লন্ড্রির ব্যবসা করেছেন, তিনি স্রেফ সংসার চালানোর তাগিদে পাড়ি দিচ্ছেন আন্দামানে।

কী করবেন সেখানে গিয়ে?

এর উত্তরে বুধবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দরের টার্মিনালের বাইরে বসে উত্তর ২৪ পরগনার পলতার বাসিন্দা বাপি বিশ্বাস যা বললেন, তাতে যে কারও চোখ কপালে উঠতে পারে।

বাপির কথায়, ‘‘সমুদ্রে মাছ ধরার কাজ করতে যাচ্ছি।’’ এর আগে কখনও এই কাজ করেছেন কি না জিজ্ঞাসা করায় ওই যুবক জানালেন, করেননি। সমুদ্র দেখেছেন কি না, প্রশ্নের উত্তরে হেসে বললেন, ‘‘ওই দিঘা গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি।’’

দিঘায় গিয়ে সমুদ্র দেখা আর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরা— দুইয়ের মধ্যে যে আকাশপাতাল ফারাক, তাকে কী ভাবে মেলানো সম্ভব?

ওই যুবক বলে চলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে লন্ড্রির ব্যবসা শুরু করেছিলাম। অন্যদের দিয়ে কাপড় পালিশ করাতাম। নিজে ইস্ত্রি করতাম। মাস গেলে ঘরে আসত প্রায় ১২ হাজার টাকা। স্ত্রী, এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসারটা চলে যাচ্ছিল। ছেলে পড়ে ক্লাস এইটে। মেয়ে ফাইভে।’’

কিন্তু একে করোনার ধাক্কা, তার উপরে গত পাঁচ মাসের লকডাউন— সব হিসেব ওলটপালট করে দেয়। কিছু টাকা যদি আসে, সেই আশায় মাঝেমধ্যে দোকান খুলে বসেছেন বাপি। কিন্তু লাভ হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বাস করবেন? গত পাঁচ মাসে সব মিলিয়ে পাঁচশো টাকাও রোজগার করতে পারিনি। খাব কী? ছেলেমেয়ে আছে, স্ত্রী আছে। সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে।’’

তা বলে সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরা? বাপি জানান, তাঁর ভায়রা আন্দামানে বহু দিন ধরে ওই ব্যবসা করছেন। সম্প্রতি তিনি ট্রলার কিনেছেন। বাপিকে বলেছেন চলে আসতে। বাপি এ বার ট্রলারে করে সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরা শিখবেন।

বুধবার সকালের উড়ানেই যাওয়ার কথা ছিল আন্দামান। ভোর চারটের সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে বাপি দেখেন, সব শুনশান। বন্ধ উড়ানও। টিকিট বদলে আজ, বৃহস্পতিবার সকালের উড়ানে যাবেন তিনি। উড়ান বাতিলের বার্তা পাননি? বাপি জানান, এজেন্টকে দিয়ে টিকিট কেটেছিলেন। এজেন্ট জানিয়েছিলেন, উড়ান বাতিলের বার্তা এলে জানাবেন। মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত সেই খবর আসেনি। এ দিন ভোরে বিমানবন্দরে পৌঁছে বাপি জানতে পারেন, মঙ্গলবার রাত ১২টা নাগাদ এজেন্টের মোবাইলে উড়ান বাতিলের বার্তা আসে।

এ বার? ওই যুবকের কথায়, ‘‘বুধবার সারা দিন বিমানবন্দরের বাইরে বসেই কাটিয়ে দেব। সারা রাতও। বৃহস্পতিবার ভোরেই তো যাওয়া।’’

খাওয়াদাওয়ার কী হবে?

বাপি হেসে বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে বাকি সময়টা উপোস করেই কাটাতে হবে। ৯০০ টাকা ট্যাক্সি ভাড়া দিয়ে বাড়ি থেকে বিমানবন্দরে এসেছি। বন্ধুদের কাছে ধার-দেনা করে বাড়িতে ছ’মাসের রেশন মজুত করে এসেছি। যাতে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের খাবারের অসুবিধা না-হয়। এখন বাড়ি ফিরে আবার বৃহস্পতিবার আসতে গেলে ১৮০০ টাকার ধাক্কা। পকেটে শ’চারেক টাকা পড়ে আছে। পোর্ট ব্লেয়ারে নেমে ওই টাকা দিয়ে ভায়রার কাছে পৌঁছতে হবে। এই তো বৃহস্পতিবার ভোরে যাওয়া। ততক্ষণ না-হয় খালি পেটেই বসে কাটাই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE