মহম্মদ জিলালকে তাঁর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন হ্যাম রেডিয়োর সদস্য—নিজস্ব চিত্র।
বছরখানেক ধরে ভাইয়ের কোনও খোঁজ পাচ্ছিলেন না। কিন্তু যখন পেলেন, তখন তিনি ভাইকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অপারগ। বাধা, করোনাভাইরাস!
কেরলের কোল্লাম জেলার পুথেনপুরাক্কাল গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সুক্কুর। তাঁর ভাইয়ের নাম মহম্মদ জিলাল। প্রায় এক বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। এত দিন ধরে কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁর। কিন্তু, সম্প্রতি জিলালের খোঁজ পেয়েছেন সুক্কুর। জানা গিয়েছে ভাই জিলালকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে সুদূর পশ্চিমবঙ্গের হিঙ্গলগঞ্জে। কিন্তু সুক্কুরের গোটা পরিবার এই মুহূর্তে গ্রামে ‘বন্দি’ হয়ে রয়েছেন। করোনা-আতঙ্কের জেরে সরকারি নির্দেশে তাঁদের গ্রাম থেকে বেরনো নিষেধ। কারণ, ওই গ্রামের পুরুষদের বেশির ভাগই কাজ করেন পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। সেই সূত্রেই সুক্কুরদের গ্রামে চলে এসেছে করোনাভাইরাস। সংক্রমণ রুখতে সরকার কেরলের যে চারটি জেলায় ‘হেল্থ এমারজেন্সি’ জারি করেছে, কোল্লামও রয়েছে তার মধ্যে। সরকারি নির্দেশে জেলার বেশ কিছু গ্রাম থেকে মানুষের বাইরে বেরনো নিষেধ। বাইরের লোকের গ্রামে ঢোকাও বারণ। ফলে, জিলালকে খুঁজে পাওয়া গেলেও সুক্কুররা তাঁকে বাড়ি ফেরাতে পারছেন না।
এ রাজ্যে জিলালের খোঁজ কী ভাবে পাওয়া গেল?
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের কেওড়াখালির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে কয়েক দিন ধরেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন এক ভবঘুরে। বড় চুল, মুখে দাড়ি। পরনের পোশাকও বেশ মলিন। সব চেয়ে বড় কথা ভবঘুরের ভাষা দুর্বোধ্য। এলাকার অনেকেই চেষ্টা করেছিলেন সে ভাষা বোঝার। কিন্তু, সকলেই ব্যর্থ হন। তাঁদের মাধ্যমেই খবর পান হিঙ্গলগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী সুশান্ত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ওই লোকটির কথা শুনে মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ ভারতীয় কোনও ভাষা। ঠিক কী ভাষা বুঝতে না পেরে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সভাপতি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসকে ওঁর কথা মোবাইলে রেকর্ড করে পাঠাই।”
এর পর সেই ‘রেকর্ড’ পাঠানো হয় হ্যাম রেডিয়োর সদস্যদের কাছে। কেরলের হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যেরা এ র পর ভাষাটিকে চিনতে পারেন, ওটা মালয়ালম। সুশান্ত বলেন, ‘‘ভাষাটা মালয়ালম জানার পরেই আমরা এখানকার বিএসএফ ক্যাম্পে খোঁজ করার চেষ্টা করি, মালয়ালি কেউ আছেন কি না! কেরলের এক বাসিন্দার হদিশ পাওয়া যায় ক্যাম্পে। তিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে বেশ খানিক ক্ষণ কথা বলে ধীরে ধীরে লোকটির নাম জানতে পারেন, মহম্মদ জিলাল। ঠিকানাও জানা যায়। কাকতালীয় ভাবে, একই গ্রামে বাড়ি ওই বিএসএফ জওয়ানের এক আত্মীয়ের।’’
আরও পড়ুন: মায়ের প্রসাদে করোনা হবে না, দাবি দিলীপের
এর পরেই তড়িঘড়ি করে সুশান্তরা কেরলের গ্রামে ওই বিএসএফ জওয়ানের আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পাঠান জিলালের ভাই সুক্করকে। তিনি ছবি দেখেই ভাইকে চিনতে পারেন। তত ক্ষণে হ্যাম রেডিয়োর তরফে যোগাযোগ করা হয় কোল্লাম জেলা পুলিশের সঙ্গে। ওখানকার প্রশাসন করোনাভাইরাসের ভয়ে হ্যামের সদস্যদের গ্রামে যেতে দেয়নি। পুলিশ খবর দেয় শুক্করকে। জানা গিয়েছে, জিলালের স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েও রয়েছেন বাড়িতে। আগে জিলালও দেশের বাইরে চাকরি করতেন। কয়েক বছর ধরে তাঁর মানসিক অস্থিরতা শুরু হয়। তার পর থেকে বাড়িতেই থাকতেন। বছরখানেক আগে এক দিন আচমকা বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান ৫৪ বছরের জিলাল।
আরও পড়ুন: করোনা নয়, ধরা পড়ল সোয়াইন ফ্লু
খুব অল্প সময়ের মধ্যে জিলালের বাড়ির হদিশ মিললেও, এ বার বাদ সাধে করোনা। সেখানকার পুলিশ পরিষ্কার জিলালের পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছে যে, গ্রাম থেকে কাউকে বাইরে যেতে দেওয়া হবে না। ফলে সুক্কুররা আসতে পারবেন না জিলালকে নিতে। তেমনই এখান থেকে কাউকে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা করোনাভাইরাস। ইতিমধ্যেই কেরলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৮। ফলে কোল্লাম-সহ আরও তিন জেলায় রাজ্য প্রশাসন স্কুল, সিনেমাহল এবং যে কোনও ধরনের জমায়েত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জিলালকে রাখতে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন অম্বরীশবাবু। তবে সমস্যা একটাই। অম্বরীশবাবু বলেন, ‘‘এ ধরনের অস্থিরমতির মানুষেরা আবার যে কোনও সময়ে পালিয়ে যেতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy