পুরভোট পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে একমত সব দলই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আইপিএল, আই লিগ বা স্কুল-কলেজ অচল হয়েছে আগেই। করোনার ছায়ায় এ বার নির্বাচনও থমকে যাওয়ার পথে। হারের ভয়ে বিভিন্ন পুরসভায় দীর্ঘ দিন ধরে ভোট আটকে রেখেছে তৃণমূলের সরকার— অভিযোগ ছিল বিজেপি-সহ অন্য বিরোধী দলগুলোর। কিন্তু করোনা সংক্রমণ যে ভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে এই মুহূর্তে পুরভোট ঘোষণা করা উচিত কি না, সে বিষয়ে ধন্দে বিরোধীরাও। সরকার ভোট পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে বলে খবর নবান্ন সূত্রে। বিজেপি নেতারাও আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, ভোট পিছিয়ে গেলে আপত্তি নেই। তবে আগামী কাল রাজ্য নির্বাচন কমিশনে যে সর্বদল বৈঠক হবে, সেখানে আগ বাড়িয়ে ভোট পিছনোর দাবি বিজেপি পেশ করতে চাইছে না। শাসক দল কী বলে, সে দিকেই নজর রাখতে চাইছে অন্য বিরোধী দলগুলোও।
বিজেপি কিন্তু এ দিন সকালেও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, করোনার কথা মাথায় রেখে ভোট পিছিয়ে গেলে তাদের খুব একটা আপত্তি নেই। তবে পুরভোট পিছিয়ে দিতেই হবে, এই রকম কোনও কথা আগ বাড়িয়ে বিজেপি নেতৃতের একাংশ বলতে চাইছেন না। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের কথায়,‘‘নির্বাচন নির্বিঘ্নে করানোর দায়িত্ব রাজ্য সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের। নির্বিঘ্নে নির্বাচন করাতে হলে যেমন গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা মাথায় রাখতে হবে, তেমনই করোনার কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। সুতরাং অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা করেই সরকার এবং কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, তাতে সুবিধা বা অসুবিধা যা-ই হোক, সেটা সব দলের জন্যই একই রকম হবে আশা করি। সেটা মেনে নিতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই’’।
করোনা সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্র যে রকম চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বনের নীতি নিয়েছে, বিজেপি চায় এ রাজ্যেও সেই নীতিই অনুসৃত হোক। কিন্তু তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারও যে আপাতত পুরভোট পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেই ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে, তা-ও বিজেপির অজানা নয়। তাই বিজেপি নেতৃত্ব চাইছেন, ভোট পিছিয়ে যাক, কিন্তু তার প্রস্তাবটা আগে তৃণমূল বা রাজ্য সরকারের তরফ থেকেই জমা পড়ুক। তাই সাংসদ তথা চিকিৎসক সুভাষ সরকারকে দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করিয়ে বিজেপি উদ্বেগ প্রকাশ করছে করোনা পরিস্থিতির মাঝে নির্বাচন নিয়ে। আবার জয়প্রকাশ মজুমদার বা শিশির বাজোরিয়ার মতো নেতারা সংবাদমাধ্যমকে বলছেন যে, ভোট কবে হবে সে বিষয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের উপরেই বিজেপি নজর রাখছে।
আরও পড়ুন: রিপোর্ট নেগেটিভ, করোনা থেকে রক্ষা পেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
তৃণমূল না বিজেপি, এই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে চোখের পলক কে আগে ফেলবে? নির্বাচন কমিশনের কাছে কি তৃণমূল ভোট পিছনোর দাবি জানাবে? তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের শাসক দলের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছেন। তাঁর মত, ‘‘ভোট কবে হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। তবে এখন বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের সুযোগ আছে। তাই সংক্রমণের আশঙ্কা বাঁচিয়েও প্রচার করা সম্ভব।’’
তৃণমূল ও বিজেপির অবস্থান থেকে স্বাভাবিক ভাবেই দূরত্ব বজায় রেখেছে রাজ্যের অন্য দুই শক্তি বাম ও কংগ্রে্স। কিছুটা শ্যামও রাখি-কুলও রাখি ভঙ্গিমায় বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘পুরভোট যখনই হোক, সব দলই যাতে প্রচারের সুযোগ পায়, তা কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। আর অনেক পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই পুরভোট অনির্দিষ্ট কাল ফেলে রাখাও ঠিক হবে না।’’
আরও পড়ুন: একুশ শতক! গো-বিশ্বাসে চুমুক মূত্রে, বিজ্ঞান বহু দূর
কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকারের মতে, ‘‘করোনা-পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র রাজ্য বা কেন্দ্র কেউই জানাচ্ছে না। রাজ্য সরকার আগে সব দলের সঙ্গে করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করুক। তার পরে কমিশনের ভোটের দিন নিয়ে চর্চা করুক।’’
করোনাকে ইতিমধ্যেই অতিমারী বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু। ওই রোগে গোটা পৃথিবী জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় দেড় লক্ষ। মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। ভারতে করোনায় আক্রান্ত শতাধিক। মৃত্যুও হয়েছে দু’জনের। যদিও এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে করোনার ছবিটা পুরোপুরি উল্টো। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে কোনও করোনা সংক্রমণের খবর নেই। তবুও করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক দলগুলি। উদ্বেগ আর আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। এই পরিস্থিতিতেই আগামী কাল তথা সোমবার কমিশনের সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক। সেখানে আলোচনার বিষয়বস্তু হিসাবে করোনা অনেকটা জায়গা করে নেবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy