—ফাইল চিত্র।
এনআরএস হাসপাতালের পুনরাবৃত্তি এ বার মেডিক্যাল কলেজে। করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর জেরে সংক্রমণের ভয়ে বন্ধ করা হচ্ছে ওই হাসপাতালের পুরুষ এবং মহিলাদের মেডিসিন ওয়ার্ড। ইতিমধ্যেই তিন জন স্নাতকোত্তর ট্রেনি চিকিৎসককে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। আরও চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত। গোটা ঘটনায় জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের বেপরোয়া আচরণের জন্যই এই অবস্থা।
সোমবার রাতে মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি বিল্ডিংয়ের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মৃত্যু হয় ৬২ বছরের এক বৃদ্ধার। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাহনগর এলাকার বাসিন্দা, ওই মহিলা কিডনির সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন চিনার পার্কের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে তাঁর ডায়ালিসিসও করা হয়। ওই ডায়ালিসিস কেন্দ্রেই ছিলেন অন্য এক রোগী যিনি পরে করোনায় আক্রান্ত হন এবং মারা যান। তার পরেই সংক্রমণের আশঙ্কায় রবিবার বিকেল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় চিনার পার্কের ওই বেসরকারি হাসপাতাল।
ওই বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় বরাহনগরের বাসিন্দা ওই মহিলাকে। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ওই মহিলাকে নিয়ে আসা হয় মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে। সেই সময় রোগীর শরীরে কোভিড-১৯-এর বিভিন্ন উপসর্গ প্রকট ছিল। তাই জুনিয়র চিকিৎসকরা ঝুঁকি না নিয়ে পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট) পরেই ওই বৃদ্ধার শারীরিক পরীক্ষা করেন। তাঁরা বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা দেখে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করার সুপারিশ করেন। অভিযোগ, চিকিৎসকদের সুপারিশ সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই বৃদ্ধাকে মহিলাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করতে নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের অভিনেত্রী-সাংসদের বাবার করোনা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঠানো হল দ্বিতীয় নমুনা
গোটা রবিবার তিনি মেডিসিন ওয়ার্ডেই কাটান। সূত্রের খবর, সোমবার সিনিয়র চিকিৎসকরা ওই বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা দেখে অবিলম্বে আইসোলেশনে স্থানান্তরিত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলেন। তার পর সোমবার সকালে তাঁকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় সোমবার রাতে।
বৃদ্ধার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার দেহ নিতে অস্বীকার করে। পরিবার দাবি করে যে, ওই বৃদ্ধা করোনা আক্রান্ত। তাঁর দেহ সরকার দাহ করুক। অন্য দিকে, মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, মহিলার করোনা পরীক্ষাই করা হয়নি। পরিবারের তরফে জানানো হয়, চিনার পার্কের বেসরকারি হাসপাতালের তরফে ওই বৃদ্ধার লালারসের পরীক্ষা করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, পরিবার দেহ নিতে অস্বীকার করায়, মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকে ওই বেসরকারি হাসপাতাল এবং পরীক্ষাকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার পর মঙ্গলবার দুপুরে জানা যায়, ওই বৃদ্ধার রিপোর্টে পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। তার পরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা মেডিক্যাল কলেজ জুড়ে।
আরও পড়ুন: করোনা উপসর্গ থাকা রোগীর মৃত্যু, দেহ নিতে অস্বীকার পরিবারের, আতঙ্ক মেডিক্যালে
সূত্রের খবর, ওই বৃদ্ধাকে যখন মহিলাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়, তখন সেখানে ১২-১৩ জন রোগী ছিলেন। পুরুষদের মেডিসিন ওয়ার্ড পাশেই। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা পুরুষদের ওয়ার্ডেও রয়েছে। তাই দু’টি ওয়ার্ডেই রোগী ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন রোগীদের সবার লালরসের নমুনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে। সেই সঙ্গে কোন কোন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী ওই রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে। সূত্রের খবর, তিন জন চিকিৎসককে ইতিমধ্যেই কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসাধীন রোগীদের মেডিক্যাল কলেজের গ্রিন বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। এর পর গোটা মেডিসিন ওয়ার্ড জীবাণুমুক্তকরণ করা হবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy