মাস্ক পরে নিজেদের দফতরে মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
তাঁদের প্রচারে হামেশাই দেখা যায়, ‘কাজের মানুষ, কাছের মানুষ’ কথাটি। কিন্তু করোনা আতঙ্কে যেন তাঁদেরও আর কাছের মানুষ হয়ে থাকার উপায় নেই। শাসক দলের প্রবীণ নেতা-মন্ত্রীরা তাই মানুষের জন্য কাজ করছেন দূরত্ব এবং অন্য সাবধানতা বজায় রেখেই। তাঁরা জানাচ্ছেন, রোজনামচাই বদলে গিয়েছে তাঁদের।
বছরের অন্য দিনের সঙ্গে এই কয়েকটা দিনের কোনও মিলই পাচ্ছেন না সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাধন পাণ্ডে, সৌমেন মহাপাত্র, উজ্জল বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, অরূপ রায় কিংবা সাংসদ সৌগত রায়েরা।
দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা বরিষ্ঠ রাজনীতিবিদ তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় মাস কয়েক আগে ফুসফুসেরই সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। করোনা মোকাবিলায় তাই সুব্রতবাবু অত্যন্ত সতর্ক। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে আমার বালিগঞ্জের বাড়িতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করছি না। এক জনের বেশি কাউকে ঘরে ঢুকতে দিচ্ছি না। বিশেষ দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলছি। কথা বলার সময় মাস্ক পরছি। যিনি আসছেন তাঁকেও স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক দেওয়া হচ্ছে, নিজেও ঘন ঘন স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করছি।’’ সল্টলেকে পঞ্চায়েত দফতরে বিকেলে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য গিয়ে বাছাই করা কয়েক জন অফিসারের সঙ্গে কথা বলা এবং প্রয়োজনীয় কয়েকটি ফাইলে শুধু তিনি সই করছেন বলে জানান সুব্রতবাবু।
রাজ্য মন্ত্রিসভার বর্ষীয়ান মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের মানিকতলার বাড়িতেও সারা বছর সকালে লোকজনের ভিড় হয়। শনিবার সকালে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, অন্য দিনের তুলনায় ভিড় পাতলা। যাঁরা এসেছেন তাঁদের সঙ্গে মন্ত্রীর ঘনিষ্ট লোকজনই কথা বলে নিচ্ছেন। সাক্ষাৎপ্রার্থীদের ফোন নম্বরও লিখে রাখা হচ্ছে। দর্শনার্থীকে মন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে হলে হাতে স্যানিটাইজ়ার লাগাতে হচ্ছে এবং মাস্ক পরতে হচ্ছে।
সত্তোরোর্ধ্ব সাধনবাবুর এক সময় ডায়ালিসিস চলত। তবে এখন তিনি সুস্থ। তবে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। সাধনবাবু বলেন, ‘‘আগে একসঙ্গে ছ’- সাত জনকে ঘরে ঢুকতে দিতাম। পরিস্থিতির চাপে এখন বাধ্য হচ্ছি ঘরে একই সময়ে এক জনের সঙ্গে কথা বলতে। ঘরে স্যানিটাইজ়ার রাখা আছে। যাঁরা আসছেন তাঁদের সেটি ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে।’’ ক্রেতাসুরক্ষা এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী সাধনবাবু গত সপ্তাহে মাত্র এক দিনই অফিসে হাজির ছিলেন।
রাজ্যের স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘জনপ্রতিনিধি হিসাবে একেবারে ঘরে বসে থাকা যায় না। বাড়িতে যাঁরা দেখা করতে আসছেন তাঁদের হাতে হাতে স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছে। তবে কথা বলার সময়ে দূরত্ব বজায় রাখছি। রবিবারেও তৃণমূল ভবনে ঘণ্টা তিনেক ছিলাম। সব সময়ে ব্যাগে স্যানিটাইজ়ার রাখছি। আমার গাড়ির চালক, নিরাপত্তারক্ষী সবার কাছে স্যানিটাইজ়ার রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যে কায়দায় কাপড়ের রুমাল জড়িয়ে মাস্ক পরছেন সেটাই অনুসরণ করব।’’
নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজার কথায়, ‘‘বাড়িতে সাক্ষাতের সময়সূচি একেবারে কাটছাঁট করে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ বেশি করে ব্যবহার করছি। বছরভর ঠাসা কর্মসূচির জন্য বাড়িতে সময় দেওয়া হয় না। এখন পরিবারের সঙ্গেও একটু সময় কাটছে।’’
জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পরিবেশ দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বা সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়েরা জানান, তাঁরা সবাই মুখে মাস্ক পরে ও হাতে স্যানিটাইজ়ার মেখেই লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। সাংসদ সৌগত রায় শনিবার রাতেই কলকাতায় ফিরেছেন। রবিবার সব সভা বাতিল করেছেন তিনি। করোনার সতর্কতায় তিনিও সচেতন হয়েই সাধারণের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন বলে সৌগতবাবু জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy