স্থানান্তর: মেডিক্যাল কলেজ থেকে এ ভাবেই অন্যত্র সরানো হচ্ছে অন্য রোগীদের। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংকে করোনা ব্লকে পরিণত করার কাজ শুরু করে দিল রাজ্য। করোনা সন্দেহভাজনদের সোমবার থেকে সেখানে ভর্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
নিউরো সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, নিউরো ও পেডিয়াট্রিক সার্জারির মতো বিভাগ ছিল সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংয়ে। সেই সব বিভাগের রোগীদের মধ্যে যাঁদের অসুস্থতা গুরুতর নয়, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গুরুতর অসুস্থদের স্থানান্তরিত করা হচ্ছে অন্য হাসপাতালে। উপাধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস মঙ্গলবার জানান, করোনা ব্লকে ৪৮টি সিসিইউ-সহ ২৩৭ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি হচ্ছে। যে-সব চিকিৎসক-নার্স সেখানে সাত দিন কাজ করবেন, পরে তাঁদের ১৪ দিন আইসোলেশনে রাখা হবে। করোনার কোনও উপসর্গ দেখা না দিলে ১৪ দিন পরে বাড়ি যেতে পারবেন।
হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, মেডিক্যালে রোগী ভর্তি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জরুরি বিভাগে গুরুতর অসুস্থ ছাড়া রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। ‘গ্রিন বিল্ডিংকেও’ করোনা ব্লকে পরিণত করা হতে পারে। ছুটি দেওয়ার পরে রোগীদের চূড়ান্ত ভোগান্তি হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ মেডিক্যালের সামনে কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাতে বসে ছিলেন সুমনা আদক নামে এক মাঝবয়সি মহিলা। বুকে জল জমে যাওয়ায় গত শনিবার ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার তাঁকে অন্য হাসপাতালে চলে যেতে বলা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের বাসিন্দা সুমনাদেবী এবং তাঁর মেয়ে ঝুলন বুঝতেই পারছেন না, লকডাউনে বাড়ি ফিরবেন কী করে। পূর্ব মেদিনীপুর তো দূরের কথা, সিঁথিতে আত্মীয়ের বাড়িতেই বা কী করে পৌঁছবেন, তা-ও জানা নেই মা-মেয়ের। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ বাড়ি ফিরতে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করেননি বলে অভিযোগ।
একই অবস্থা হাওড়ার ইছাপুরের বাসিন্দা মায়া রায়ের। তাঁর বিবাহিতা মেয়ে মিঠু পোয়ালি কিডনির অসুখে ভুগছেন। শুক্রবার ভর্তি হয়েছিলেন। এ দিন বেলা ১টা নাগাদ মিঠুকে এসএসকেএম হাসপাতালে ‘রেফার’ করেছেন মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা। বহু কষ্টে দু’ঘণ্টা পরে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে পেরেছেন মায়া।
অসুবিধায় পড়েছেন মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বাসিন্দা বাদল মণ্ডলও। স্ত্রী বৈশাখীর গলায় টিউমার অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকেরা এ দিন হঠাৎই বৈশাখীদেবীকে ‘ছুটি’ দিয়ে দেওয়ায় আতান্তরে পড়েছেন বাদলবাবু। হাওড়ার মুনশিরহাটের ঘোড়াদহের বাসিন্দা গুলজার মল্লিক ভাঙা পা নিয়ে দেড় মাস ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ দিন বেলা ১টা নাগাদ চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান, ‘বেড’ ছেড়ে দিতে হবে। পরিজনেরা বুঝতে পারছেন না, বাড়ি ফিরবেন
কী করে।
হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, করোনা সংক্রমণ এড়াতে রোগীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া বা অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সব রোগীকে নয়, যাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বা যাঁদের ছুটি দিয়ে দিলে অসুবিধা হবে না, এমন রোগীদের ছাড়া হচ্ছে।
কিন্তু রোগী এবং তাঁদের স্বজনদের প্রশ্ন, লকডাউনের আগে তাঁদের ছাড়া হল না কেন? আর ছেড়েই যদি দেওয়া হল, তা হলে গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন না কেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy