ছবি এএফপি।
এত দিন পাচার রুখতে সতর্ক থাকত বিএসএফ, তক্কে তক্কে থাকত পাচারকারীরা! এখন করোনা-আতঙ্কে সীমান্তের সেই চেনা ছবি যেন উল্টে গিয়েছে। পাচারকারীরাও এখন সতর্ক, কোনও ভাবেই যেন করোনা-ছোঁয়া না লাগে। তাই তারা মুখ ঢেকেছে মাস্কে। আর তক্কে তক্কে আছে বিএসএফও। এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘মাস্কই পরুক আর হনুমান টুপি, এদিক ওদিক দেখলেই ধরব।’’
কোচবিহারের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বার্ড ফ্লু, নোট বাতিল, ইনসাস, অত্যাধুনিক নাইটভিশন ক্যামেরা— কোনও কিছুই সে ভাবে কাবু করতে পারেনি পাচারকারীদের। কিন্তু এ বারে করোনা তাদের বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছে। কথাটা কবুল করছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাচারকারীও। তার কথায়, ‘‘বিএসএফ-টিএসএফ নিয়ে তেমন ভাবি না। কিন্তু এ তো ভাইরাস! তাই ঝুঁকি নিচ্ছি না। মাস্ক পরছি, পকেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারও রাখছি। দলের ছেলেপুলেদেরও বলেছি, এই সময় কোনও ঝুঁকি না নিতে। জান থাকলে কাজ পরেও হবে।’’
সীমান্ত এলাকা নিয়ে বিএসএফ ও প্রশাসন ইতিমধ্যেই কড়া পদক্ষেপ করেছে। সেই ছায়া পড়েছে নাজিরহাট-গীতালদহ সীমান্তেও। বিএসএফের তরফে জওয়ানদের মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হয়েছে। নতুন করে কেউ কাজে যোগ দিলে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে। বিএসএফের কোচবিহার রেঞ্জের ডিআইজি বীরেশ কুমার সিংহ বলেন, “করোনা নিয়ে জওয়ানদের সতর্ক করা হয়েছে। চোরা কারবার এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএফের এক আধিকারিক বলছেন, “করোনা নিয়ে আসলে ওরা ভয় পেয়েছে! এ তারই প্রভাব।”
সীমানায় সতর্কতা
• থাকবে বুথ। মাইকে করোনা-সচেতনতার বার্তা। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট হলে পরীক্ষার ব্যবস্থা
• সব গাড়িতে কড়া নজরদারি
• আগতদের চার ভাগে ভাগ করে পরীক্ষা
• উপসর্গের পাশাপাশি বিদেশ যাত্রায় ‘গ্রেড এ’।
(পাঠানো হবে জেলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে)
• উপসর্গ আছে, বিদেশ যোগ নেই— ‘গ্রেড বি’। (মেলামেশা, জমায়েতে এড়ানোর পরামর্শ। ফোনে খবর নেবেন আশা-এএনএম কর্মীরা)
• উপসর্গ নেই তবে দু’সপ্তাহের মধ্যে বিদেশ যাত্রার ইতিহাস বা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা— ‘গ্রেড সি’। (পরামর্শ ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’)
• যার কোনও কিছুই নেই— ‘গ্রেড ডি’। (নিয়মিত হাত ধোয়ার আর্জি)
সীমান্তের নাজিরহাট-গীতালদহ রুটে চোরাকারবারিদের দাপট দীর্ঘদিনের। নাজিরহাটের চার কিলোমিটারের বেশি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। গীতালদহে দু’কিলোমিটারেরও বেশি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে নদী। বন্যার সময়ে ওই এলাকার অনেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এমন অবস্থা রয়েছে তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জেও। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সুয্যি পাটে গেলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে পাচারকারীরা। গরু, তেল, নুন, চিনি যায় ওপারে। এপারে আসে পোশাক, সোনা। পাচারকারীদের ভয় ঠিক এখানেই। এক জনের কথায়, ‘‘করোনা তো আমাদের দেশে হয়নি। বিদেশ থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে। তাই বাংলাদেশ থেকে আসা জিনিসপত্রের সঙ্গেও যদি ভাইরাস মিশে থাকে? তাই কয়েকটা দিন আমরাও সাবধানে থাকছি। রা নিরুপায় হয়ে কাজে যাচ্ছে, তারাও মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার নিয়েই বেরোচ্ছে।’’ গীতালদহের বাসিন্দা মইনুল হক বলেন, “আমরাও ক’দিন থেকে রাতে চেনা আওয়াজ একটু কম পাচ্ছি।” নাজিরহাটের জয়নাল আবেদিন বলছেন, “এই প্রথম বার দেখলাম, ভাইরাসে ভয় পেয়েছে পাচারকারীরা।’’ গীতালদহের আর এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘শনিবার রাতে মাস্ক পরা এক জনকে দেখে ডাকাত ভেবে ভয় পেয়েছিলাম! পরে বুঝলাম, পাচারকারী। কী কাণ্ড, বলুন তো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy