নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
রোগমুক্ত হয়েছেন যাঁরা, তাঁরাই এ বার দেখভাল করার পাশাপাশি সহায়তা করবেন করোনা রোগীদের। ইতিমধ্যেই ১০ জন করে এমন স্বেচ্ছাসেবক কাজে যোগ দিয়েছেন মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। ৪০ জন কাজ করবেন কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে। তাঁদের থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে প্রতি দিন হিসাবে সাম্মানিকও দেবে রাজ্য সরকার। করোনা যুদ্ধে জয়ীদের দিয়ে এই পরিষেবার কথা সোমবার নবান্নে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে করোনা রোগীদের ধারে কাছে যেতে চান না কেউ। আর সেই কারণেই মেডিক্যাল কলেজ বা হাসপাতালগুলিতে অনেক সময়েই হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায়, তাঁদের খাবার পৌঁছনো থেকে অন্যান্য সহায়তা করার কেউ থাকছে না। কয়েক দিন আগেই অভিযোগ উঠেছিল, কলকাতা মেডিক্যালে কলেজে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের খাবার বা জল পৌঁছে দিতেও বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে দালালদের। অভিযোগ উঠেছিল কোভিড রোগীর দেহ ওয়ার্ডের মেঝেতে পড়ে ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্তে উঠে এসেছিল, স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশেরও কোভিড ভীতির জন্য এ রকম ঘটনা ঘটছে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘উদ্যোগী হয়েছিল বহরমপুর। তারাই প্রথম তৈরি করে করোনা ওয়ারিয়র্স ক্লাব। সেই ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে ৬০ জন প্রথম দফায় কাজ শুরু করছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, করোনা জয়ী ওই সমস্ত স্বেচ্ছাসেবকরা রোগীদের সহায়তা করবেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৪০০। রোগ মুক্ত হয়ে উঠেছেন প্রায় ১২ হাজার। ৬৫ শতাংশ রোগমুক্ত হচ্ছেন।” মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ওই রোগ মুক্ত মানুষদের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করার আবেদন জানান। তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যই প্রথম গোটা দেশের মধ্যে এ রকম কোনও উদ্যোগ নিল।’’
আরও পড়ুন: জরুরি পরিষেবায় যুক্তদের জন্য সীমিত পরিষেবা দিতে চায় মেট্রো
স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের দাবি, যিনি ইতিমধ্যে রোগমুক্ত হয়েছেন, তাঁর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাঁরা আক্রান্তের সংস্পর্শে এলেও সংক্রমণের ভয় থাকছে না। কারণ তাঁর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া নিজে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় রোগ সম্পর্কে ভীতিও থাকবে না তাঁদের। ফলে ওই স্বেচ্ছাসেবকরা রোগীদের অনেক সহায়তা করতে পারবেন।
তবে, কোভিড-১৯ ভাইরাসের চরিত্রের উপর গবেষণা করছেন এমন এক মাইক্রোবায়োলজিস্ট বলেন, ‘‘এটা এখনও প্রমাণিত নয় যে কেউ এক বার করোনা আক্রান্ত হলে ফের আর আক্রান্ত হবেন না।”
সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন, ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ-এর চিকিৎসক সুমন পোদ্দার। তিনি বলেন, “এ রাজ্যে কোভিড চিকিৎসায় প্রথম থেকে যাঁদের সব থেকে বেশি ভূমিকা, সেই চিকিৎসকরাই এ বিষয়ে উদ্যোগী হন। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, কোভিড নিয়ে মানুষের আতঙ্ক কতটা। আক্রান্ত হলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই রোগী আবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও কমে যায়। এই উদ্যোগের ফলে কোভিড জয়ীদের পাশে পেলে আক্রান্তদের মনবল অনেক বাড়বে। তাঁরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।” তিনি আরও বলেন, “একবার কোভিড থেকে মুক্ত পেলে আর কোভিড আক্রান্ত হবে না। চিনে সেই ঘটনা দেখা গিয়েছে। তবে সেই সম্ভাবনা খুবই কম।”
কলকাতার একটি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত অন্য এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এই নিয়ে গোটা বিশ্বে গবেষণা হচ্ছে। সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোভিডের অ্যান্টিবডি দুই-আড়াই মাসের বেশি থাকে না মানুষের শরীরে।” মূলত উপসর্গহীন রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ওই গবেষণায়। তবে সেই গবেষণায় এটাও বলা হয়েছে যে, অ্যান্টিবডির অস্তিত্ব নির্দিষ্ট সময়ের পর পাওয়া না-যাওয়া মানে তিনি ফের আক্রান্ত হতে পারেন— তেমনটাও নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। তবে স্বাস্থ্য কর্তাদের আশা, এই উদ্যোগে লাভবান হবেন কোভিড রোগীরা।
আরও পড়ুন: তিব্বত হতে রাজি নই! কেন্দ্রশাসিত হওয়ার ‘অপমান’ সয়েও বলছে লাদাখ
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন গোটা রাজ্যে টেলিমেডিসিন পরিষেবা চালুর কথাও ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘‘কোভিড যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আগামী ১ জুলাই বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম-মৃত্যু দিবসকে চিকিৎসক দিবস হিসাবে পালন করা হবে।” ওই দিন রাজ্য সরকারি অফিসে ছুটি ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘ওই দিন থেকেই গোটা রাজ্যে টেলিমেডিসিন পরিষেবা চালু করা হবে। প্রথমে ১২টি লাইন চালু হবে। পরে জেলাভিত্তিক টেলিফোন নম্বর চালু হবে। ওই নম্বরে ফোন করে কোভিড রোগীরা চিকিৎসকদের পরামর্শ পেতে পারেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy