এই গাড়িতে করেই রোগীর দেহ আনা হয় (বাঁ দিকে)। বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
বাসিন্দাদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়ে সৎকার না করেই কোভিড পজিটিভ রোগীর দেহ নিয়ে ফিরল পুলিশ। ঘটনার জেরে চিন্তায় জেলা প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাতে ব্যারাকপুর পুরসভা এলাকায়। কোভিড রোগীর দেহ সৎকার রুখতে পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো গণ্ডগোল হয় বাসিন্দাদের। অভিযোগ, ভাঙচুর হয়েছে পুলিশের একটি গাড়িও।
ব্যারাকপুর পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গঙ্গার ধারে রয়েছে রানি রাসমণি শ্মশানঘাট। ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কয়েক দিন ধরেই গভীর রাতে পুলিশ দেহ নিয়ে আসছে। সেই সময় শ্মশান ঘাটের আশপাশে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের সন্দেহ, কোভিড রোগীর দেহই সৎকার করা হচ্ছে। ওই এলাকার তৃণমূল নেতা অশ্বিনী শুক্লর দাবি, ‘‘পর পর কয়েক দিন গভীর রাতে পুলিশ দেহ নিয়ে আসায় বাসিন্দারা বুধবার অপেক্ষা করছিলেন কী হচ্ছে তা দেখার জন্য।”
ওই ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা পীযূষ মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘রাত দেড়টা নাগাদ বাইরের কোনও থানার পুলিশ একটি শববাহী গাড়ি এসকর্ট করে আনে। গাড়ি চালাচ্ছিলেন পিপিই পরা চালক। সঙ্গে সবাই পিপিই পরা। গাড়ি থেকে সাদা বডি ব্যাগে একটি দেহ নামানো হয়।” অশ্বিনী শুক্ল বলেন, ‘‘পিপিই পরা দেখেই এলাকার মানুষের সন্দেহ হয়, এটি কোভিড রোগীর দেহ। তাঁরা গাড়ির চালককে প্রশ্ন করলে তিনি অসংলগ্ন উত্তর দিতে থাকেন। চালক জানান, তিনি বারাসতের একটি হাসপাতাল থেকে দেহ নিয়ে এসেছেন। আবার গাড়ির গায়ে লেখা পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার একটি সংস্থার নাম। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর হাওড়ার। সব মিলিয়ে এলাকার মানুষ বাধা দেয়।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পর টিটাগড় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তাদের সঙ্গে বাসিন্দাদের বচসা বাধে। শেষমেশ বাসিন্দাদের বাধায় দেহ তুলে নিয়েই চলে যায় পুলিশ।
ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রমেশ সাউ ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘এলাকার কিছু মানুষ বাধা দেওয়ায় দেহ নিয়ে চলে যায় পুলিশ। বাসিন্দারা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুরও করে।” তিনি বলেন, ‘‘পুরপ্রধান তাঁকে জানিয়েছিলেন যে এক কোভিড রোগীর দেহ সৎকার করা হবে। পুলিশ নিয়ে যাবে। প্রশাসনের নির্দেশেই ওই শ্মশানে সৎকার করা হবে।” তবে তিনি স্বীকার করেন, এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। তাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।
আরও পড়ুন: পাওয়া গেল করোনার ওষুধ? মার্কিন বিজ্ঞানীর দাবিতে আশার আলো
একই কথা বলেন ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাসও। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসক এবং মহকুমাশাসক নির্দেশ দিয়েছিলেন, বারাসতের কদম্বগাছির একটি কোভিড হাসপাতাল থেকে আসা দেহটি রাসমণি ঘাটে সৎকার করা হবে। সেই অনুযায়ী পুরসভাকে জানানো হয়েছিল।” তবে উত্তমবাবু বলেন, ‘‘মহকুমাশাসক এবং জেলাশাসককে আমরা গোটা ঘটনা জানিয়েছি। জায়গাটি ঘনবসতিপূর্ণ। তাই এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে।”
আরও পড়ুন: গ্রিন জোনে সোমবার থেকে লকডাউন শিথিল, সিদ্ধান্ত নবান্নের
ঘটনা জেনেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপন সাহাও। তিনি বলেন, ‘‘সৎকারের বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখে।” কলকাতা পুলিশ এলাকায় কোভিড পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হলে ধর্মভেদে ধাপায় দেহ সৎকার করা হচ্ছে। নয়তো বাগমারির কবরস্থানে কবর দেওয়া হচ্ছে। তপনবাবুকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘জেলায় এ রকম নির্দিষ্ট কোভিড শ্মশান আছে কি না আমার জানা নেই।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কোভিড রোগীর দেহ সৎকার করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। কারণ, এই দেহ পোড়াতে প্রয়োজন ইলেকট্রিক চুল্লি। বিভিন্ন বসতি এলাকার শ্মশানে পোড়াতে গেলে বাসিন্দাদের বাধার মুখোমুখি হচ্ছে প্রশাসন।
এরই পাশাপাশি, টুইট করে গোটা ঘটনার সমালোচনা করেছে রাজ্য বিজেপি। গোটা ঘটনাকে অবিশ্বাস্য বলে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘লুকিয়ে করোনা রোগীর দেহ পোড়ানোর চেষ্টায় বাধা দিলেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দারা। কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন এ রকম লুকোচুরি করছে?” যদিও এর মধ্যে কোনও লুকোচুরি নেই বলেই দাবি পুরপ্রধান উত্তম দাসের। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, গোটা বিষয় নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy