ফাইল চিত্র।
করোনা রোগীকে স্থানান্তরে পাঠানোর প্রক্রিয়াকে ঘিরে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আচরণে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ হতবাক হয়ে গিয়েছেন। উপযুক্ত রক্ষাকবচ ছাড়াই রোগীকে পাঠানোয় সরকারি হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষীকে হোম কোয়রান্টিন বা গৃহ-নিভৃতবাসে পাঠাতে হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। করোনায় আক্রান্ত ওই চিকিৎসক-রোগীকে নিউ টাউনের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে আইডিতে পাঠানো হয়। আইডি সূত্রের খবর, করোনা রোগীকে স্থানান্তরে পাঠানোর সময় যে-হাসপাতাল থেকে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে রোগীকে পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্টস (পিপিই) বা বর্মবস্ত্র পরিয়ে পাঠানোর কথা। সেই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়, রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স যেন সরাসরি করোনা ওয়ার্ডে চলে যায়। জরুরি বিভাগে আসার দরকার নেই। রোগীকে নামানোর পরে অ্যাম্বুল্যান্স জীবাণুমুক্ত করে দেয় আইডি-ই। বৃহস্পতিবার কিন্তু নিউ টাউনের বেসরকারি হাসপাতালে এই নিয়মবিধির কিছুই মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
আইডির খবর, ওই দিন করোনা রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স করোনা ওয়ার্ডে যায়নি। আক্রান্ত ব্যক্তি অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে সটান জরুরি বিভাগে চলে যান। তাঁর সঙ্গে কেউই ছিলেন না। বর্মবস্ত্র হিসেবে তাঁর শরীরে অ্যাপ্রন, হাতে দস্তানা বা মাথায় কোনও স্কাল মাস্ক ছিল না। মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল, কিন্তু তা এন-৯৫ নয় বলে জানান আইডি-কর্তৃপক্ষ। ওই অবস্থায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের পরিচয় দিয়ে জানান, তাঁকে আইডির উপাধ্যক্ষ আশিস মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ভয়াল ভাইরাসে আক্রান্তের শরীরে পর্যাপ্ত রক্ষাকবচ না-থাকায় হইচই শুরু হয়ে যায়। তড়িঘড়ি ওয়ার্ড থেকে করোনা রোগীর জন্য বর্মবস্ত্র আনানোর ব্যবস্থা করা হয়।
আইডির অধ্যক্ষা অণিমা হালদার শুক্রবার বলেন, ‘‘কী করতে হবে, উপাধ্যক্ষ সেটা ওই বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে আগেই বলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তবে আমাদের চিকিৎসক, ইন্টার্ন, স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই পরে ছিলেন। সেটাই রক্ষে।’’ কিন্তু আইডির এক জন রক্ষীর বর্মবস্ত্র ছিল না। তাই তাঁকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে। অধ্যক্ষার কথায়, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালের এমন আচরণে আমরা স্তম্ভিত!’’
আইডি-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ প্রসঙ্গে পেশায় চিকিৎসক ওই আক্রান্ত ব্যক্তি জানান, রোগীকে পিপিই পরিয়ে পাঠাতে হবে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) নির্দেশিকায় এমন কিছু লেখা নেই। মুখে এন-৯৫ মাস্ক না-থাকলেও তিনি দু’টি ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্ক পরে ছিলেন। তিনি কাউকে স্পর্শও করেননি। তাঁর কোনও উপসর্গ নেই, হাঁচি-কাশিও হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা অর্থহীন।
স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সমন্বয়ের অভাব ছিল বলে জানিয়েছেন আক্রান্ত চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আমাকে পাঠানো হয়েছিল সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে। করোনা ওয়ার্ড কোথায়, অ্যাম্বুল্যান্সের চালক তা জানেন না। আইডির কোথায় কোন ওয়ার্ড, তা আমারও জানা নেই। বাধ্য হয়েই অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে কোথায় যেতে হবে, তা জানতে জরুরি বিভাগে গিয়েছিলাম।’’ তাঁর প্রশ্ন, সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালক কেন দাঁড়ালেন না, তা তিনিই বলতে পারবেন! এতে বেসরকারি হাসপাতালের কী ভূমিকা থাকতে পারে? সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা ভিআর রামনন বলেন, ‘‘আইডির পরামর্শ মেনেই রোগীকে আইডিতে পাঠানো হয়েছে। স্বভূমি সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে যে-সব রোগীকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, এন-৯৫ মাস্ক তাঁদেরও দেওয়া হয়নি। আক্রান্ত চিকিৎসকের তো সে-ভাবে কোনও উপসর্গ নেই। আইডি-কর্তৃপক্ষ কেন অসন্তুষ্ট, সেই বিষয়ে খোঁজ নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy