গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন জমায়েত ও জনবহুল এলাকা। করোনার সংক্রমণ রুখতে বার বার বার্তা দিচ্ছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। কিন্তু দরজায় কড়া নাড়ছে পুরভোট। আর ভোট ঘোষণা হলেই জমায়েত, মিছিল, পথসভা শুরু হয়ে যাবে পুরোদমে। তাতে কি পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে? সংক্রমণ কি বাড়তে পারে? ভোট কি পিছিয়ে দেওয়া উচিত? রাজনৈতিক দলগুলি কিন্তু ভোট পিছনোর কথা বলতে এখনও নারাজ। সাবধান থাকার প্রয়োজনীয়তা সকলেই মানছেন। কিন্তু কোনও দলই এখনও পর্যন্ত ভোট পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলতে চাইছে না। সাধারণ নাগরিকের প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। কেউ ঈষৎ চিন্তিত, কেউ একেবারেই নন। ‘গরম বাড়ছে তো, করোনা কমে যাবে,’ সময় মতো ভোটের পক্ষে মত দিতে এই রকমও বলছেন কেউ কেউ।
ভোটের দিন ক্ষণ যারা ঠিক করবে, সেই নির্বাচন কমিশন বলছে, এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আগামী সোমবার সব রাজনৈতিক দলকে একটি বৈঠকে ডেকেছে কমিশন। সেখানে এই সংক্রান্ত কোনও প্রস্তাব এলে তা ভেবে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতা-হাওড়া পুরসভার ভোট হওয়ার কথা। ১১১টি মধ্যে বাকি পুরসভার ভোট দু’দফায় করানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, “এখনও পর্যন্ত এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ভোট শুরু হওয়ার কথা। এ বিষয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলির কোনও মতামত থাকলে, তা বিবেচনা করা যেতে পারে।”
কিন্তু, রাজনৈতিক দলগুলি কী বলছে এ বিষয়ে?
করোনার প্রকোপ এড়ানোর জন্য যদি জমায়েত এড়াতেই হয়, তা হলে পুর নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া উচিত কি না, সে বিষয়ে তৃণমূলের তরফে কোনও মন্তব্য এখনও করা হয়নি। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘করোনার প্রকোপ রুখতে আমরা সব রকম ভাবেই সতর্ক রয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন, সব রকমের সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু করোনার কথা মাথায় রেখে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত অন্তত এখনও পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।’’ পার্থবাবুর কথায়, ‘‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থার সঙ্গে কোনও আপোস করা হবে না। ভোট পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এই মুহূর্ত পর্যন্ত অন্তত নেই ঠিকই। কিন্তু পরিস্থিতির উপরে সারাক্ষণ নজর রাখা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে কাঁপছে দেশ, আক্রান্ত বেড়ে ৮১, দিল্লিতে জরুরি সতর্কতা
ভোট পিছিয়ে দেওয়া উচিত, এ কথা বলতে পারছে না বিজেপি-ও। পুরভোট তৃণমূল করাতে চাইছে না, বহু পুরসভার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূলের সরকার সে সব জায়গায় নির্বাচন আটকে রেখেছে, হারের ভয়েই নির্বাচন আটকে রেখেছে— এ সব কথা বিজেপি নেতারা বার বারই বলছেন। কলকাতা এবং হাওড়ার পুরভোট আগে করিয়ে জেলার পুরসভার ভোটগুলো পরে করানো হতে পারে বলে যে সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে, সে প্রসঙ্গেও তোপ দাগছে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি। ফলে করোনার প্রকোপ এড়াতে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার কথা আগ বাড়িয়ে বলার পথে হাঁটতে চাইছে না বিজেপি।
রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলছেন, ‘‘করোনাভাইরাস নিয়ে সারা বিশ্বেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের চেয়েও বিপজ্জনক হল সন্ত্রাস ভাইরাস। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোখার জন্য যা যা পদক্ষেপ করা প্রয়োজন, যে ভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, তা তো করতেই হবে। সাধারণ মানুষ নিজের মতো করেও সাবধানতা অবলম্বন করবেন। কিন্তু পুরভোটের প্রশ্ন যখনই উঠছে, তখনই করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশি করে আমাদের চিন্তায় রাখছে সন্ত্রাস ভাইরাস। করোনা হয়তো রোখা যাবে। সন্ত্রাস কী ভাবে রোখা যাবে, চিন্তা সেটা নিয়েই।’’
বামেরাও করোনা ঝুঁকির কথা মানছেন। তবে দিন ক্ষণ ঘোষিত না হাওয়া পর্যন্ত ভোট পিছনোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মুখ খুলতে তাঁরা নারাজ। সিপিএম নেতা রবীন দেব বললেন, ‘‘করোনা সংক্রমণের একটা ঝুঁকি তো থাকছেই। যে ভাবে ভাইরাসটা ছড়িয়েছে, তাতে ঝুঁকির কথা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। সে কথাটা নিশ্চয়ই মাথায় রাখতে হবে। তবে নির্বাচনের তারিখ তো এখনও ঘোষণা করা হয়নি। তারিখ আগে ঘোষিত হোক, তার পরে বলা যাবে যে, করোনার প্রকোপ এড়াতে কোনও রদবদল দরকার কি না।’’
আরও পড়ুন: করোনার জের, দেবের শুটিং বাতিল হল তাইল্যান্ড আর বাংলাদেশে
পুরসভা নির্বাচনের দিন ক্ষণ ঘোষণার আগে সব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৬ মার্চ, সোমবার বেলা ৩টেয় সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর। জাতীয় এবং আঞ্চলিক দলগুলিকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। বৈঠকে থাকবেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস-সহ পদস্থ আধিকারিকেরা। ওই বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy