নিজস্ব চিত্র।
শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের শীর্ষ প্রশাসক জানাচ্ছেন, করোনায় ভর্তির সংখ্যা শূন্যে গিয়ে ঠেকেছিল। এখন তা আবার ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকায় সত্যিই বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। শুক্রবারেই নতুন করে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ২২৯ জন। মনে করা গিয়েছিল, করোনা প্রায় বিদায়ই নিয়েছে। টিকাকরণ শুরু হওয়ার পর লোকজন সম্ভবত খানিকটা নিশ্চিন্তও হতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অল্প অল্প করে হলেও আবার জনজীবনে করোনার প্রাদুর্ভাব ঘটতে শুরু করেছে। ধীরে কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। যা দেখে চিকিৎসক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি চোখের সামনেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মাথা তুলছে!
পরিস্থিতির বিচারে শুধুমাত্র করোনার চিকিৎসার জন্যই ৪৪টি সরকারি হাসপাতাল এবং ১৬টি বেসরকারি হাসপাতালকে তৈরি রাখা হচ্ছে। ওই হাসপাতালগুলিতে শয্যার সংখ্যা ৬,৭৩৬টি বেড রয়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য আলাদাভাবে ১,৫০০-এ বেশি শয্যা তৈরি করা হয়েছে। কোভিড হাসপাতালে ৫৯৫টি ভেন্টিলেটর যুক্ত কেবিনের ব্যবস্থাও রয়েছে বলে স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর।
পাঁচ রাজ্যে করোনা সংক্রমণের ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতিতেই উদ্বেগ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গে। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, প্রশাসন এবং রাজ্যবাসী এখনই সতর্ক না হলে ভোটের সময় ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে। গত কয়েকদিনে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অল্প অল্প করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আরও উদ্বিগ্ন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৫,৭৪,৭১৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও আবার ২০০ ছাড়িয়েছে। জানুয়ারি মাসে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে হাজারের উপর ছিল। সেই তুলনায় যদিও ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণের হার কম। আশঙ্কা এবং উদ্বেগের খবর হল, রাজ্যের মধ্যে এখনও সব থেকে বেশি সংখ্যায় দৈনিক করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন কলকাতার লোকজন। তার পর হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার কলকাতায় ‘সক্রিয়’ (অ্যাক্টিভ) করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,১৬০ জন। এক সপ্তাহ আগেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা নিম্নমুখী ছিল। ২০ ফেব্রুয়ারি আক্রান্ত হয়েছিলেন ১,১০৮ জন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১,০৮০ জন। হাওড়ার মতো জনবহুল শহরে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সেখানে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯০। পাঁচ দিনের ব্যবধানে ২০ ফেব্রুয়ারি আক্রান্ত ১১৩ জন। শুক্রবার ২৬ তারিখ সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩০ জন। একই ছবি ধরা পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের হুগলি এবং দুই ২৪ পরগনায়।
যে ভাবে মহারাষ্ট্র, কেরল, পাঞ্জাব, কর্নাটক এবং ছত্তীসগঢ়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সে কারণে শুক্রবার থেকেই কলকাতা বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি থেকে আসা যাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলিকেও তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের তরফে চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ শনিবার বলেন, “আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। বিভিন্ন রাজ্যে সংক্রমণের হার বাড়ছে। রাজ্যে যে ভাবে ভোট নিয়ে উন্মাদনা রয়েছে, তাতে করোনার বিষয়টি সকলেই যেন ভুলে গিয়েছেন। ভারতে করোনার নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরকে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।”
ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, আফ্রিকার করোনা প্রজাতির কারণে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে বিশ্বে। ভারতীয় প্রজাতি নিয়েও চিন্তায় চিকিৎসকেরা। যদিও এখনও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক স্বীকার করেনি যে, নতুন প্রজাতির কারণেই পাঁচটি রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা রুখতে দ্রুতগতিতে করোনার প্রতিষেধক টিকাকরণের শেষ করতে চায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু ‘কো-উইন ২.০’ অ্যাপে ত্রুটির কারণে সেই কর্মসূচি বারবার ধাক্কা খাচ্ছে বলে রাজ্য প্রশাসনের অভিযোগ। শনিবার এবং রবিবার অ্যাপের সফ্টঅয়্যারের সমস্যা খতিয়ে দেখার কারণে এই দু’দিন অ্যাপ কাজ করছে না। ফলে রাজ্য টিকাকরণের কাজ বন্ধ রাখা হবে। চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তুলছেন, রাজ্যে প্রায় ১০ কোটি মানুষ। কবে এতজনকে টিকার আওতায় আনা যাবে! আরও সক্রিয় হতে হবে প্রশাসনকে। রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ১,০৮,৪২৭ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ২৩,০০০-এর বেশি মানুষ দ্বিতীয়বার টিকা নিয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যেই অল্প অল্প করে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও।
অল্প অল্প করে ছড়াচ্ছে রোগের গল্প।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy