Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

গরমিল ঢাকতে নম্বর ছাড়াই মেধা-তালিকা?

প্রশ্ন উঠছে কলেজে শিক্ষক নিয়োগের মেধা-তালিকাকে ঘিরে। তাতে নাম আছে পরপর। কিন্তু কোন নম্বরের ভিত্তিতে সেই তালিকা তৈরি হয়েছে, তার উল্লেখ নেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

কিছু নাম পরপর লিখলে সেটা একটা তালিকা নিশ্চয়ই। কিন্তু নম্বর বাদ দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের নাম লিখে দিলেই কি সেটা মেধা-তালিকা হয়ে যায়?

প্রশ্ন উঠছে কলেজে শিক্ষক নিয়োগের মেধা-তালিকাকে ঘিরে। তাতে নাম আছে পরপর। কিন্তু কোন নম্বরের ভিত্তিতে সেই তালিকা তৈরি হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। কেন নম্বর এড়িয়ে মেধা-তালিকা তৈরি হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে কলেজ সার্ভিস কমিশন (সিএসসি)-এর বিরুদ্ধে। মেধা-তালিকায় নম্বর না-দেওয়াটাকে অস্বচ্ছতার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছে শিক্ষা শিবিরের একাংশ।

এ বার কলেজ-শিক্ষক নিয়োগের তালিকা প্রকাশের পর থেকেই নানান অভিযোগ উঠছে এবং অভিযোগের ধরনও বিচিত্র। কোথাও ভূগোলের স্নাতককে ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের তালিকায় রাখা হয়েছে। তেমনই নৃতত্ত্বে স্নাতক না-হয়েও শুধু স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ঠাঁই পেয়েছেন নিয়োগ-তালিকার উপরের দিকে।

শিক্ষা জগতের অনেকেই বলছেন, ইন্টারভিউয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা, নেট বা সেট পাশ, এমফিল বা পিএইচ ডি, গবেষণাপত্র প্রকাশ এবং মৌখিক প্রশ্নোত্তর মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২৫ নম্বর থাকে মৌখিক প্রশ্নোত্তরে। অনেকেরই প্রশ্ন, যাঁরা মাধ্যমিক থেকে পিএইচ ডি পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাল ফল করেছেন, তাঁরা কি মৌখিক প্রশ্নোত্তরে কিছুই পারেননি? এমন অনেকেই নিয়োগ-তালিকায় ঠাঁই পাননি বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে, গরমিল এড়াতেই কি মেধা-তালিকার পাশে নম্বর প্রকাশ করা হয়নি? এই ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সিএসসি-র চেয়ারম্যান দীপক করের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও জবাব দেননি।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, মেধা-তালিকায় নম্বর দিলে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। সেটাই স্বচ্ছ প্রশাসনের দৃষ্টান্ত। বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-র প্রাক্তন সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘গোটাটায় অপেশাদার মনোভাব রয়েছে। নিয়োগে দুর্নীতি হলে তার প্রভাব পড়বে দৈনন্দিন পঠনপাঠনের উপরে।’’ তাঁর বক্তব্য, সিএসসি-তে পূর্ণ সময়ের চেয়ারম্যান নেই। বর্তমান চেয়ারম্যান দীপক কর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ছিলেন, এখন সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি রয়েছেন কলকাতার আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ-পদেও। ফলে কলেজ সার্ভিস কমিশনের কাজের নজরদারিতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে।

নম্বরহীন মেধা-তালিকা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর নিয়োগের সময়েও। বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। হাইকোর্টের নির্দেশেই নতুন মেধা-তালিকা তৈরি করা হয়। শ্রুতিনাথবাবু বলছেন, ‘‘এসএসসি-র থেকে সিএসসি কি কিছুই শিখল না?’’ সিএসসি-র এক প্রাক্তন আধিকারিক জানাচ্ছেন, আগের আমলে নিয়োগের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নানান গোপনীয়তা বজায় রাখা হত। তবে মেধা-তালিকা নিয়ে কোনও দিন অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠেনি। নিয়োগ তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটানো হত। কিন্তু তার আগে কোনও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠেনি।

এ বার নিয়োগের ক্ষেত্রে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গের কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম শোনা যাচ্ছে। উঠছে স্বজনপোষণের অভিযোগও। উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, বাংলা বিভাগে অভিজ্ঞ শিক্ষককে ঠাঁই না-দিয়ে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ অনভিজ্ঞ শিক্ষকদের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এত অভিযোগ ওঠার পরেও সিএসসি-কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকা শিক্ষকদের অনেকের দাবি, নিয়োগ স্বচ্ছ হয়েছে। ইন্টারভিউ বোর্ডে স্বজনপোষণ হয়নি। তবে কমিশনের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কোনও গরমিল আছে কি না, সেই বিষয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Controversy College Service Commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy