হাতে আর মাত্র পাঁচ দিন। পুরভোটে কলকাতায় আধাসামরিক বাহিনী থাকবে কি না— সেই প্রশ্নের স্পষ্ট কোনও জবাব মিলল না সোমবারও। তবে বাহিনী পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে দিনভর চলল চাপানউতোর। এরই মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কতকটা ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে ফেলার মতো করেই এ দিন হুঁশিয়ার করে দিল রাজ্য সরকারকে। তাদের বক্তব্য, পুরভোটে গোলমাল হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
কেন্দ্র আগেই জানিয়েছিল, বাহিনী পাঠানো যাবে না। তাতে মুখ পোড়ে রাজ্য বিজেপির। শেষে তারা দিল্লিতে দরবার চালিয়ে জানায়, সোম-মঙ্গলবার বাহিনী নিয়ে বার্তা আসতে পারে দিল্লি থেকে। নবান্ন সূত্রের খবর, এ দিন রাত পর্যন্ত অন্তত তেমন কোনও বার্তা আসেনি। অস্বস্তি কাটাতে বিজেপি দুষছেরাজ্য সরকারকেই। পাহাড় ও জঙ্গলমহল-সহ রাজ্যের জেলাগুলিতে মোতায়েন ৪৮ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী একটি অংশকে কেন রাজ্য সরকার ভোটের জন্য কলকাতায় আনছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যে তৃণমূল ও তাদের সরকারকে তুলোধোনা করবে, সেটা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। কিন্তু লক্ষণীয় ভাবে নির্বাচন কমিশনও কতকটা ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে ফেলার মতো করেই এ দিন হুঁশিয়ার করেছে রাজ্য সরকারকে। কমিশনের বক্তব্য পুরভোটে কোনও গোলমাল হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
কেন?
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তর়ঞ্জন উপাধ্যায়ের ব্যাখ্যাটি এ রকম, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে রাজ্যের কাছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু গোড়া থেকেই ওই প্রস্তাব মানতে চায়নি নবান্ন। এই পরিস্থিতিতে পুরভোটে আইন-শৃঙ্খলাজনিত কোনও সমস্যা দেখা দিলে তার জন্য রাজ্য সরকারই দায়ী থাকবে। সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে ভোটারদের মনে আস্থা জাগত।’’
এই বক্তব্যের জন্য কমিশনকে এ দিন তীব্র কটাক্ষ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বসিরহাটে এক প্রচারসভায় তিনি বলেন, ‘‘এ তো মীরা পাণ্ডে নন যে বাহিনীর জন্য আদালতে যাবেন। বর্তমান নখদন্তহীন নির্বাচন কমিশন মানুষকে ধাপ্পা দিয়ে বলছে, আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিলাম, পেলাম না।’’
এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, ‘‘বাহিনী আসবে না শুনে কপালে ভাঁজ পড়েছে কমিশনের।’’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছিল, পুরভোটের জন্য কাশ্মীর ও মাওবাদী এলাকা থেকে আধাসামরিক বাহিনী সরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহ গত শনিবার ঘোযণা করেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মত বদলেছে কেন্দ্র। তবে সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজনৈতিক স্তরে। কিন্তু এ দিন রাত পর্যন্ত দিল্লির তরফে নবান্নকে কিছুই জানানো হয়নি। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এক কোম্পানিও কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো যাবে না বলে আগেই জানায় দিল্লি। তার পর এই নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আর কিছু জানায়নি।’’ এই অবস্থায় দার্জিলিঙে মজুত কেন্দ্রীয় বাহিনী থেকে তিন কোম্পানিকে কলকাতায় আনার চেষ্টা করছেন নবান্নের কর্তারা। যদিও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মোতায়েন থাকা ৪৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভোটের কাজে ব্যবহার করা যাবে কি না জানতে চেয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ দিন ফের চিঠি দিয়েছে কমিশন। কিন্তু তা কোনও মতেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি অবশ্য এ দিনও দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বাহিনী পাঠানোর বিষয়ে শনিবার ভরসা দিয়েছেন। গত কাল ছিল রবিবার। এ দিন সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমি নিশ্চিত, কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবেই।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেন পাহাড়, জঙ্গলমহল হাসছে। তা হলে কেন ভোটে দু’-চার দিনের জন্য ওই সব এলাকা থেকে বাহিনী তোলা যাবে না?’’
নির্বাচন কমিশনার এ দিন জানান, মেটিয়াবুরুজে গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশ এখনও কমিশনকে রিপোর্ট দেয়নি। তাই কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার করা গেল না, কেনই বা ঘটনার রিপোর্ট কমিশনকে দেওয়া হল না। এ দিনও শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছেন বিরোধীরা।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব কমিশনে অভিযোগ করেছেন, উত্তর দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে তাঁদের এক কর্মীকে শাসক দলের লোকজন পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। দলীয় কর্মীরাই তাঁকে বাঁচান। এ ব্যাপারে কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy