মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় মঙ্গলবার বিরোধী দল বিজেপির তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য সরকার দিচ্ছে না। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় সেই তথ্য দেওয়ার সময়ে দাবি করলেন রাজ্যে ডেঙ্গিতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ছ'জনের মৃত্যু হয়েছে সরকারি হাসপাতালে। বাকি পাঁচ জনের মৃত্যু বেসরকারি হাসপাতালে। তবে অনেকেরই অন্যান্য অসুস্থতা ছিল বলেও দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।
বিধানসভায় খোদ মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বিবৃতি দেওয়া নিয়ে বিস্মিত রাজ্যের চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, প্রকৃত তথ্য গোপন করছে রাজ্য সরকার। যেখানে চলতি বছরের অগস্টের শেষ থেকে প্রায় প্রতি দিন লাফিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল, সেখানে ধীরে হলেও বাড়ছিল মৃতের সংখ্যা। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এত দিনে প্রায় ১০০-জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বেসরকারি সূত্রের খবর। যদিও প্রথম থেকেই কখনও মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ্যে আনেনি স্বাস্থ্য দফতর। বারংবারই কর্তারা দাবি করছেন, প্রতিটি মৃত্যুর অডিট করা হচ্ছে। এ দিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় রয়েছে। সেই কারণেই মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য সরকারি পোর্টালে দেওয়া যায় না। তবে মুখ্যমন্ত্রী এটা স্বীকার করে নেন যে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গি একটু বেড়েছে। ডেঙ্গির সংক্রমণ দিনে এক সময় ১১০০-এর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।
তিনি জানান, এখন অবশ্য তা ৫০০-র কাছাকাছি রয়েছে। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও শিলিগুড়িতে বেশি হয়েছে। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, স্বাস্থ্য দফতর, পুর দফতর সব ব্যবস্থা করছে। বিরোধীরাও মানুষকে সচেতন করার কাজে এগিয়ে আসুন। ঠান্ডা পড়লে ডেঙ্গির প্রকোপ কমবে বলেও দাবি করেন মমতা। যেখানে কলকাতাতেই অগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ১১ বললেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। তাদের অভিযোগ, কোভিডের মতোই ডেঙ্গিতেও তথ্য গোপন করছে রাজ্য।অভিযোগ উড়িয়ে ইন্ডিয়ান মেডিক্যালঅ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক তথা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি,“বাংলার তথ্য গোপনের প্রয়োজন পড়ে না। কেন্দ্রের অসহযোগিতা সত্ত্বেও কোভিডের মতো ডেঙ্গি মোকাবিলাতেও বাংলা স্বয়ংসম্পূর্ণ।”
তবে, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস দাবি করেন, “প্রতি বছরের মতো এ বারও ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তথ্য গোপনের দ্বারা সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে।” আবার, অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার দাবি, “সব রাজ্যেই কেন্দ্রীয় পোর্টালে ডেঙ্গির তথ্য আপলোড করা হয়। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের কোনও নিষেধাজ্ঞা আছে বলে জানা নেই। প্রশ্ন হল, তথ্য গোপন করে কি রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?” পরিসংখ্যান পেতে চিকিৎসকেরা যেখানে সরকারের উপর নির্ভরশীল, সেখানে বিভ্রান্তিকর তথ্যে চিকিৎসায় সমস্যা হয় বলেই দাবি ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের অর্জুন দাশগুপ্তের। যদিও শান্তনুর বক্তব্য, “কোভিডে দেশে ৪৫ লক্ষের মৃত্যু হয়েছিল। সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে সাড়ে চার লক্ষ দেখানো হয়েছিল। তথ্য গোপনের মাস্টার ভারত সরকার। তাদের এহেন কাণ্ডে, বিশ্বের কাছে মাথা হেঁট হয়েছিল।”
ডেঙ্গি নিয়ে মামলা: ডেঙ্গি রুখতে রাজ্য সরকার এবং প্রশাসন ব্যর্থ, এই অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে আদালতের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তিনি। ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা, পুরসভাগুলির বেহাল দশা, প্লেটলেটের আকালের বিস্তারিত খতিয়ানও তিনি দিয়েছেন। মামলাকারীর আইনজীবী শমীক বাগচী জানান, বুধবার হাই কোর্ট মামলাটি গ্রহণ করেছে এবং আগামী মঙ্গলবার মামলাটির শুনানি হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy