ফাইল চিত্র।
দীর্ঘকালীন অতিমারিতে পঠনপাঠনের ব্যাপক ক্ষতির মোকাবিলায় সংক্রমণ বন্ধ হওয়ার আগেই স্কুল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন আছে। শনিবার অর্ধদিবসের বদলে পুরো সময় স্কুল করতে হবে বলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সম্প্রতি যে-বার্তা দিয়েছে, এ বার বিতর্কের সৃষ্টি হল সেটিকে ঘিরেও।
তবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় শুক্রবার বলে দিয়েছেন, ‘‘শনিবার পূর্ণ সময় স্কুল খোলা। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা সেটা যেন শিক্ষকদের জানিয়ে দেন।’’ অভিভাবকদের একাংশের মতে, দীর্ঘ ছুটির পরে শনিবার পূর্ণ সময় ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্ত যথাযথ। এর ফলে পড়ুয়ারা উপকৃত হবে।
শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, করোনার জন্য দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকেরা ঘরে বসে ছিলেন এবং সেই জন্য এখন অতিরিক্ত সময় স্কুল করতে হবে, এমন ধারণা থেকে যদি শনিবার পুরো সময় স্কুল চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা হলে ভুল হবে। বাড়িতে থাকলেও তাঁদের কাজ করতে হয়েছে নিয়মিত। দেখতে হয়েছে নিয়মিত ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ বা গৃহপাঠের খাতা দেখেছেন। অনলাইনে ক্লাসও করেছেন অনেকে। প্রতি মাসে মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণ-সহ স্কুলের অন্যান্য কাজও করতে হয়েছে।
শিক্ষকদের প্রশ্ন, পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা না-হয় শনিবারেও স্কুলে হাজির হলেন। কিন্তু পড়ুয়ারা আসবে তো? হাওড়ার এক শিক্ষক বলেন, ‘‘সোম থেকে শুক্র, পড়ুয়ারা স্কুলে কার্যত বন্দিদশায় কাটাচ্ছে। টিফিনেও বেরোতে পারে না। সর্বক্ষণ মাস্ক। অনেক ছাত্রছাত্রীই হাঁপিয়ে উঠেছে। তারা সপ্তাহে ছ’দিন আসবে তো?’’
‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘শনিবার পূর্ণ সময় স্কুল চালানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবোচিত নয়। করোনার জন্য সব দফতরের কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জরুরি পরিষেবা ছাড়া কোথাও কাজের সময় বাড়েনি। বাড়তি সময় স্কুল চালু রাখার সিদ্ধান্তে শিক্ষকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।’’
অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন গড়াই জানান, যে-সব শিক্ষকের বাড়ি দূরে, তাঁদের অধিকাংশই শনিবার অর্ধদিবস স্কুলের পরে বাড়ি যান। ওই দিন পুরো স্কুল হলে তাঁরা বাড়ি যেতে পারবেন না।
যদিও ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি যথাসম্ভব পূরণের জন্য শনিবারেও পূর্ণ সময় ক্লাসের সিদ্ধান্ত ঠিক বলে জানাচ্ছেন এক শ্রেণির অভিভাবক। এমনই এক অভিভাবক বলেন, ‘‘দেড় বছরেরও বেশি সময় স্কুল হয়নি। মিড-ডে মিল বিতরণ, কিছু অ্যাক্টিভিটি টাস্ক দেখা ছাড়া শিক্ষকেরা এই সময়ে কতটুকু পড়িয়েছেন? গ্রামীণ স্কুলে অনলাইন ক্লাস তো কার্যত কিছুই হয়নি। স্কুল বন্ধ থাকলেও অনেক শিক্ষক বাড়িতে বসে চুটিয়ে টিউশন করেছেন।’’ অন্য এক অভিভাবক জানান, করোনাকালে হাতে গোনা কিছু শিক্ষক নিজেদের উদ্যোগে পড়ুয়াদের পড়াশোনার খোঁজ নিয়েছেন। সামনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক। অনেক প্রস্তুতি বাকি। সকলের তো টিউটরের কাছে পড়ার সামর্থ্য নেই। শনিবার পূর্ণ সময় স্কুল চললে পড়ুয়ারা যদি উপকৃত হয়, শিক্ষকেরা নারাজ কেন, প্রশ্ন ওই অভিভাবকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy