— প্রতীকী চিত্র।
কয়েক মাস ধরে ‘হিমোফিলিয়া’ রোগের ওষুধ ‘অ্যান্টি হিমোফিলিক ফ্যাক্টর’ অপ্রতুল রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে। বিনামূল্যে সপ্তাহে তিনটি করে ‘ফ্যাক্টর ৮’ ইঞ্জেকশন পাওয়ার কথা রোগীদের। তা না পেয়ে, সম্প্রতি নানা হাসপাতালে হিমোফিলিয়া রোগীরা বিক্ষোভ দেখান। নতুন করে একটি গোষ্ঠী সে ওষুধ সরবরাহের দায়িত্ব পেলেও, জোগান ততটা বাড়েনি বলে দাবি। তা ছাড়া, সে ওষুধের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলের।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তিনটি বহুজাতিক ওষুধ সংস্থা এই চিকিৎসা উপাদান সরবরাহ করত। তাদের জোগান অনিয়মিত ছিল। স্বাস্থ্য দফতরের ডাকা দরপত্র মারফত সেপ্টেম্বরে এই উপাদান সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয় অন্য গোষ্ঠী। কিন্তু তাদের সরবরাহ করা ‘ফ্যাক্টর ৮’-এর মান যথাযথ নয় বলে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ জানান হিমোফিলিয়া রোগীদের একাংশ। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের পাল্টা দাবি, যে সব বহুজাতিক সংস্থা আগে ‘ফ্যাক্টর ৮’ সরবরাহ করত, তারা বরাত না পেয়ে কিছু রোগী ও রক্ত বিশেষজ্ঞদের একাংশকে দলে টেনে এ সব করাচ্ছে।
হিমোফিলিয়া রোগীদের শরীর থেকে কোনও কারণে রক্তক্ষরণ শুরু হলে, তা থামতে চায় না। তাঁদের সুস্থ রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই ‘ফ্যাক্টর ৮’। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, রাজ্যে বছরে প্রায় দেড় কোটি ‘ইউনিট’ এই ইঞ্জেকশন প্রয়োজন হয়। শামিউর শেখ নামে এক রোগীর কথায়, “যে কোনও সময়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। কোনও সপ্তাহে চার বার ইঞ্জেকশন নিতে হয়েছে, এমনও ঘটেছে।” এক রোগীর আত্মীয় মৌসুমি রায়ের অভিযোগ, “ওষুধের অভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি।” বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যালের অধ্যক্ষ উৎপল দাঁ থেকে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়— সকলেই জানান, কয়েক মাস ধরে ওই উপাদান মিলছে না।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ২৬ নভেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে প্লাজ়মা থেকে তৈরি ‘ফ্যাক্টর ৮’ দেওয়া শুরু করেছে নতুন দায়িত্ব পাওয়া গোষ্ঠী। হিমোফিলিয়া রোগীদের একাধিক সংগঠনের অভিযোগ, চাহিদার তুলনায় ওষুধ কমই মিলছে। পাশাপাশি, হিমোফিলিয়া রোগীদের ‘ফ্যাক্টর ৮’ দেওয়ার অন্যতম ‘নোডাল সেন্টার’ নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে সরবরাহ করা ‘ফ্যাক্টর ৮’ নিয়ে কিছু রোগীর শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে সোমবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন এক রোগী। যদিও স্বাস্থ্য দফতর অভিযোগ স্বীকার করেনি।
পাঁচ বছর আগেও রক্তের প্লাজ়মা থেকে তৈরি ‘ফ্যাক্টর ৮’ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে সরবরাহ শুরু করেছিল এই একই গোষ্ঠী। তখনও প্রতিবাদ জানান রক্ত বিশেষজ্ঞ ও হিমোফিলিয়া রোগীদের একাংশ। তাঁদের দাবি ছিল, এই ধরনের ‘ফ্যাক্টর’ থেকে গ্রহীতার দেহে সংক্রমণ হওয়ার বড় আশঙ্কা থাকে। বহুজাতিক ওষুধ সংস্থার তৈরি ‘রিকম্বিন্যান্ট ফ্যাক্টর’-এ (যা রক্ত থেকে তৈরি নয়) আস্থা জানিয়েছিলেন তাঁরা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান তুফানকান্তি দলুই বলেন, ‘‘নতুন বরাত পাওয়া সংস্থার ‘ফ্যাক্টর ৮’ নিয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে প্লাজ়মা থেকে তৈরি ‘ফ্যাক্টর ৮’-এ গ্রহীতার দেহে নানা রকম প্রতিক্রিয়া, র্যাশ ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। ‘রিকম্বিন্যান্ট ফ্যাক্টর’-এ সে ঝুঁকি কম।’’ ‘ফ্যাক্টর ৮’ সরবরাহ করার নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত গোষ্ঠীর তরফে এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অতনু চক্রবর্তীকে একাধিক বার ফোন করা হলেও, তিনি ধরেননি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বপন সোরেনকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান। পরে, তাঁর ফোনে পাঠানো বার্তার জবাব মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy