সনিয়া ও রাহুল গাঁধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
নতুন একটি জোটের সূচনা এবং সেই সঙ্গেই কি চলতি অন্য জোটের সমাপ্তি! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সমাবেশের বার্তার পরে এই জোড়া সম্ভাবনা নিয়েই চর্চা শুরু রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করার লক্ষ্য মাথায় রেখে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই বৃহত্তর জোটের ডাক দিয়েছেন মমতা। কোভিড নিয়ন্ত্রণে থাকলে শীতকালে কলকাতায় মহাসমাবেশে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে আমন্ত্রণ করার কথাও বলেছেন। তৃণমূল নেত্রীর ভার্চুয়াল সমাবেশে এআইসিসি-র সম্মতি নিয়েই উপস্থিত থেকেছেন পি চিদম্বরম, দিগ্বিজয় সিংহের মতো বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতারা। এর পরে বাংলায় ফের তৃণমূলের জোটসঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল বলে মনে করছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করে শূন্য হয়ে যাওয়ার পরে কংগ্রেস ফের পুরনো পথে মমতা-সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে আন্দাজ করে সিপিএমকেও বিকল্প ভাবনা ভাবতে হচ্ছে!
তৃণমূল নেত্রী অবশ্য বিজেপি-বিরোধী বৃহত্তর জোটের পক্ষেই তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। মমতা বৃহস্পতিবারও বলেছেন, ‘‘আমি সবাইকে বলব, যে যেখানে আছেন এ দেশে, সবাই জোটবদ্ধ হোন। আমি একা কেউ নই। আমি আপনাদের সঙ্গে মিলে আপানাদের একশো করতে চাই। আমি এক প্লাস থাকব। আসুন, আমরা একশো প্লাস হয়ে লড়াই করি।’’ বিজেপির বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে রাজ্যে নির্বাচনী সমঝোতার স্তরে ভেঙে দেখতে গেলে কী সমীকরণ হবে, আলোচনা শুরু হয়েছে সেই প্রশ্ন ঘিরেই।
বাংলায় কংগ্রেস তা হলে কোন পথ বেছে নেবে? বাম ছেড়ে তৃণমূল? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য, ‘‘বাংলার কংগ্রেস বলে আলাদা কিছু নেই। আমরা জাতীয় কংগ্রেসের রাজ্য শাখা। জাতীয় কংগ্রেস যদি তৃণমূলের সঙ্গে যেতে বলে, তা হলে তা-ই করতে হবে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেই তো মমতা ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন।’’ সে ক্ষেত্রে কি বামেদের সঙ্গে তাঁদের জোটে ইতি পড়বে? অধীরবাবুর মত, ‘‘তৃণমূল নেত্রী তো সব দলকেই জোটে ডেকেছেন, তার মধ্যে সিপিএমও আছে! হাইকম্যান্ডের কথায় তৃণমূলের সঙ্গে আগে জোট হয়েছিল। তৃণমূলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বামেদের সঙ্গে জোটও করেছিলাম দিল্লির সম্মতি নিয়েই।’’ ভবানীপুরে বিধানসভা উপনির্বাচনে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার প্রস্তাব আগেই দিয়েছিলেন অধীরবাবু।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের অনেকে অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, হাইকম্যান্ড তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও ২০০১ সালে মুর্শিদাবাদে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছিল। পরের বার ২০০৬ সালেও হাইকম্যান্ডের স্বীকৃত কংগ্রেস প্রার্থীদের সঙ্গে লড়ে দুই নির্দল প্রার্থীকে অধীরবাবু জিতিয়ে এনেছিলেন নিজের জেলা থেকে। প্রশ্ন উঠেছে, এ বার বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়াই কি প্রদেশ সভাপতিকে ‘হাইকম্যান্ড-অনুগামী’ করে তুলল? অধীরবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘জোট হলেও আমরা তো সরকারে নেই। তৃণমূলের চুরি-জোচ্চুরি, অন্যায় দেখলে নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করব!’’
লোকসভায় রাজ্যে কংগ্রেসের এখন দু’টি আসন, বামেদের শূন্য। তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলেও দুই আসনের বাইরে কোনও দরাদরির জায়গাতেই নেই কংগ্রেস! দলের একাংশের প্রশ্ন, নেতৃত্বস্থানীয় কয়েক জনের লোকসভা ও রাজ্যসভায় জায়গা নিশ্চিত হলেই জোট হয়ে যাবে— এই ধারাই কি চলবে? সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘জাতীয় স্তরে বৃহত্তর জোটে অসুবিধা না থাকলেও রাজ্যে ফলিত স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে গিয়ে কী লাভ হবে, বামেদের সঙ্গে জোটেরই বা কী হবে— এ সব নিয়ে বিশদে আলোচনা প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy