সবংয়ের ব্লক অফিসে ভাঙচুরের পর। — নিজস্ব চিত্র।
বন্ধ দোকানপাট, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা হাতেগোনা, অন্যদিনের মতো স্কুল-কলেজ, অফিসে যাওয়ার ব্যস্ততারও দেখা নেই-সবমিলিয়ে বন্ধে সর্বাত্মক প্রভাব পড়ল সবংয়ে। গত ৭ অগস্ট সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে খুনের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের তির তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধে বিক্ষিপ্ত কিছু গণ্ডগোল ছাড়া শান্তিই বজায় থাকল। বন্ধের সমর্থনে সবংয়ের ব্লক অফিসে ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ উঠল কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় পাঁচজন কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। যদিও এ দিন বন্ধে সবংয়ে দেখা মেলেনি এলাকার বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার। মানসবাবু বলেন, “বুধবার সংখ্যালঘু সম্মেলন রয়েছে। রাত থেকেই কর্মীরা এসে পড়বেন। তারই প্রস্তুতি চলছে। তাই আমি সবংয়ে যেতে পারিনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে সবং তথা গোটা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার বন্ধের খোঁজ খবর নিয়েছি।’’ বন্ধ নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে মানসবাবুর দ্বন্দ্ব নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা জল্পনা ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে মানসবাবুর বক্তব্য, ‘‘সবই গল্প। এখানে দ্বন্দ্বের কোনও জায়গা নেই।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একমাত্র সবং পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেসের দখলে। মানসবাবুও দীর্ঘদিন এই এলাকার বিধায়ক। সবং কলেজের ছাত্র সংসদ ছাত্র পরিষদ (সিপি)-এর দখলে রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সবংয়ের তেমাথানি মোড়ে যুব কংগ্রেস নেতা আবু কালাম বক্সের নেতৃত্বে জমায়েত করে কর্মী-সমর্থকেরা। সুনসান ছিল রাস্তাঘাট। পথে মোটরবাইক ছাড়া অন্য কোনও যানবাহনের দেখা মেলেনি। দোকানপাটের ঝাঁপও ছিল বন্ধ। বন্ধ ছিল পঞ্চায়েত সমিতির নির্মিত সবং মার্কেট কমপ্লেক্সও। ওই মার্কেট কমপ্লেক্সের কাপড় ব্যবসায়ী চন্দন অধিকারী বলেন, “সবংয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুতে সারা রাজ্যে কংগ্রেস বন্ধ ডেকেছে। কেউ জোর করেনি। স্বেচ্ছায় দোকান বন্ধ রেখেছি।”
বন্ধ ঘিরে সবং ব্লক অফিসে উত্তেজনা ছড়ায়। অর্থ দফতরের নির্দেশিকা মেনে এ দিন সকাল ৬টা থেকেই সরকারি কর্মীরা আসতে শুরু করেন বিডিও অফিসে। সকাল থেকেই খোলা ছিল বিডিও অফিস। বেলা বাড়তেই অফিস বন্ধের দাবি জানিয়ে বিডিও অফিসে ঢুকে পড়েন কংগ্রেস কর্মী সমর্থকেরা। বন্ধ সমর্থনকারীরা কর্মীদের ফিরে যাওয়ার কথা বললে সরকারি কর্মীরা তা মানতে অস্বীকার করেন। অভিযোগ, সেই সময় বিডিও অফিসে ভাঙচুর শুরু করেন কংগ্রেস কর্মীরা। পরে জনা দশেক কংগ্রেস কর্মী বিডিও-র অফিস ঘরে ঢুকে টেবিলের কাঁচ ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় বাধা দিতে গেলে একশো দিনের কাজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম অফিসার বিরাজ দাসকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আহত বিরাজবাবুকে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিরাজবাবু বলেন, “বন্ধ সমর্থকেরা বিশাল মিছিল নিয়ে অফিসে ঢুকেছিল। আমি বড়বাবুর ঘরে ছিলাম। সেই সময় ১০-১৫ জন ঢুকে আমাদের অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। তাদের দাবি মানতে না চাওয়ায় মারধর করে।”
ঘটনার খবর পেয়ে এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডলের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ বাহিনী। খতিয়ে দেখা হয় অফিসের ভিডিও ফুটেজ। সেই ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে ওই অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছেন। এরপরেই বিডিও-র অভিযোগের প্রেক্ষিতে কংগ্রেসের ব্লক সাধারণ সম্পাদক স্বপন মাইতি, কর্মী জয়দেব মহাপাত্র, নিমাই মান্না, দীপঙ্কর দে, বিমল বেসরাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ বিষয়ে মানসবাবু বলেন, “বন্ধ ভাঙতে শাসকদলের গুণ্ডা ও পুলিশ সবং-সহ সারা বাংলায় সক্রিয় ছিল। আমাদের কিছু সমর্থক বন্ধ পালনের আবেদন করতে বিডিও অফিসে ঢুকেছিল। সেই সময় কোনও প্ররোচণায় একটা কাঁচ ভেঙেছে বলে শুনেছি। এ ধরনের ঘটনাকে সমর্থন করি না।” বিকাশ ভুঁইয়াও দাবি করেন, “তৃণমূলের অন্তর্ঘাতের জন্য বিডিও অফিসে এই ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।”
এ দিন সকাল থেকে সবং ব্লকের বিষ্ণুপুর, মোহাড়, বুড়াল এলাকায় বন্ধের বিরোধিতায় একাধিক মিছিল করে তৃণমূল। বিডিও অফিসে কংগ্রেসের ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠার পরেই তেমাথানি এলাকায় মিছিল বের করে তৃণমূল। কলেজ পর্যন্ত যায় মিছিল। সবং কলেজ খোলা থাকলেও পড়ুয়াদের সে ভাবে দেখা মেলেনি। সবংয়ের অধিকাংশ স্কুল খোলা হলেও পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সবং হাইস্কুলে শিক্ষকদের সকলেই উপস্থিত থাকলেও ক্লাস হয়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অদিতিনন্দন রাজ বলেন, “২৩ জন শিক্ষকের প্রত্যেকেই সকালে স্কুলে চলে আসি। এরপরে কংগ্রেস কর্মীরা স্কুলের গেট বন্ধ করে দেয়। পড়ুয়া না আসায় ক্লাস করতে পারিনি।”
বন্ধে তেমাথানি এলাকায় যানজট তৈরি হয়। রাস্তায় চোখে পড়ে দীর্ঘ লরির সারি। এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থেকে নদিয়ায় ধান নিয়ে যাচ্ছিলেন চাল ব্যবসায়ী ক্ষিতিশ রায়। বন্ধের জেরে আটকে পড়েন তিনি। তাঁর কথায়, “বন্ধে এতক্ষণ আটকে থাকায় দুর্ভোগ হল।” যদিও বন্ধ প্রসঙ্গে সবংয়ের তৃণমূল নেতা তথা জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, “জোর করে সবং এলাকায় বনধ করেছে কংগ্রেস। বিডিও অফিস-সহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুরও চলে। দলের কর্মীরা পুলিশের অনুরোধে বনধ্ ভাঙার চেষ্টায় পথে নামেনি। তারপরেও সর্বত্র বন্ধ ব্যর্থ হয়েছে।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘ব্লকের ৪৮টি স্কুলই এ দিন খোলা ছিল।’’ তবে জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ারও দাবি, ‘‘সবং, খড়্গপুর-সহ জেলার সর্বত্র বন্ধের প্রভাব সর্বাত্মক।’’
সৌমেশ্বর মণ্ডল ও রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy