ফাইল চিত্র।
বিরোধীদের মর্যাদা নেই, বিতর্কের সুযোগও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগ সামনে রেখে বিধানসভায় এ বার ভোট-অন-অ্যাকাউন্টের বক্তৃতা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিল বিরোধী বাম ও কংগ্রেস। অর্থবরাদ্দের উপরে বিতর্কে তারা অবশ্য অংশগ্রহণ করবে।
বিধানসভা ভোট আসন্ন বলে এ বার পূর্ণাঙ্গ বাজেটের বদলে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। সংক্ষিপ্ত অধিবেশন ডাকা হয়েছে ৫ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি। সম্ভবত এটাই হতে চলেছে বর্তমান বিধানসভার শেষ অধিবেশন। এবং অধিবেশন সমাপ্ত না করে মুলতুবি করা আছে বলে এ বারের বাজেট অধিবেশনও হবে রাজ্যপালের ভাষণ ছাড়া। গত ১০ বছর ধরেই বর্তমান রাজ্য সরকার সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি মানছে না, বয়কটের সিদ্ধান্তের পিছনে সেই কারণই দেখিয়েছেন বিরোধী নেতারা।
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী মঙ্গলবার বলেন, গত পাঁচ বছরে বিধানসভার অধিবেশন বসেছে ১৬১ দিন। তার মধ্যে ১৬-১৭ দিন শোকপ্রস্তাব নিয়ে কাজ মুলতুবি হয়েছে। বছরের পর পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের বাজেট গিলোটিনে গিয়েছে, স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এক বার। এ বার রাজ্যপালের ভাষণ না থাকায় তার উপরে বিরোধীদের বিতর্কেরও সুযোগ নেই। মান্নানের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা, কর্মসংস্থানের বেহাল দশা বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমরা বলব কোথায়? বিরোধীদের অধিকার না দেওয়ার প্রতিবাদেই ভোট-অন-অ্যাকাউন্টের বক্তৃতা বয়কট করছি দু’পক্ষই। তবে তার উপরে যে বিতর্ক হবে, তাতে আমরা অংশগ্রহণ করে যতটুকু পারব, বক্তব্য জানাব।’’ অধিবেশনের আগে আজ, বুধবার বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠকেও যাচ্ছে না দুই বিরোধী পক্ষ।
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় উদাহরণ দিয়েছিলেন, ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ছাড়াই সংসদের অধিবেশন বসেছিল। মান্নান এ দিন পাল্টা বলেছেন, ‘‘সে বার ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ে ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছিল। এখন এখানে কীসের বাধ্যবাধকতা? কেন ছল-চাতুরী করে একটাই অধিবেশন মুলতুবি রেখে এত দিন ধরে টেনে যাওয়া হচ্ছে? রাজ্যপাল তো সরকারের বক্তব্যই বলতে বাধ্য। কিন্তু আমরা বিতর্কের সুযোগ পেলাম না।’’
পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় অবশ্য বলেন, ‘‘এমন বিতর্ক অর্থহীন। বিধানসভায় যা যা হয়েছে, সব কিছুই রীতি-নীতি মেনে সর্বদল বা বি এ কমিটির বৈঠকে আলোচনা করেই হয়েছে। সেখানে বিরোধীরাও ছিলেন। আশা করব, কেন্দ্রের জনবিরোধী বাজেট এবং রাজ্যের বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিধানসভায় তাঁরা সরব হবেন।’’ বিরোধী নেতাদের যদিও অভিযোগ, বি এ কমিটিতে তাঁদের দাবি মানা হয় না।
মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সুজনবাবু এ দিনই ১০০ দিনের কাজ, গণবণ্টন ব্যবস্থা, আইসিডিএস, প্রাথমিক শিক্ষার মতো জনকল্যাণমূলক কাজে সামাজিক নিরীক্ষণ (সোশ্যাল অডিট)করতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক নিরীক্ষণ না হওয়ায় গ্রামীণ সম্পদ কর্মীরা (ভিআরপি) ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কাজই পাননি। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘বিষয়টি রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপরে নির্ভরশীল। তাই মুখ্যমন্ত্রীকেই জানাচ্ছি। সোশ্যাল অডিট বন্ধ, আমপান-ত্রাণে হাইকোর্ট সিএজি-র পরীক্ষার নির্দেশ দিলে উচ্চ আদালতে যাচ্ছে সরকার। এতে বোঝা যায়, দুর্নীতি, পুকুরচুরি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় আছে সরকারের!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy