Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Congress

যাব কি যাব না, নানা মতে রাম-দ্বন্দ্ব কংগ্রেসে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে অযোধ্যার রাম মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হবে আগামী ২২ জানুয়ারি। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী, সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও লোকসভায় দলের নেতা অধীর চৌধুরী।

congress.

—প্রতীকী ছবি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:২১
Share: Save:

হ্যামলেটের মতোই সেই আদি, অকৃত্রিম দ্বিধা! ‘টু বি অর নট টু বি’!

অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সেখানে যাওয়া হবে কি না, এই নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কংগ্রেস। দলীয় সূত্রে বলা হয়েছে, যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির কৌশল মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সাত-পাঁচ ভাবছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সেই ভাবনার মাঝেই দলের ভিতরে ও বাইরে চাপ বেড়ে চলছে ক্রমাগত!

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে অযোধ্যার রাম মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হবে আগামী ২২ জানুয়ারি। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী, সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও লোকসভায় দলের নেতা অধীর চৌধুরী। অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকলে বিজেপি যেমন তাদের রাম মন্দির-বিরোধী বলে প্রচার চালাতে পারে, এই ভাবনা কংগ্রেস নেতৃত্বের রয়েছে, তেমনই সংখ্যালঘু সমর্থনের কথা বলে তাঁদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন বাংলা, কেরলের মতো রাজ্য নেতৃত্ব। কেরলের নেতারা আবার একই সঙ্গে একাধিক মত জানিয়ে বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়েছেন এআইসিসি-র! সব মিলিয়ে ভাল রকম দোটানায় কংগ্রেস।

লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর বহরমপুরের সাংসদ। নিজে সব সময়েই মুর্শিদাবাদের রাজনীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। সেই মুর্শিদাবাদ জেলা সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত। গত বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে এমনিতেই বহরমপুরে পিছিয়ে আছেন কংগ্রেস সাংসদ। এখন লোকসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরকে যদি আমন্ত্রণ রক্ষা করতে অযোধ্যায় হাজির থাকতে হয়, তা হলে মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘু মনে তার প্রভাব পড়তে পারে এবং ভোটে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা বাংলার কংগ্রেস নেতাদের একাংশের। তাঁরা চাইছেন, কোনও ভাবেই প্রদেশ সভাপতি যেন অযোধ্যার ধর্মীয় বাতাবরণের অংশীদার না হন।

সিপিএম পত্রপাঠ জানিয়ে দিয়েছে, ধর্মীয় আবেগকে রাজনীতির হাতিয়ার করে সাংবিধানিক ব্যক্তিত্বেরাও যে মঞ্চে শামিল হবেন, সেখানে তারা কোনও ভাবেই যাবে না। বাংলায় বামেরা এখনও কংগ্রেসের সহযোদ্ধা এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোটেরও শরিক। তার ফলে চাপ আরও বাড়ছে কংগ্রেসের উপরে। এই প্রশ্নে অধীর অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাকেও নেমন্তন্ন করেছে। যদি দল সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা তখন সব স্পষ্ট করে বলে দেব।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সংযোজন, ‘‘তবে একটা কথা অবশ্যই বলতে পারি, এটা আর শুধু ধর্মীয় বিষয় নেই। বিজেপি এটা নিয়ে রাজনীতি করছে।। আমরা বলছি, রামকে প্রভু হিসেবে থাকতে দাও। রাম কা নাম বদনাম না করো!’’

লোকসভায় অধীরের সতীর্থ শশী তারুর আবার মন্তব্য করেছেন, ‘‘সিপিএম নাস্তিকের দল। ওরা চট করে বলে দিতে পারে যে, যাবে না! আমাদের দলে বহু ধারার সমন্বয়, সেখানে অনেক ভেবে-চিন্তে দেখতে হবে।’’ কেরল থেকেই কংগ্রেসের আর এক সাংসদ কে মুরলীধরন অন্য দিকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, রাম মন্দিরের অনুষ্ঠানে যেন না যাওয়া হয়। তাতে কেরলের খ্রিস্টান, মুসলিম-সহ অনেকের কাছেই ভুল বার্তা যাবে। মুরলীধরনের আর্জির প্রেক্ষিতে কেরল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, কট্টরপন্থী বলে পরিচিত কে সুধাকরন বলেছেন, রাজ্য নেতাদের এই বিষয়ে মত দেওয়ারই দরকার নেই! এআইসিসি-ই যা করার, করবে।

এমন পরিস্থিতিতে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও পলিটব্যুরো সদস্য এম ভি গোবিন্দন কটাক্ষ করেছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত নিতে এত ভাবতে হবে কেন? তিন রাজ্যে পরাজয়ের পরেও কংগ্রেস বুঝছে না যে, বিজেপির কড়া হিন্দুত্বের রাজনীতিকে নরম হিন্দুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করা যায় না?’’ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের ভি ডি সতীশন আবার পাল্টা দিয়েছেন, সিপিএম প্যালেস্টাইন বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো রাম মন্দির ঘিরেও রাজনৈতিক কৌশল নিচ্ছে!

আমন্ত্রণের জেরেই এমন দ্বন্দ্ব-বিভাজন দেখে হাসি চওড়া হচ্ছে মোদী, জগৎ প্রকাশ নড্ডাদের! বছর শেষে নড্ডা গিয়েছেন কেরলেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Ayodhya Ram Mandir Ayodhya Ram Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy