সাংবাদিক বৈঠকে আব্দুল মান্নান ও সুজন চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র
কংগ্রেস-বামের যৌথ আক্রমণের মুখে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে বিরোধী দলগুলির বৈঠকে তিনি যাবেন না— আজই ঘোষণা করেছেন। ধর্মঘটের নামে ‘গুন্ডামি’ হয়েছে, বাম-কংগ্রেস হাত মিলিয়ে ‘নোংরামি’ করছে— এ ভাবেই তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই বিধানসভা চত্বরে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘বিজেপির হয়ে কাজ’ করার অভিযোগ তুললেন আব্দুল মান্নান এবং সুজন চক্রবর্তী। ‘দিল্লির বসেদের কাছ থেকে বকা খেয়ে’ বাম-কংগ্রেসকে আক্রমণ করছেন মমতা। কটাক্ষ সিপিএমের।
বুধবারের ধর্মঘট নিয়ে এ দিন বিধানসভাতেই মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস এবং বামেদের বিরুদ্ধে ‘নোংরামি’ করার অভিযোগ তোলেন তিনি। বুধবারই তিনি এই ধর্মঘটকে আক্রমণ করে বলেছিলেন যে, গুন্ডামি বরদাস্ত করবেন না। তার পরে আজ বিধানসভায় আরও বিরক্তি উগরে দিয়ে তিনি জানান, দিল্লিতে ১৩ জানুয়ারি কংগ্রেসের ডাকে বিরোধী দলগুলির যে বৈঠক হওয়ার কথা, সেখানে তিনি যোগ দেবেন না। বামেদের সঙ্গে মিলে কংগ্রেস যে ভাবে বুধবার অর্থাৎ গতকাল বাস পুড়িয়েছে-আগুন লাগিয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই তিনি কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না, জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিধানসভা থেকে বেরিয়ে এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে যান মধ্যমগ্রামে সিএএ-এনআরসি বিরোধী সভায় ভাষণ দিতে। সেই সভা শেষে মধ্যমগ্রাম চৌমাথা থেকে মিছিল করে তিনি যান বারাসত। সেখানে যাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করেন। মুখ্যমন্ত্রী যখন মধ্যমগ্রাম থেকে বারসতের পথে, তখনই বিধানসভা চত্বরে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁকে আক্রমণ করেন মান্নান-সুজন। বিজেপির বি-টিম হয়ে তৃণমূল কাজ করছে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা চাঁপদানির কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল মান্নান এ দিন অভিযোগ করেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা তিনি বিধানসভার ভিতরেই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বলতে দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তাঁকে বলতে বাধা দিয়েছেন বলে মান্নান জানান। দিল্লির বৈঠকে মমতার না যাওয়ার ঘোষণা সম্পর্কে মান্নান বলেন, ‘‘ওঁর জন্য দিল্লির বৈঠক আটকাবে না।’’ কিন্তু দেশ জুড়ে চলতে থাকা সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ যে ভাবে হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে ১৩ জানুয়ারির বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি গোটা বিরোধী শিবিরকেই যে অস্বস্তিতে ফেলবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে সংশয় কমই।
কংগ্রেসকে মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণ প্রসঙ্গে মান্নান প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কী নোংরামিটা করলাম আমরা?’’ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ধর্মঘট চান না বলে ধর্মঘট হবে না, এটা হতে পারে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। মান্নানের কথায়, ‘‘গোটা ভারতে বন্ধ ডাকছি। আর তোমার জন্য এখানে বন্ধ করব না! তোমার বলে দেওয়া কায়দায় আমরা বিজেপির বিরোধিতা করব?’’
বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ধর্মঘট সফল হওয়ার পরে সম্ভবত দিল্লির বসদের কাছে উনি (মমতা) বকা খেয়েছেন।’’ পশ্চিমবঙ্গে কেন বন্ধ সফল হল? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘দিল্লির বসরা’ এই প্রশ্নই করেছেন আর সেই বকা খেয়েই তিনি বিরোধী দলগুলির বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন— তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে এমনই বলেছেন সুজন।
‘দিল্লির বস’ বলে কাদের দিকে ইঙ্গিত করছেন? সুজন সরাসরি জানান, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে ইঙ্গিত করছেন। তার পরে বলেন, ‘‘ওঁদের দিল্লির বস কারা, ওঁরাই জানিয়ে দিন। জানাতে পারছেন না কেন? রাজীব কুমারের জামিনটা হওয়ার আগে কাদের সঙ্গে বৈঠক করতে হয়েছিল? দিল্লির বসদের সঙ্গে।’’
১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন পশ্চিমবঙ্গে। বাম-কংগ্রেস যে প্রধানমন্ত্রীকেও বিক্ষোভের মুখে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা-ও সুজন এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আসবেন, অথচ বাংলার মানুষ বিক্ষোভ দেখাবেন না, তা হয় নাকি!’’ মোদীর উদ্দেশে সুজনের হুঁশিয়ারি, ‘‘কলকাতায় এলে প্রধানমন্ত্রী বুঝবেন, কলকাতা মানে কী!’’ সে প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও খোঁচা দিয়েছেন যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অসমে বিজেপির সরকার থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী এখন অসমে যাওয়ার সাহস দেখালেন না। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সরকার। প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে আসার সাহস পাচ্ছেন কী করে?’’
মান্নান দাবি করেছেন, মমতা ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছেন, আসলে বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল না করলে বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ ভোট তিনি হারাবেন, সেই ভয়েই মিছিল করছেন, কিন্তু আসলে বিজেপির বিরোধিতা করছেন না— দাবি বিরোধী দলনেতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy