শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র
সৌগত রায় বলেছেন, সমস্যা মিটে গিয়েছে, তৃণমূলেই থাকছেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু শুভেন্দু নিজে এখনও চুপচাপ। কোনও কোনও সূত্র বলছে, সব মিটে গিয়েছে বলে সৌগত রায় প্রকাশ্যে যা বলছেন, তাতে অসন্তুষ্ট নন্দীগ্রামের বিধায়ক। যদিও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি তিনি। ফলে তাঁর অবস্থান বুঝতে জল মাপছেন পূর্ব মেদিনীপুরের নেতারা। শুভেন্দু অনুগামী এবং তাঁর বিরোধী— সাবধানী উভয় পক্ষই। কারও অভিব্যক্তিতে বিরক্তি। বিভ্রান্ত অনেকেই। কিন্তু সর্বোপরি শুভেন্দুর মুখ খোলার অপেক্ষায় সব পক্ষই।
মঙ্গলবারই শুভেন্দুর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হয়েছে সৌগত রায় ও প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতিতে। খোদ দলনেত্রী শুভেন্দুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তার পরেই বরফ গলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল। বুধবার সকালে আরও স্পষ্ট করে সৌগত রায় জানিয়ে দিয়েছেন, শুভেন্দু তৃণমূলেই থাকছেন। আর শুভেন্দুর মুখ না-খোলা নিয়ে তাঁর দাবি, দু’-এক দিনের মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা শুভেন্দুর।
তবু দলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্ব এখনও পুরোপুরি আশ্বস্ত নন। এখনও জল্পনা, সন্দেহের আবহ কাটেনি। শুভেন্দু নিজে মুখে না-বলা পর্যন্ত তাঁর অনুগামী এবং বিরোধী— দু’পক্ষই ভারসাম্যের রাস্তায় হাঁটছেন। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত নন্দীগ্রামের নেতা তথা নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের যেমন মনে করছেন, সমস্যা এখনও কাটেনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সমস্যা মিটে গেলে জেলার নেতৃত্বকে একজোট করতে সময় লাগবে না শুভেন্দুর। সব কিছু তো গোছানো আছেই। হাতে সময়ও যথেষ্ট রয়েছে। দাদা (শুভেন্দু) একদিন মাঠে নামলেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’ শুভেন্দুর অন্য এক ঘনিষ্ঠ নেতা তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কণিষ্ক পণ্ডা বলেন, ‘‘শুভেন্দুর তরফে কোনও বার্তা না আসা পর্যন্ত পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কিছু বলা যাবে না।’’
আরও পড়ুন: তৃণমূলেই থাকছেন শুভেন্দু, অভিষেকের সঙ্গে বসেই কাটল জট, বলছেন সৌগত
শুভেন্দু বিরোধী শিবিরও সাবধানী। যদিও মুখে বিষয়টি তেমন পাত্তা দিতে নারাজ তাঁরা। রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক, অখিল গিরি বলেছেন, ‘‘দলের কাজ যেমন চলছিল, তেমনই চলছে। দিদিকে দেখে আমরা দল করি। নিজেদের প্রয়োজন নিয়ে কখনও দলে দর কষাকষি করিনি।’’ তা হলে কি শুভেন্দু সেটাই করছেন? সে প্রশ্নে নীরব থেকে অখিলের বক্তব্য, ‘‘দলের উপর তলার নির্দেশ যেমন আসবে তেমন ভাবেই কাজ চালিয়ে যাব।’’ জমি আন্দোলনের আর এক নেতা বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুপিয়ানের বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দু নিজে মুখে কিছু না বলা পর্যন্ত ওঁর অবস্থান স্পষ্ট নয়। ওঁর নিজের মুখ থেকে না শোনা পর্যন্ত কিছু বিশ্বাস করবেন না। উনি নিজেই নিজের সম্মানহানি করেছেন।’’
আরও পড়ুন: ফাইজার ফার্স্ট, বিশ্বে প্রথম কোভিড টিকাকরণ শুরু হচ্ছে ব্রিটেনে
শুভেন্দুকে ঘিরে দু’ভাগ শিল্পাঞ্চলও? শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হলদিয়ার তৃণমূল নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ট্রেড ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার এ নিয়ে মন্তব্যই করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে লক্ষণ শেঠের আমলে শ্রমিকদের বাক স্বাধীনতা ছিল না। আগে শ্রমিকদের থেকে বাধ্যতামূলক চাঁদা নেওয়া হত, এখন নেওয়া হয় না।’’ অন্য দিকে শুভেন্দু-বিরোধী বলে পরিচিত হলদিয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বর্তমান কাউন্সিলর দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলা বা রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কোনও নির্দেশ আসেনি। আমরাও সরাসরি কোনও খবর পাইনি। শুভেন্দু নিজে বিবৃতি দিলে পরিষ্কার হত।’’
শুভেন্দুর কাঁথির বাড়ি শান্তিকুঞ্জেও তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। গেটের ভিতরে অনেকগুলি গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বাইরে এক জন বন্দুকধারী পুলিশ থাকলেও বুধবার তাঁর দেখা মেলেনি। আগামিকাল বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় শুভেন্দু অনুগামীদের ৩ ডিসেম্বরের পূর্ব পরিকল্পিত মিছিলের সূচিতে কোনও বদল হয়নি। ক্ষুদিরাম বসুর ১৩১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিকেল ৩টে নাগাদ একটি মেগা শোভাযাত্রা করতে চলেছেন তাঁরা। যদিও মিছিলে শুভেন্দু নিজে থাকবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy