Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Central Investigation agency Vs Kolkata police

লাউডন স্ট্রিট থেকে ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বনাম লালবাজার সংঘাত জারি

২০১৯ সালে রাজীব কুমারের সরকারি বাংলোয় পৌঁছে গিয়েছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সামনে কার্যত ব্যারিকেড গড়েছিল কলকাতা পুলিশ। এ বার ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ নিয়েও সংঘাতে লালবাজার।

Rajeev Kumar Abhishek Banerjee

(বাঁ দিকে) রাজীব কুমার। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ১৯:৩৩
Share: Save:

ব্যবধান চার বছরের। সে বার ছিল ঘোর বসন্ত। এ বার ভাদ্রের শরৎ। সাল বদলেছে, ঋতু বদলেছে। কিন্তু লালবাজারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সংঘাতের মেজাজ একই রকম রয়ে গিয়েছে। চার বছর আগে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। এ বার তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সংস্থা ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’। সে বার রাজীবের বাংলোয় পৌঁছে গিয়েছিল সিবিআই। তা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআই অফিসারদের থানায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের সেই রুখে দাঁড়ানো নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। এ বার অভিষেকের সংস্থায় ম্যারাথন তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের এক কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইডিকে ডেকেছে লালবাজার। যা নিয়ে নতুন করে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কী হয়েছিল চার বছর আগে?

২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কলকাতা পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার জাভেদ শামিম জানিয়েছিলেন, সিপি রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হচ্ছে। সিবিআই আধিকারিকেরা রাজীব কুমারকে খুঁজছেন, এই তথ্য ঠিক নয়। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজীবের লাউডন স্ট্রিটের বাংলোয় পৌঁছে গিয়েছিল সিবিআইয়ের দল। তার পর ৪৮ ঘণ্টা ধরে কার্যত টানটান নাটক চলেছিল। যাতে শুধু রাজনীতি নয়, আন্দোলিত হয়েছিল রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনও।

রাজীবের বাড়িতে সিবিআইয়ের টিম ঢোকার আগেই আটকে দিয়েছিল পুলিশ। তার পর লালবাজারের বিরাট বাহিনী সেখানে পৌঁছলে পরিস্থিতি আরও তপ্ত হয়। পুলিশ কমিশনারের বাংলোর গেটের বাইরে সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে চাপানউতর চলে পুলিশের। তার পর সিবিআইয়ের টিমকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শেক্‌সপিয়র সরণি থানায়।

এই সংঘাতের আবহেই রাজীবের বাংলোয় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর সেখান থেকে সোজা মেট্রো চ্যানেলে গিয়ে ধর্নায় বসে পড়েন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সেটাই তাঁর প্রথম ধর্না কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচিতে মমতার পাশে রাজীব কুমার তো বটেই, হাজির ছিলেন তৎকালীন রাজ্য পুলিশের ডিজি সি বীরেন্দ্র, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থও। তবে বেশ কয়েক জন আমলার ধর্নামঞ্চে না যাওয়া নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরেও আলোড়ন পড়ে যায়।

৩ ফেব্রুয়ারি রাতভর মেট্রো চ্যানেলে ধর্না চলে মমতার। পরের দিন এক দিকে কলকাতায় ধর্না জারি রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, রাজীব মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টে। ৫ ফেব্রুয়ারি ধর্নামঞ্চের পিছনে মন্ত্রিসভার বৈঠকও করেছিলেন মমতা। দুপুরের পর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, রাজীবকে কলকাতা, দিল্লি বাদ দিয়ে তৃতীয় কোনও জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই। ওই দিন দুপুরের পর ধর্না তোলেন মমতা। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে সারদা মামলায় মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল রাজীবকে। সেখানে রাজীবের মুখোমুখি বসানো হয়েছিল বর্তমানে তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষকেও।

২০১৯ ও ২০২৩-এর ঘটনাক্রম।

২০১৯ ও ২০২৩-এর ঘটনাক্রম। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কী হচ্ছে চার বছর পর?

এ বার ইডির সঙ্গে সংঘাত বেধেছে কলকাতা পুলিশের। গত ২১ অগস্ট লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিস-সহ একাধিক জায়গেয় তল্লাশি চালায় ইডি। ঠিক তার আগের দিনই চোখের চিকিৎসা করিয়ে আমেরিকা থেকে কলকাতায় ফিরেছিলেন অভিষেক। ওই তল্লাশি অভিযান নিয়ে ২২ অগস্ট পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মঞ্চ থেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে রোজই ওরা অত্যাচার করছে। কালকেও সারা রাত… আমাকে কেউ বলেনি। আমি আইনজীবীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি। ছেলেটা পরশু দিন ফিরেছে। হঠাৎ করে চলে গেছে তার চার-পাঁচটা জায়গায়। সকাল ছ’টায় খবর পেলাম বাবুরা বেরিয়েছে।’’

সোমবার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভা থেকে ইডি-র অভিযান নিয়ে তোপ দেগেছিলেন অভিষেকও। তিনি বলেন, “আমি যে দিন এসেছি, পরের দিন পাঠিয়ে দিয়েছে ইডিকে তল্লাশি করতে! আমার অফিসে গিয়ে তল্লাশি করেছে। তার সঙ্গে ১৬টা ফাইল একটা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে দিয়ে চলে এসেছে।” তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ১৬টা ফাইল যদি আবার সিবিআই সাত দিন পরে তল্লাশি করে উদ্ধার করত, তবে এই সংবাদমাধ্যমেরাই চালাত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থার অফিস থেকে কলেজের লিস্ট উদ্ধার হয়েছে!”

কিন্তু এর মধ্যেই ইডির বিরুদ্ধে লালবাজারের সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ দায়ের করেছে লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের এক কর্মী। তার ভিত্তিতেই লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিস থেকে দু’টি কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করে লালবাজার। তার পর ২৬ অগস্ট ইডির কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে ইমেল করে কলকাতা পুলিশ। সে দিনই তাদের ব্যাখ্যা কলকাতা পুলিশকে জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২৮ অগস্ট লালবাজারের তরফে ফের ইডিকে জানানো হয়, কোনও আধিকারিককে সশরীরে এসে ব্যাখ্যা দিতে হবে। মঙ্গলবার পাল্টা ইডি জানিয়েছে, যা বলার ইমেলেই বলে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে কিছু বলার নেই।

এই সংঘাত নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সবাই জানে কী কারণে বার বার কলকাতা পুলিশকে ঢাল করা হচ্ছে। তবে সত্যকে কিছু সময়ে প্রতারিত করা যায়। কিন্তু তাকে কখনওই পরাস্ত করা যায় না।’’ সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘পুলিশের কাজ এখন হয়েছে চোরজোচ্চরদের সুরক্ষা দেওয়া। সেই মতোই তারা কাজ করছে।’’ পাল্টা শাসকদল তৃণমূলের নেতা তথা বিধানসভার উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে কেউ যদি অভিযোগ করেন তা হলে পুলিশ তো তদন্ত করবেই। আর রাজীব কুমার সেই সময়ে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। বিরোধীরা অপব্যাখ্যা করে গুলিয়ে দিতে চাইছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy