(বাঁ দিকে) নবান্ন সভাঘরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক।
আর জি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে হুমকি-প্রথার অভিযোগ ক্রমশ প্রকাশ্যে এসেছে। বিভিন্ন চিকিৎসা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যেই এই হুমকি-প্রথায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করছেন সংশ্লিষ্ট কলেজ কাউন্সিল। কিন্তু সেই পদক্ষেপে তিনি যে অসন্তুষ্ট, সোমবার নবান্নে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে তা কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এমনকি, আর জি করের অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সরাসরি জানতে চাইলেন, কার অনুমতি নিয়ে তিনি ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করেছেন? আরও বললেন, ‘‘আপনি আমাদের তো বিষয়টি জানাননি। সোজা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এটা কি থ্রেট কালচার নয়?’’ যদিও সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন ওই মেডিক্যালের জুনিয়র চিকিৎসক তথা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অনিকেত মাহাতো। এমনকি, অনিকেত সরাসরি বলেন, ‘‘যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তারা এক-এক জন কুখ্যাত দুষ্কৃতী। আমরা তাদের সমর্থন করতে পারি না। স্যার (অধ্যক্ষ) তদন্ত করেই ব্যবস্থা নিয়েছেন।’’ সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী অনিকেতকে থামানোর চেষ্টা করলেও, তিনি থামেননি। বরং বলেন, ‘‘ম্যাডাম, আমরা ক্রিমিনালের পক্ষে যাব, না ধর্ষকের পক্ষ নেব?’’ মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, তিনি কারও পক্ষে নন। তখন অনিকেত ফের বলেন, ‘‘প্রয়োজনে আপনি তদন্ত করে দেখুন। তার পরে অভিযুক্তদের কলেজে ফিরিয়ে আনুন।’’ সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তুমি প্রশাসনে নাক গলাতে পারো না।’’ অনিকেতও পাল্টা জানান, তিনি কোনও ভাবেই প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করছেন না। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষকেই তাঁরা অভিভাবক বলে মনে করেন। তাই, অভিযোগ তাঁর কাছে যেমন জানাবেন, তেমনি সেখান থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ আশা করেন।
এ দিন আর জি করের প্রসঙ্গে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল’ বা ‘কলেজ কাউন্সিল’ কী ভাবে গঠিত হয়, তা স্বাস্থ্যসচিবের থেকে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, সুপার ও বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে সেই কাউন্সিল গঠন হয়— স্বাস্থ্যসচিবের এই উত্তরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কি কখনও বিষয়টি জানানো হয়েছে? সরকারকে এটা জানানো কি কর্তব্য নয়?’’ চিকিৎসক মহলের মতে, এহেন মন্তব্যের মাধ্যমে এত দিন ধরে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে হুমকি প্রথায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা কার্যত নস্যাৎ করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার কারণে আর জি করে আশিস পাণ্ডে ও অন্যত্র অভীক দে-র মতো জুনিয়র চিকিৎসকেরা যে হুমকির পরিবেশ তৈরি করেছিল, তা নিয়ে বৈঠকের গোড়াতেই আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলতে শুরু করেন। তাঁকে থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা এখানে নেই, তাদের নাম নিয়ে কথা না বলাই ভাল।” দেবাশিস বলেন, ‘অভিযোগ হিসেবে বলতে পারি কি?’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, অভিযোগ অনেকের বিরুদ্ধেই আছে। তাই সে সব বলে লাভ নেই। অন্য দিকে, আর জি করে ৪৭ জন (যদিও মতান্তরে সংখ্যাটি ৫৯)-কে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে বিশদে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। অনিকেত বলেন, “কলেজ কাউন্সিল তদন্ত কমিটি গড়েছিল।” এর পরেই ওই তদন্ত কমিটি তথা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের গ্রিভান্স রিড্রেসাল কমিটির সদস্য চিকিৎসক দেবব্রত দাস জানান, সমস্ত তথ্য পরীক্ষা করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের নিয়ম মেনেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু মমতা বলেন, “সরকার বলে একটা ব্যাপার আছে। আপনারা নিজেরা সবটা করবেন না।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “অধ্যক্ষদের অনুরোধ করব, এ বার থেকে এমন অভিযোগ উঠলে আমাদের জানাবেন। আমরা তদন্ত করে দেখব। আমি কারও কেরিয়ার নষ্ট করতে চাই না।” যদিও চিকিৎসক মহল জানাচ্ছে, কলেজ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সরকারকে জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই। জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী কলেজের র্যাগিংবিরোধী কমিটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তদন্ত কমিটি গঠন করে তাঁদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে তবেই অধ্যক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান আন্দোলনের অন্যতম নেতা কিঞ্জল নন্দ। তিনি বলেন, “আর জি করের আগের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হত। কারণ, বাইরে আটকে দিত হুমকির প্রথায় অভিযুক্তরাই।” কেন, সরকারকে জানানো হয়নি, প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিঞ্জল বলেন, “বহু বার জানানো হয়েছে। কিন্তু কিছু হয়নি। এত বার হুমকি প্রথার বিরুদ্ধে বলছি, কারণ প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে যেন ভয়ের পরিবেশ আর না থাকে।” তখন মুখ্যমন্ত্রীও বলেন, “আমি কিঞ্জলের সঙ্গে একমত। পরিবেশ ভয়মুক্ত রাখতে হবে।”
যদিও হুমকি-প্রথার অভিযোগকে এ দিন বিশেষ আমল দেননি মুখ্যমন্ত্রী। বদলে তিনি বলেন, “কেউ কাউকে থ্রেট (হুমকি) করবে না। আজ আমি ক্ষমতায় বলে থ্রেট করব, কাল তুমি থ্রেট করবে— এটা ঠিক নয়।” পরে অনশনমঞ্চে এসে দেবাশিস বলেন, “আজ সরাসরি সম্প্রচারে রাজ্যবাসী দেখলেন, বার বার হুমকি-প্রথার কথা বলা হলেও কার্যত আমাদের চুপ করিয়ে দেওয়া হল। উল্টে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যক্ষদের ধমকির সুরে জানালেন, কেন সাসপেনশনের বিষয় তাঁদের জানানো হয়নি?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy