Advertisement
E-Paper

মেলে না পরিষেবা, মেটিয়াবুরুজ হাসপাতাল যেন ‘নেই-রাজ্য’

দশকের পর দশক গড়িয়েছে। রাজ্যের সরকার পরিবর্তনের পরেও কেটে গিয়েছে এক দশকেরও বেশি। তার পরেও গার্ডেনরিচ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পরিষেবার বেহাল দশার কোনও বদল হয়নি বলে অভিযোগ।

বেহাল: পাঁকে বুজে গিয়েছে হাসপাতালের ভিতরের নর্দমা।

বেহাল: পাঁকে বুজে গিয়েছে হাসপাতালের ভিতরের নর্দমা। —নিজস্ব চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২৭
Share
Save

নামেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। কিন্তু পরিষেবায় কার্যত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছেও ‘গোল’ খাবে! বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি বহুতল ভবন থাকলেও সেখানে নিয়মিত না থাকেন চিকিৎসক, না মেলে যথাযথ অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা। হাসপাতালের ভিতরের অব্যবস্থাও চরম। কোথাও সিলিং থেকে চাঙড় খসে পড়ছে, কোথাও আবার রোগী দেখার জায়গার পাশেই ঘর ভর্তি আবর্জনা ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে।

দশকের পর দশক গড়িয়েছে। রাজ্যের সরকার পরিবর্তনের পরেও কেটে গিয়েছে এক দশকেরও বেশি। তার পরেও গার্ডেনরিচ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পরিষেবার এ হেন বেহাল দশার কোনও বদল হয়নি বলে অভিযোগ। বর্তমান শাসকদল ক্ষমতায় আসার পরে হাসপাতাল চত্বরে ঢাকঢোল পিটিয়ে নতুন ভবন তৈরি করে ২০১২ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল মেটিয়াবুরুজ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। কিন্তু সাজগোজ বাড়লেও হাসপাতালের পরিষেবা রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। ফলে নিত্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এই হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ, মহেশতলার প্রায় ৪০ লক্ষ বাসিন্দা। হাসপাতালের সুপার কৌশিক রায় যদিও বেহাল পরিষেবার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘সব কিছু ঠিক আছে। যা যা পরিষেবা দেওয়ার কথা, তার সবই দেওয়া হচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করতেই পারেন। কিন্তু বাস্তবে তার কোনও সত্যতা নেই। সবই মনগড়া।’’

কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানতে না চাইলেও হাসপাতাল চত্বর ঘুরে অবশ্য তার সপক্ষে ‘যুক্তি’-র বিশেষ দেখা মিলছে না। বরং ভুক্তভোগীদের অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, তারও প্রমাণ মিলল। সম্প্রতি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢোকার সামনেই দেখা গেল, বিস্তীর্ণ অংশে
জল জমে রয়েছে। একটু দূরে ডাঁই হয়ে পড়ে থাকা আবর্জনায় মাছি উড়ছে। দুর্গন্ধে টেকা দায়। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে ওই অংশটুকু কোনওরকমে পেরিয়ে, জরুরি বিভাগের
সামনে দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠেই দেখা গেল বাতিল সামগ্রীর স্তূপ। দোতলায় চক্ষু বিভাগে যত্রতত্র সিলিং থেকে চাঙড় খসে পড়ার মতো অবস্থা। ভিতরে বৈদ্যুতিক তার জট পাকিয়ে রয়েছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের অভিযোগ, বৃষ্টি হলেই এই অংশ দিয়ে জল পড়ে অবস্থা এমন হয় যে, চলাফেলা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

শুধু পরিকাঠামোই নয়। হাসপাতালে বহির্বিভাগের পরিষেবা মোটামুটি মিললেও বাকি পরিষেবা ঠিক মতো মেলে না বলেও অভিযোগ। মাসকয়েক আগেও এই হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে অস্ত্রোপচার হত। কিন্তু ইদানিং তা-ও বন্ধ। রোগী দেখা হলেও অস্ত্রোপচারের জন্য মাসে এক বার রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে তরফেই। কোনও রকম পরীক্ষার সুবিধাও এই হাসপাতালে মেলে না বলে অভিযোগ। নিয়মিত সব বিভাগের চিকিৎসকও থাকেন না। কার্যত ‘রেফার’ রোগে আক্রান্ত এই হাসপাতাল। হাসপাতাল চত্বরে ঘোরাঘুরি করা হাসিবুদ্দিন মোল্লার অভিযোগ, কয়েক দিন ধরে ঘুরেও প্রতিষেধক মিলছে না। তাঁর কথায়, ‘‘বিড়ালে কামড়ানোয় রাতেই হাসপাতালে এসেছিলাম। সে দিন হাসপাতাল থেকে বলা হল, পরের দিন সকাল ১০টায় এসে প্রতিষেধক নিয়ে যেতে। কিন্তু তার পর থেকে কয়েক দিন হাসপাতালে ঘুরেই যাচ্ছি, প্রতিষেধক আর মিলল না।’’

হাসপাতালের পরিষেবার এই হাল নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। গার্ডেনরিচ নাগরিক পরিষদের তরফে হাসপাতালের দুরবস্থার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে একাধিক বার। তার পরেও অবস্থা বদলায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা সুজাবুদ্দিনের কথায়, ‘‘শুধু রং-চংই হয়েছে। কিন্তু পরিষেবার হাল এমন যে, রাতে কারও কিছু হলে এই হাসপাতালের উপরে নির্ভর করে থাকা যায় না। ঘণ্টাখানেকের রাস্তা পেরিয়ে কলকাতার অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় রোগীকে।’’ গার্ডেনরিচ নাগরিক পরিষদের সহ-সম্পাদক কুশল দেবনাথ বললেন, ‘‘গোটা হাসপাতাল যেন নেই-রাজ্য। কার্ডিয়োলজি, নেফ্রোলজি, নিউরোলজি-র মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কার্যত কোনও পরিষেবাই মেলে না। অথচ খাতায়-কলমে এখানে ৩৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন।’’ এই বিষয়ে কার্যনির্বাহী স্বাস্থ্য অধিকর্তা, চিকিৎসক স্বপন সোরেনের প্রতিক্রিয়া জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের
চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। টেক্সট মেসেজেরও কোনও উত্তর দেননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Metiabruz Hospital

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}