ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর মামলা। —ফাইল চিত্র।
আরও জটিল আকার নিতে চলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর মামলা। তাঁর বিরুদ্ধে যিনি বুধবার ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন, বৃহস্পতিবার ওই মামলায় তিনিই আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। বিচার ভবনের ২২ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারক জুঁই দত্তের কাছে গোপন জবানবন্দি দেন তিনি। অভিযোগ জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোপন জবানবন্দির এই ব্যবস্থায় পুলিশের ‘সক্রিয়তা’ নিয়ে সন্দেহ ও প্রশংসা, দুই-ই শোনা গিয়েছে।
এরই মধ্যে আরও জোরালো হয়েছে ‘রাজনৈতিক চক্রান্তে’র অভিযোগও। পঞ্চায়েত ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে যিনি আইএসএফ বিধায়কের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ্যে এসেছে। তিনি মুর্শিদাবাদের ডোমকল শহর তৃণমূলের সম্পাদিকা ছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দলের বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম থেকে ব্লক সভাপতি হাজিকুল ইসলামের পাশে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাঁর বাড়িও ডোমকলে। তৃণমূলের এক জন নেত্রীই নওসাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করায় মুখ খুলেছেন সাগরদিঘির সদ্য কংগ্রেস-ত্যাগী বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসও। নিজের কেন্দ্রে তৃণূমলের হয়ে পঞ্চায়েতের প্রচারের ফাঁকে এ দিন বাইরন বলেছেন, ‘‘রাজনীতিতে নোংরা ঘটনা জড়িয়ে ফেলে কাউকে অপদস্থ করা ঠিক নয়। তা হলে ভদ্র শিক্ষিত মানুষ তো রাজনীতিতে আসবে না। আমার বিরুদ্ধেও সেই চেষ্টা করা হয়েছে ভোটের সময়। আমি তা কাটিয়ে উঠেছি। রাজনীতিতে সুস্থ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রেখে চলা উচিত সকলের।’’
ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুলের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের তরফে যে কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছিল, তাতে উনি শহর তৃণমূলের সম্পাদিকা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। যে হেতু সেটা পুর এলাকা, ফলে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আমাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই।’’ বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহ রায় বলেন, ‘‘ও আমাদের দলের কেউ কিনা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ ষড়যন্ত্রের প্রশ্নে শাওনি বলেন, ‘‘মামলা হয়েছে। পুলিশ নিশ্চয়ই তদন্ত করে দেখবে।’’
নওসাদের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগে বুধবার অভিযোগকারিণী প্রথমে গিয়েছিলেন নিউটাউন থানায়। পরে অভিযোগ জমা দেওয়া হয় কলকাতার বৌবাজার থানায়। এর ভিত্তিতে নওসাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করে পুলিশ। অভিযোগকারিণী মহিলার আইনজীবী রীনা খাতুন জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটে নাগাদ গোপন জবানবন্দির প্রক্রিয়া শুরু হয়। চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। বুধবার রাতে অভিযোগকারিণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন রীনা।
ঠিক পঞ্চায়েত ভোটের আগেই ভাঙড়ের বিধায়কের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং আইএসএফ-এর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা অব্যাহত। অভিযোগকারিণী মহিলার সঙ্গে ভাঙড়ে পঞ্চায়েত ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত নিউটাউন থানায় যাওয়ায় বিতর্ক আরও ডালপালা মেলেছে। জবানবন্দি দিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে এই গোটা বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি অভিযোগকারিণী মহিলা। তাঁর আইনজীবী রীনা বলেন, "এই বিষয়ে সময় মতো সংবাদমাধ্যমের সামনে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।’’
নওসাদ আগেই দাবি করেছেন, রাজনীতির আঙিনায় তাঁর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে এমন ‘চক্রান্ত’ করা হচ্ছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ দিনও বলেছেন, ‘‘অভিযোগকারিণী তৃণমূলের। থানায় অভিযোগ করাতে নিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা। অভিযোগের সত্যাসত্য পরে জানা যাবে। কিন্তু বিষয়টা যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে সেই চাপ দিয়ে বাইরনকে দল বদলানোর মতো একই চিত্রনাট্য মনে হচ্ছে!’’ ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক সওকাত মোল্লা দাবি করেছেন, ‘‘এই রাজ্যে বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এই প্রথম। নওসাদকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত।’’ আর নওসাদ পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘আমার নামে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। এখন বিচারাধীন বিষয়। আইনজীবীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন আইনি পথে মোকাবিলার। বিচারব্যবস্থার প্রতি ভরসা আছে। আইনি ব্যবস্থাতেই আমি অভিযোগমুক্ত হব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy