প্রতীকী ছবি।
তাজিয়া আর লাঠি-তরোয়ালে নকল যুদ্ধ— মহরমের মিছিলে এমন দৃশ্যই চোখসওয়া। কিন্তু চিরাচরিত সেই প্রথার বাইরে বেরিয়ে নিরস্ত্র মিছিলের উদ্যোগও এ বার দেখা যাচ্ছে। বীরভূমের সিউড়ির পরে তেমনই তোড়জোড় শুরু হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে।
তমলুক শহর ও আশপাশের ৯টি মহরম কমিটি রবিবার বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ১ অক্টোবর, মহরমের দিন অস্ত্র ছাড়াই মিছিল হবে। জেলার সদর শহর তমলুকে লালদিঘির ইদগাহ মসজিদে তাম্রলিপ্ত পৌর মুসলিম নাগরিক কমিটি আহ্বানে এ দিন বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সামিল হয়েছিলেন শহরের ৬টি এবং শহর সংলগ্ন কুমোরগঞ্জ, সোনামুই ও শ্রীকৃষ্ণপুর মহরম কমিটির কর্মকর্তা, মসজিদের ইমাম ও বিদ্বজ্জনেরা। বৈঠকে নাগরিক কমিটির তরফে মহরম কমিটিগুলিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, মহরমের দিন অস্ত্র, লাঠি খেলা ছাড়াই ধর্মীয় রীতি মেনে শোক এবং শান্তি মিছিল করা হবে। প্রস্তাবে সায় দেন মহরম কমিটির কর্মকর্তারা। তারপরই সিদ্ধান্ত হয়, মহরম কমিটিগুলির তরফে ওই দিন অস্ত্র ছাড়াই মিছিল করা হবে।
মহরমের জন্য একাদশীতে দুর্গা বিসর্জন কেন বন্ধ থাকবে, তা নিয়ে বিতর্ক গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। হাইকোর্ট অবশ্য জানিয়েছে, বিসর্জন বন্ধ রাখা যাবে না। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। এই পরিস্থিতিতে সিউড়ি সদরের ১৬টির মধ্যে ১৫টি মহরম কমিটি ইতিমধ্যে অস্ত্র ছাড়া মহরমের মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই একই পথে অন্য রকম ভাবনার শরিক এ বার তমলুকও। কিন্তু কোন যুক্তিতে?
তাম্রলিপ্ত পৌর মুসলিম নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক তথা কাঠুড়িয়াপাড়া মসজিদ কমিটির সম্পাদক শেখ জিয়াদ জানালেন, মহরম হল শোক পালনের দিন। ধর্মীয় রীতি মেনে ওই দিন তাজিয়া-সহ শোক মিছিল করা হয়। তাতে অস্ত্র, লাঠি নিয়ে নকল যুদ্ধের রেওয়াজও রয়েছে, যার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় কারবালা যুদ্ধের কাহিনি। তবে শেখ জিয়াদের কথায়, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে তমলুক শহরে যে ভাবে মিছিল হচ্ছিল, তাতে মহরমের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছিল। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছিল।’’ সেই প্রবণতায় দাঁড়ি টানতেই এ বার নিরস্ত্র মিছিলের সিদ্ধান্ত।
এতে ধর্মীয় রীতি ভাঙা হবে না?
কাঠুরিয়া পাড়া মসজিদের ইমাম শেখ আসগরের ব্যাখ্যা, ‘‘মহরমের মিছিলে তরোয়াল ও লাঠি নিয়ে খেলা, বাজনা বাজানো আসলে ধর্মীয় রীতি বিরুদ্ধ। তাও এ সব প্রথা হিসেবে চলে আসছিল। ফলে, ধর্মীয় রীতি মেনেই মহরমে আমাদের নিরস্ত্র মিছিল হবে।’’
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে জেলা প্রশাসনও। জেলাশাসক রশ্মি তমল বলেন, ‘‘এটা খুব ভাল উদ্যোগ। সব ধর্মের মানুষ যাতে সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজস্ব রীতি-প্রথা পালন করে, আমরাও সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy