Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নেত্রীর নিশানায় নেতা, ক্লাব আর পুলিশও

আগেই তিনি নিশানা করেছিলেন সিন্ডিকেট-প্রোমোটারি থেকে দুর্নীতি, তোলাবাজি, অনিয়ম, জুলুমকে। রেয়াত করেননি নিজের দলের নেতাদের।

লোকশিল্পীদের আর্থিক সাহায্য মুখ্যমন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার চুঁচুড়ায় তাপস ঘোষের তোলা ছবি।

লোকশিল্পীদের আর্থিক সাহায্য মুখ্যমন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার চুঁচুড়ায় তাপস ঘোষের তোলা ছবি।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share: Save:

আগেই তিনি নিশানা করেছিলেন সিন্ডিকেট-প্রোমোটারি থেকে দুর্নীতি, তোলাবাজি, অনিয়ম, জুলুমকে। রেয়াত করেননি নিজের দলের নেতাদের।

এ বার ‘ওভারলোডেড’ লরি-ট্রাক থেকে তোলাবাজিকেও নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতে নেতাদের সঙ্গে অভিযুক্তদের তালিকায় ফেললেন

ক্লাব ও নিজেরই পুলিশকেও!

বৃহস্পতিবার চুঁচুড়ায় নবনির্মিত প্রশাসনিক ভবনে হুগলি জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে পূর্ত দফতরের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনার সময়ে হঠাৎই তেতে ওঠেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় নেতা, ক্লাব আর পুলিশের কোনও চামচা ৫০০ করে টাকা পাবে, আর রাস্তা ভেঙে আমার সরকারের ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতি হবে! এটা চলতে পারে না।’’ এরই সঙ্গে তাঁর দাওয়াই, ‘‘পুলিশ, পূর্ত দফতর এবং মোটর ভেহিক্যালস দফতর বসে ওভারলোডিং বন্ধ করুন। প্রয়োজনে রাস্তার তালিকা করে জরিমানা ধার্য করুন। অনেক হয়েছে আর নয়।’’

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়া থেকেই কোনও রকম দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না বলে বার্তা দিয়ে চলেছেন মমতা। এ বার রাজ্যে শিল্পের জন্য তাঁর সরকারের তৎপরতা যখন তুঙ্গে, তখন অনেক বেহাল রাস্তা যে সেই প্রচেষ্টায় বাদ সাধতে পারে, এ কথা প্রশাসনের কর্তারাও মানছেন। আর বেহাল রাস্তার জন্য তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই লরি-ট্রাকের ‘ওভারলোডিং’কে দায়ী করছেন।

লরি-ট্রাকে বাড়তি মাল বহন রুখতে গত বছরই রাজ্য তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সড়কগুলিতে নজরদারি শুরু করে। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে সেই নজরদারিতে শিথিলতা এসেছে বলে অভিযোগ। ওভারলোডিং ঠেকাতে সম্প্রতি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’প্রান্তে ‘ওয়েব্রিজ’ (যেখানে পণ্য-সহ গাড়ির ওজন মাপা হয়) বসায়। যে সব পণ্যবাহী গাড়ি নির্দিষ্ট ওজনের বেশি মাল পরিবহণ করবে তাদের জন্য জরিমানাও ধার্য হয়। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় ফল হয় উল্টো। জরিমানা ফাঁকি দিতে ‘রুট’ বদলাচ্ছে লরি-ট্রাক। তাতে লোকসান হচ্ছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। তারা রাজ্য পুলিশের ডিজি-র দ্বারস্থও হয়েছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কানেও পৌঁছেছে। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশ বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের অনেকে।

উপায় বাতলাতে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি সরকারি তিনটি দফতরের আধিকারিকদেরই জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসার পরামর্শ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাওয়াই, রাস্তা ধরে ধরে কোথায় কত ওজনের মাল পরিবহণ হতে পারে, তার তালিকা নির্দিষ্ট করতে হবে ওই সরকারি কর্তাদের। তার পরে এলাকাভিত্তিক তালিকা টাঙিয়ে দিতে হবে ও যাঁরা আইন ভাঙবেন, তাঁদের জরিমানা দিতে হবে সরকারের নির্দিষ্ট দফতরকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে লরি-ট্রাক থেকে তোলাবাজিতে নেতা, ক্লাব বা পুলিশের ‘চামচা’কে দুষেছেন, তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, পাগলেও হাসবে। উনি নিজেই পুলিশমন্ত্রী। আর ওভারলোডিংয়ের জন্য রাস্তা ভাঙার দায় পুলিশের ঘাড়েই চাপাচ্ছেন?’’ সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীও বলেন, ‘‘রাস্তা ভাঙার দায় তো ওঁরই। চেঁচামেচি করে উনি এটা বন্ধ করতে পারলে ভালই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

overloaded trucks mamata extortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE