মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
ভারত কি অবশেষে ইতিহাসের ডাকে সাড়া দিচ্ছে? পশ্চিমবঙ্গ কি শিল্পায়নের এবং বাস্তববোধের নতুন পাতায় সাক্ষর রাখছে? আলো কি ক্রমে আসিতেছে?
বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টাটা গোষ্ঠীর হাতে এয়ার ইন্ডিয়াকে তুলে দেওয়ার। সেই অধিগ্রহণকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘স্বাগত’ জানানোয় সেই ‘আলো’ দেখছে পশ্চিমবঙ্গ। যা বলছে, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের রাজনীতিকরা ‘বাস্তববাদী’ হয়েছেন। অতীতদিনের রাজনীতিকদের মতো তাঁরা অন্ধ বিরোধিতা করায় আর বিশ্বাসী নন।
যদিও সেই অতীতে এখনও পড়ে রয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। ফলে দিন দিন তাদের প্রাসঙ্গিকতা কমছে। দলগত ভাবে সিপিএম টাটাদের এয়ার ইন্ডিয়া অধিগ্রহণের বিরোধিতা করছে। কারণ, তারা সামগ্রিক ভাবে বেসকারিকরণের বিরোধী। বস্তুত, সিপিএমের শীর্ষনেতৃত্ব মনে করেন, এয়ার ইন্ডিয়াকে ‘জলের দরে’ টাটাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে একইসঙ্গে তাঁরা এমনও জানাচ্ছেন যে, দাম বাড়ালেও তাঁরা ওই অধিগ্রহণকে দলগত ভাবে সমর্থন করতেন না। কংগ্রেস ওই বিষয়ে কোনও অবস্থানই নেয়নি। ইদানীং কালের কংগ্রেসের মতোই। তারা প্রকাশ্যে টাটা-এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে সমর্থন বা বিরোধিতা— কিছুই করেনি। করতে চায়, এমনকিছু প্রয়াস দেখাও যায়নি। কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতা শুধু ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছিলেন, তাঁরা মনে করেন, এয়ার ইন্ডিয়া অনেক কম দামে টাটাদের হাতে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, এই বিষয়ে কংগ্রেস এবং সিপিএম উভয়েই এক মতামত পোষণ করে। যা ‘বাস্তবোচিত’ এবং ‘যুগোপযোগী’ নয় বলেই দু’টি দলই ক্রমশ প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। প্রতিদিন প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে টাটাদের স্বাগত জানানো মমতাকে ‘বাস্তববাদী এবং ভবিষ্যৎদ্রষ্টা’ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত করছে। ঠিক যেমন ‘বাস্তবসম্মত’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারও।
কেন্দ্রীয় সরকার টাটাদের হাতে এয়ার ইন্ডিয়া তুলে দেওয়ার পর ঘনিষ্ঠমহলে মমতা জানিয়েছিলেন, ওই বিষয়ে বিশদে সবকিছু খতিয়ে দেখার আগে তিনি কোনও মতামত দিতে চাইছেন না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং তৃণমূল যার ব্যাখ্যা করেছিল— মমতার সঙ্গে টাটাদের অতীত লড়াইয়ের ইতিহাস থাকার ফলেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ‘সাবধানী’। কিন্তু সোমবার মমতা বলেছেন, ‘‘টাটারা স্বাগত।’’ যদিও একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার টাটা গোষ্ঠীর হাতে এয়ার ইন্ডিয়া দিয়েছে। টাটারা স্বাগত। কিন্তু দেখতে হবে, কারও চাকরি যেন না যায়। চাকরি গেলে এঁরা খাবেন কী?’’
দ্বিতীয় বাক্যটি জনপ্রিয় রাজনীতিক মাত্রেই বলবেন। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মমতার প্রথম বাক্যটি। যেখানে তিনি টাটাদের ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিমান সংস্থায় স্থায়ী কর্মীদের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অস্থায়ী তথা চুক্তিভিত্তিক কর্মী কাজ করেন। এয়ার ইন্ডিয়ার হাতবদলের জেরে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় সেই সব চুক্তিভিত্তিক কর্মী। তাঁরাই মূলত মুখ্যমন্ত্রীকে এ বিষয়ে সরব হতে আবেদন জানিয়েছিলেন। ফলে টাটাদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশিই মমতা বলেন, ‘‘চুক্তির ভিত্তিতে যাদের নেওয়া হয়েছিল, তখন তুমি (কেন্দ্রীয় সরকার) তাদের নিয়েছিল কেন? আমার অনুরোধ, কারও যেন চাকরি না যায়। প্রত্যেক কর্মীর চাকরির নিশ্চয়তা দিক কেন্দ্র। তাঁদের চাকরি থাকলে আমরা টাটাকে স্বাগত জানাই।’’
অর্থাৎ, মমতাও সিঙ্গুরের দিন পেরিয়ে এসে ‘বাস্তববোধ’ এবং ‘পরিণতিবোধ’ দেখাচ্ছেন। বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তাঁর চরম রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারের বাস্তববাদী সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের চাকরি নিয়ে সাবধানবাণী শোনানো তাঁর রাজনীতির মধ্যেই পড়ে। জনপ্রিয় যে কোনও রাজনীতিকই তা বলবেন। কিন্তু তার পাশাপাশি ‘বাস্তব’ও মেনে নেবেন। মমতা সেটাই করেছেন।
যা দেখেশুনে মনে করা হচ্ছে, ভারত যেমন অবশেষে ইতিহাসের ডাকে সাড়া দিচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গও তেমনই শিল্পায়নের নতুন পাতায় সাক্ষর রাখছে। আলো ক্রমে আসিতেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy