বাঁকুড়ায় আদিবাসী দলীয় কর্মীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ অমিত শাহের। আদিবাসী বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাঁকুড়া সফরে এসে এক আদিবাসী পরিবারে দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন অমিত শাহ। সেই বাঁকুড়ার মাটিতে দাঁড়িয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই 'মধ্যাহ্নভোজ রাজনীতি'কে কটাক্ষ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘পাঁচতারা হোটেলের খাবার’ এনে লোক দেখাতে ওই বাড়িতে খেয়েছেন বলে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরসা মুন্ডার বলে একটি অন্য মূর্তিতে মালা দিয়ে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন শাহ। তাকে ‘অপমান’ বলে মন্তব্য করে বীরসা মুন্ডার জন্মদিনে রাজ্য সরকারের ছুটি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও দুই ইস্যুতেই পাল্টা কটাক্ষ করেছেন দিলীপ ঘোষ।
সোমবার বাঁকুড়ার খাতড়ায় সরকারি প্রকল্পের সুবিধা উপভোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কর্মসূচি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। ঘটনাচক্রে এ মাসের গোড়াতেই দু’দিনের জন্য রাজ্য সফরে এসে বাঁকুড়ায় একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন অমিত শাহ। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ৫ নভেম্বর চতুরডিহি গ্রামে বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ। সেই সময় রাজ্যের শাসক দলের অনেকেই শাহের ওই কর্মসূচিকে ‘লোক দেখানো’ বলে আক্রমণ করেছিলেন। সোমবার বাঁকুড়ার খাতড়ার সভা থেকে সেই সুরেই আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন লোক দেখানো? মমতার কথায়, ‘‘এখানে আসার আগে একটা তফসিলি গ্রামে গিয়েছিলাম আমি। সবার সাথে কথা হল। তাঁদের সমস্যার কথা শুনলাম। ওঁদের খাটিয়াতেই বসেছিলাম। কিন্তু এটা নয় যে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মতো পাঁচ তারা হোটেলের বাসমতি চালের রান্না খাবার এনে বসে খেলাম। আর তাঁর বাড়িতে রং করে, স্যানিটাইজ করে, টাকা দিয়ে বসে লোক দেখানো হল।’’ কটাক্ষের সুরে মমতা বলেন, ‘‘তফসিলি বোনেরা ছাড়াচ্ছে ধনেপাতা, আর উনি খাচ্ছেন পোস্তর বড়া।’’ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জবাবে বলেছেন, ‘‘ওঁদের আর আমাদের সংস্কৃতি আলাদা। ওঁরা আদিবাসী বাড়িতে খাওয়ার তাৎপর্য বুঝতে পারবেন না।’’
আদিবাসী বাড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। দেখুন ভিডিয়ো:
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’, নয়া প্রকল্পের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
শাহের বাঁকুড়া সফরেই একটি মূর্তিতে মালা দেওয়া ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বীরসা মুণ্ডার মূর্তি বলে বাঁকুড়ার পেয়ারাবাগানের একটি মূর্তিতে মালা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু পরে স্থানীয়রা দাবি করেন, ওই মূর্তি বীরসা মুন্ডার নয়, কোনও এক শিকারির। বিজেপি-র স্থানীয় নেতৃত্বও পরে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ মেনে নিয়ে ওই মূর্তির নীচে বীরসা মুন্ডার ছবি এনে তাতে মালা দেন পরের দিন।
কিন্তু মমতার মতে, এটা শুধু ভুল নয়, ‘অপমান’। গত বছর লোকসভা ভোটের আগে অমিত শাহের রোড শো থেকে বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘উনি এসেছিলেন। কী করলেন? একটা মূর্তিতে মালা দিলেন। পরে আপনারা বললেন, ওটা বীরসা মুন্ডা নয়। শিকারির মূর্তি। আমি শিকারিকেও সম্মান করি। তুমি বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙবে, আবার বীরসা মুন্ডার বলে যে কোনও মূর্তিতে মালা দেবে, এটা অপমান।’’
সেই মূর্তিতে মালা দেওয়ার কর্মসূচিতে অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র
আরও পড়ুন: কনকনে পাহাড়, কলকাতা ১৫.৫, পানাগড় ৮, চলবে শীতের আমেজ
শুধু আক্রমণ করাই নয়, অমিত শাহের সেই ‘ভুল’-এর রাজনৈতিক ফায়দা তোলার সুযোগও ছাড়েননি মমতা। জনজাতি সমাজের মন পেতে সেই বীরসা মুন্ডার জন্মদিনকেই রাজ্যে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করলেন খাতড়ার মঞ্চ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগামী দিনে বীরসা মুন্ডার জন্মদিনেও রাজ্যে ছুটি থাকবে।’’ বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে ছুটির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আগামী বছরের ক্যালেন্ডারে বীরসা মুন্ডার জন্মদিনও ছুটি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy