বিচারবিভাগের স্বাধীনতা চেয়ে সওয়াল মুখ্যমন্ত্রী মমতার। — ফাইল ছবি।
বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, তিনি তা করলেন এমন একটি দিনে, যখন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভের ঘটনার শুনানি চলছে। সেই শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ‘দোষী’ আইনজীবীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রসঙ্গত, অভিযোগ ‘তৃণমূলপন্থী’ আইনজীবীরা বিচারপতি মান্থার এজলাসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
মমতা অবশ্য কলকাতা হাইকোর্টের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি সওয়াল করেছেন সামগ্রিক ভাবে বিচারব্যবস্থার ‘স্বাধীনতা’ চেয়ে। ‘কলেজিয়াম’ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের সমালোচনাও করেছেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে মেঘালয় রওনা হওয়ার আগে মমতা জানান, তাঁর কাছে বিচারালয় মন্দির-মসজিদের মতোই পবিত্র। তাতে কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ হলে আখেরে গণতন্ত্রই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সম্প্রতি ‘কলেজিয়াম’ বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো করে যুক্তি সাজিয়েছে। এ বার সেই বিতর্কে যোগ দিলেন মমতাও। মেঘালয় রওনা হওয়ার আগে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়েই তিনি একহাত নেন মোদী সরকারকে। মমতা বলেন, ‘‘আমরা বিচারবিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা চাইছি। বিচারবিভাগ আমাদের কাছে মন্দির-মসজিদের মতোই পবিত্র।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী ‘কলেজিয়াম’ প্রক্রিয়াকে ‘হাতিয়ার’ করে সরাসরি মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান। মমতা বলেন, ‘‘বিভিন্ন হাই কোর্ট তাদের কলেজিয়াম সুপারিশ সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। সুপ্রিম কোর্ট সেই সুপারিশ পাঠিয়ে দেয় ভারত সরকারের কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি বিচারবিভাগে হস্তক্ষেপ করে। এটা আমরা চাই না।’’ সেখানেই বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই বিচারবিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। কিন্তু কলেজিয়াম নিয়ে ওদের কিছু একটা মতলব আছে। এটা মনে হয় একটা নতুন পরিকল্পনা!’’ মমতার অভিযোগ, হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট— সর্বত্রই কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চলছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের প্রতি সমর্থন থাকলেই সেই বিচারপতির নাম এক মাসে ক্লিয়ার করে দিচ্ছে। আর অন্য কাউকে সমর্থন করলে তিন মাস পড়ে থাকছে।’’
এই প্রেক্ষিতেই অনেকের প্রশ্ন, সামগ্রিক ভাবে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সওয়াল করেছেন। ওই মন্তব্য করে কি মমতা পরোক্ষে কলকাতা হাই কোর্টে আন্দোলনকারীদেরও বার্তা দিলেন? এর কোনও নির্দিষ্ট জবাব মেলেনি। আনুষ্ঠানিক ভাবে এর সমর্থন বা বিরোধিতা— কোনওটিই করা হয়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘বিচারবিভাগ তো স্বাধীনই আছে। কিন্তু সারা দেশের মানুষ জানেন, পশ্চিমবঙ্গের নিম্ন আদালতকে পরাধীন করার চেষ্টা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। হাই কোর্টের বিচারপতির (বিচারপতি মান্থা) বাড়ির সামনে পোস্টার মারা হচ্ছে। এমন নজিরবিহীন ঘটনা এ দেশে কোনও দিন ঘটেনি। কলকাতা হাই কোর্টে পর্যবেক্ষক দল আসছে বিচারপতিরা কী অবস্থায় আছেন, তা দেখার জন্য। বিচারব্যবস্থাকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল। সংবিধানের প্রধান স্তম্ভকে ধ্বংস করতে চাইছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী এ সব বলছেন, কারণ হাই কোর্টের নজরদারিতে যে সব সিবিআই তদন্ত চলছে, তা তিনি বন্ধ করতে চান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy