বেলপাহাড়ির সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া।
আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম জেলায় গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ১০০ দিনের কাজে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, জিএসটি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ এবং জঙ্গলমহল জুড়ে রাজ্য সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান এবং পরিকল্পনার কথাও জানালেন তিনি।
মঙ্গলবার বেলপাহাড়িতে গিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আদিবাসী আন্দোলনের নেতা বিরসা মুন্ডার ১৪৭তম জন্মজয়ন্তীতে তাঁর ছ’টি মূর্তি উন্মোচনের পাশাপাশি একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করেন মমতা। তিনি জানান, ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট ৩২ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকার ২৬ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ২০ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস করা হল।
এর পরেই ওই সভায় উন্নয়নে কেন্দ্রীয় বাধার অভিযোগ তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। বাংলাকে টাকা দিতে বারণ করেছে। গ্রামীণ রাস্তা তৈরির টাকা পেতাম সেটাও দিচ্ছে না। আমাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।’’ রাজ্যের অনেক বিরোধী দলও কেন্দ্রকে চিঠি লিখে বাংলাকে টাকা দিতে বারণ করে বলেও মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ।
জিএসটি নিয়েও নরেন্দ্র মোদী সরকার বঞ্চনার রাজনীতি করছে বলে মঙ্গলবার অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সব রাজ্য মিলে ভাল হবে ভেবে করেছিলাম (জিএসটি)। এখন দেখছি টাকাই দিচ্ছে না। আমাকে বলে, ‘সব টাকা বন্ধ করে দেব’। এ বার বলতে হবে, আমাদের টাকা আমাদের ফিরিয়ে দাও, নয়তো জিএসটি বন্ধ করে দাও। গদি ছেড়ে দাও।’’ ১০০ দিনের কাজের টাকা আসলে কেন্দ্রের আদায় করা জিএসটি থেকেই রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয় জানিয়ে মমতার দাবি, দয়ার টাকা নয়, রাজ্যের প্রাপ্যের টাকা চাইছেন তিনি। কিন্তু তা পাওয়া নিয়ে কেন্দ্র সমস্যা তৈরি করছে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে এসেছি। এর পর কি পায়ে ধরতে হবে?’’
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির মন্তব্যকে ঘিরে তৃণমূলকে ধারাবাহিক ভাবে নিশানা করে চলেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বেলপাহাড়িতে ঝাড়গ্রাম-সহ জঙ্গলমহলের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলির উন্নয়নে রাজ্য সরকারে ভূমিকার কথা জানাতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘১১ বছর ধরে আদিবাসী মানুষকে ১৮ লক্ষ কাস্ট সার্টিফিকেট (তফিসিলি জাতি শংসাপত্র), ৩ লক্ষ জয় জোহর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি কেন্দু পাতা ৪৬ টাকা ছিল। এখন ১৭০ টাকায় নিয়ে গিয়েছি।’’
বিরসার জন্মজয়ন্তীকে ঝাড়গ্রাম, আরামবাগ, তমলুক, জলপাইগুড়ি এবং উলবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজে ক্লাস শুরুর কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যে মেডিক্যালে ৬০০ সিট বাড়ল।’’ মাত্র ১৯ বছরে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে বিরসার সংগ্রাম শুরু এবং ১৯০০ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে কারারুদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাও এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায়।
শ্রোতাদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিরসা মুন্ডা বলেছিলেন, রাজা দেশ চালাবে না, আমাদের দেশ আমরা চালাব। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের জন্য তিনি চিরকালে বেঁচে থাকবেন আপনাদের মধ্যে।’’ বিরসার জন্মদিবসে ছুটির কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, রাজার (ব্রিটিশরাজ) বিরুদ্ধে বিরসার মন্তব্য তুলে ধরে কি কেন্দ্রকেই নিশানা করতে চাইলেন মমতা?
জনজাতি সমাজ এবং সংস্কৃতি রক্ষায় রাজ্যের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কবি সাধু রামচাঁদ মুর্মু নামে ঝাড়গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা। জনজাতিদের সংস্কৃতির প্রসারে ১০০০ ধামসা ও মাদল বিলির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গলের অধিকার আদিবাসীদের দিয়েছি। আদিবাসীদের জমি তাঁদের হাতেই থাকবে, সেই অধিকার দিয়েছি।’’
আধিবাসী শিশুরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘‘আদিবাসী ছেলেমেয়েরা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, আইপিএস, আইএএস, বিসিএস, প্রফেসর হবেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমি আপনাদের সংস্কৃতি জানি।’’ ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া নিয়ে রাজ্য সরকার নয়া ‘ট্যুরিজম সার্কিটের’ পরিকল্পনা করেছে বলেও জানান তিনি।
তাঁর সরকারের ১১ বছরে জঙ্গলমহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এক সময় জঙ্গলমহলে আসতাম তখন বাইরে বেরোত না মানুষ। বুক থমথম করত। এলাকায় অশান্তি ছিল। এখন মানুষ শান্তিতে আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy