মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অধীর চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
কংগ্রেসের যাঁরা ‘মাথা’ (মেইন লোক), সিবিআই-ইডি তাঁদের গায়ে হাত দেয় না কেন— শুক্রবার এই প্রশ্ন তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই রকম প্রশ্ন তিনি তুলেছেন সিপিএম সম্পর্কেও। তার পরে তাঁর মন্তব্য, ওরা (শাসক বিজেপি) জানে, মমতা মাথা নত করেন না।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সিবিআই, ইডি-র মতো তদন্ত সংস্থাগুলিকে ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বহু দিন ধরেই সরব মমতা। তৃণমূল কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে তাঁর দলের বিরুদ্ধেই এজেন্সিকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও বারবার বিজেপি পরিচালিত সরকারের শীর্ষ স্থানীয়দের নাম করেও আক্রমণ করেছেন তিনি। সেই সুরেই এ দিন তিনি বলেন, ‘‘মমতা যাতে কিছুতেই ( ক্ষমতায়) না আসতে পারে, এটাই ছিল ওদের টার্গেট। তাই ওকে যে কোনও ভাবে হারাতে হবে।’’ তার পরেই মমতা বলেন, ‘‘সিপিএম বাংলায় কত বছর রাজনীতি করেছে? ৩৪ বছর। কত অন্যায় করেছে? ওদের বিরুদ্ধে একটা সিবিআই, ইডি মামলা করেছে? কিছু বলেনি। শুধু চিদম্বরমের (প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম) গায়ে হাত দিয়েছে কিন্তু কংগ্রেসের মাথার (মেন লোকের) গায়ে তো হাত দেয়নি।’’
এমন মন্তব্য করে তৃণমূল নেত্রী আসলে সনিয়া-রাহুল গাঁধীদের দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। নিয়মিত যে ভাবে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কংগ্রেসকে নিশানা করে চলেছেন, তাতে বিজেপির স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টাই দেখতে পাচ্ছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপির সুপারি নিয়েছেন বলেই কি পিসি-ভাইপো লাগাতার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন? বিরোধী ঐক্য যখন জমাট বাঁধছে, তাতে নরেন্দ্র মোদীদের আতঙ্ক হচ্ছে। সেই আতঙ্ক কাটানোর দায়িত্ব নিয়েছেন দিদি! সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বিরোধী শিবিরের বৈঠক করছেন আবার তাঁদের অপরাধী বানাচ্ছেন। বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরলে লাভ হবে বিজেপিরই। ইতিহাস ওঁকে (মমতা) ক্ষমা করবে না!’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘বামফ্রন্ট ৩৪ বছর সরকারে থাকলেও কারও হিম্মত হয়নি কেলেঙ্কারির কালি লাগানোর। সিবিআই, ইডি তাই লাগানো যায়নি। মুখ্যমন্ত্রীও সিআইডি, তদন্ত কমিশন কত কিছু করেছেন। কিছু পেয়েছেন? নিজেদের দলের নেতাদের নাম এত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে আছে, কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা দেওয়া উচিত!’’
নির্বাচনী সভায় এ দিন মমতা বলেন, ‘‘আমাদের দলের (তৃণমূলের) কে বাদ আছে? যে পার্টিটা সব থেকে সৎ, সব থেকে নির্ভীক ভাবে লড়াই করে, তাদের সবাইকে ডেকে পাঠাচ্ছে। সৌগত রায়ের মতো মানুষকে ডেকে পাঠাচ্ছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বাদ দেয়নি। ছেলে, মেয়ে, বাড়ির কাজের লোকেদেরও পর্যন্ত ডাকছে।’’ সম্প্রতি একাধিক পুরনো মামলায় ফের সিবিআই ও ইডি শাসক দলের কয়েক জন শীর্ষ নেতা ও রাজ্যের আমলাদের তলব করেছে। এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে এ দিন গুঞ্জন তীব্র হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সবাইকে ওরা মেনে নিতে পারে, বোঝাপড়া করে নিতে পারে। কিন্তু জানে ও ( মমতা) মাথা নত করে না। বোঝাপড়া করে না।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ভাইপোকে যখনই ইডি ডেকে জেরা করল, তখন থেকেই কংগ্রেসকে গালমন্দ করা শুরু হল! আরএসএসের জন্মলগ্ন থেকে কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। আর তৃণমূল নেত্রী বিজেপির সঙ্গে ঘর করে, কখনও তার জন্য ক্ষমা না চেয়ে এখন কংগ্রেসের দোষ ধরছেন। চিদম্বরমকে ওই ভাবে দুষ্কৃতীর মতো ধরে জেলে পোরার পরেও তিনি এখনও সংবাদপত্রে মোদীর কড়া সমালোচনা করে লিখে চলেছেন। ওঁরা হয়তো খোঁজ রাখেন না।’’ নিতিন গডকঢ়ী, রাজনাথ সিংহ, মোহন ভাগবতদের সঙ্গে তৃণমূলের ‘গোপন আঁতাঁতের’ অভিযোগও তুলেছেন অধীর।
নন্দীগ্রামের ভোটে তাঁর পরাজয় প্রসঙ্গ টেনে ফের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ঝুঁকি নিয়েই নন্দীগ্রামে গিয়েছিলাম। তখন বুঝিনি, এজেন্সি, মেশিন, বন্দুক এই রকম জঘন্য ভাবে ব্যবহার করা যায়। নানা রকম কীর্তি-কেলেঙ্কারি হয়েছে।’’ সেই সূত্রেই বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহারের পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন মমতা।
তিনি বলেন, ‘‘পেগাসাস নিয়ে তদন্ত করবে না। আদালতেও কিছু বলবে না।’’ তার পরেই ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিল নিয়ে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘‘আদালতে কেন্দ্র বলেছে, ওটা সরকারি তহবিল নয়। ওই তহবিলে কয়ের লক্ষ কোটি টাকা জমা হয়েছে। কেন ওই তহবিলের অডিট হবে না? কী চলছে দেশে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy