অশান্তি: রণক্ষেত্র কাঁকিনাড়া। নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা পুলিশের। —নিজস্ব চিত্র
বৃষ্টির মতো পুলিশের দিকে ধেয়ে আসছিল ইট, পাথর, বোমা। পাল্টা গুলি ছুড়েছিল পুলিশ। পুলিশের দাবি, সেই গুলি চলেছে শূন্যে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠা কাঁকিনাড়ার কাছারি রোডে গুলিতেই প্রাণ গেল রামবাবু সাউ (১৭) এবং ধর্মবীর সাউ (৪০) নামে দুই ফুচকা বিক্রেতার। জখম হন সন্তোষ সাউ নামে এক মিষ্টি ব্যবসায়ীও। সেই গুলি কারা চালিয়েছে, তা নিয়ে পুলিশ ও বিজেপির চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। ইট-পাথরের আঘাতে জখম হয়েছেন ছয় পুলিশকর্মীও।
ভোটের পর থেকে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া এলাকায় অশান্তি বেড়ে চলেছে। গত এক মাসে এমন একটি দিনও যায়নি, যে দিন কাঁকিনাড়া-ভাটপাড়ায় বোমাবাজি হয়নি। ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়ায় অশান্তিতে প্রাণ গেল পাঁচ জনের। এত দিন ধরে দুই এলাকার বাজারও কার্যত বন্ধ রয়েছে।
এ দিনের ঘটনার জেরে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলও নড়েচড়ে বসে। ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়ায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সন্ধ্যায় সরিয়ে দেওয়া হয় ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরীকে। নতুন পুলিশ কমিশনার হিসেবে আসেন মনোজ বর্মা। এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সঞ্জয় সিংহকে বিশেষ তদারকির (এডিজি ইন-চার্জ) ভার দিয়ে পাঠানো হয়। র্যাফ এবং অন্যান্য বাহিনী রুটমার্চ করে। রাতে উত্তর ২৪ পরগণার জেলাশাসকের দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি যাতে উত্তপ্ত করা না যায়, সে জন্য বসিরহাট, বনগাঁ এবং ব্যারাকপুর মহকুমায় ইন্টারনেট-পরিষেবা স্থগিত রাখা হচ্ছে। তবে দমদম এবং বিমানবন্দর থানা এলাকায় এই নির্দেশ বলবৎ হবে না।
আগেই স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেছিলেন, ‘‘জগদ্দল ও ভাটপাড়া থানা লাগোয়া কিছু কিছু জায়গায় যে সব আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে, রাজ্য সরকার তা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কিছু সমাজবিরোধী ও অপরাধী ওই সব এলাকায় সক্রিয় হয়েছে। কড়া দৃষ্টিতে এটা দেখছে সরকার। সকলকে উত্তেজক বিবৃতি এবং বার্তা দেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দোকান-বাজার খোলানোর জন্য পুলিশ কয়েক দিন ধরেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করছিল। মোড়ে মোড়ে পুলিশ পিকেট বসিয়ে এ দিন সকালে দোকানপাট খোলানোও হয়। কিন্তু সাড়ে ১০টা নাগাদ ভাটপাড়ায় রিলায়্যান্স জুটমিলের সামনে বোমবাজি শুরু হতেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। কাছারি রোডে প্রচুর মানুষকে জড়ো হতে দেখে পুলিশ তাঁদের ঘরে ফিরতে বলে। পাল্টা পুলিশকে সরে যেতে বলে জনতা। তার পরেই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর, বোমা ছোড়া শুরু হয়।
থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মহিলারা। (ডান দিকে উপরে) রামবাবু সাউ (নিচে) ধর্মবীর সাউ। —নিজস্ব চিত্র
পুলিশের দাবি, তাদের লক্ষ্য করে গুলিও চলে। সেই সময়ে পুলিশও পাল্টা শূন্যে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই রামবাবু মারা যায়। জখম ধর্মবীরকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তিনি দুপুরে মারা যান। তত ক্ষণে কাঁকিনাড়ার অন্য এলাকা, বিশেষ করে ৪ ও ৫ নম্বর রেল সাইডিংয়ে বোমাবাজি শুরু হয়ে যায়। বেলা ১২টা নাগাদ উদ্বোধন করতে আসছিলেন ডিজি। মাঝপথ থেকে তিনি ফিরে যান। তারপর থেকে থমথমে এলাকা। বিকেলের দিকে শ’খানেক মহিলা নিরাপত্তার দাবিতে ভাটপাড়া থানা ঘেরাও করেন। সাড়ে ৫টা নাগাদ ডিজি ভাটপাড়া থানায় এসে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
নিহতদের মধ্যে রামবাবুর বাড়ি কাছারি রোডেই। ধর্মবীরের বাড়িও কাছেই মানিকপুরে। তিনি রিলায়্যান্স জুটমিলে ঠিকা কাজও করতেন। দুই পরিবারের লোকেরা তো বটেই, এলাকাবাসীর একটা বড় অংশও এই মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দুষেছেন। পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু বলে তাঁদের দাবি। দিল্লি থেকে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহও বলেন, ‘‘পুলিশ গুলি চালিয়ে মানুষ খুন করেছে। চাইলে ভাটপাড়াকে নন্দীগ্রাম করে দিতে পারি।’’ মৃত্যু নিয়ে মন্তব্য করেননি স্বরাষ্ট্রসচিব। ডিজি-র দাবি, ‘‘পুলিশ বাধ্য হয়ে শূন্যে গুলি চালিয়েছে। কাদের গুলিতে এই মৃত্যু, তা তদন্তেই জানা যাবে।’’ আজ, শুক্রবার বিজেপির সংসদীয় দল ভাটপাড়ায় আসছে। তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘অশান্তি জিইয়ে রাখতে অর্জুনের দলই এ সব করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy