গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মুর্শিদাবাদ স্টেশন। প্ল্যাটফর্ম দিয়ে হাঁটছিলেন এক জন। আচমকা পিছন থেকে বিজেপির দলীয় পতাকা হাতে দৌড়ে এলেন জনা কয়েক যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হল মার। হাত দিয়ে মুখ-মাথা ঢাকার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন যুবক। কিন্তু তার মধ্যেই কোমরে সপাটে পড়ল লাঠির বাড়ি। কয়েক সেকেন্ড চলল মার এবং মার। তার পর কোনও রকমে মুর্শিদাবাদের ওই রেলস্টেশন থেকে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। আক্রান্ত ব্যক্তির দাবি, তিনি তৃণমূল কর্মী। তাঁকে একা পেয়ে মারধর করেছেন বিজেপি কর্মীরা।
হুগলির শ্রীরামপুরের পেয়ারাপুরে দিল্লি রোড। আধ ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলছিল। চলছিল স্লোগান। পাশাপাশি আরজি করের ঘটনার বিচারের দাবিও উঠছিল। সার দিয়ে যানবাহন দাঁড়িয়ে রাস্তায়। তখনই বাইক মিছিল করে হাজির তৃণমূলের কর্মীরা। কয়েক সেকেন্ডের কথা কাটাকাটির পর শুরু হল মারামারি। বুধবার বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে মারামারি, সংঘর্ষের এমনই খণ্ড খণ্ড ছবি দেখা গেল দক্ষিণ থেকে উত্তরবঙ্গে। বন্ধ সফল করতে এসে আটক এবং গ্রেফতারির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সেই সঙ্গে আসছে জায়গায় জায়গায় অশান্তির খবর। বস্তুত, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার তোড়জোড় এবং বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই জায়গায় জায়গায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
মুর্শিদাবাদ স্টেশনে বন্ধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে এক তৃণমূল কর্মীকে পেটানোর অভিযোগ ওঠে। কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি। মুর্শিদাবাদেও শুরু হয় রেল অবরোধ। মুর্শিদাবাদ স্টেশনে ডাউন ভাগীরথী এক্সপ্রেস আটকে দেন বিজেপি কর্মী এবং সমর্থকেরা। তার আগে জিয়াগঞ্জ স্টেশনে বিক্ষোভ শুরু হয়। মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জ শাখায় ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হয়। প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে নদিয়ার একাধিক স্টেশনে আটকে পড়েন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী এবং সমর্থকেরা। অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। পরে ডাউন লাইনে অবশ্য ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। তবে মুর্শিদাবাদে আপ লাইনে বেশ কিছু জায়গায় অবরোধ চলছে।
শ্রীরামপুরে বিজেপি এবং তৃণমূলের ধাক্কাধাক্কি, মারামারিতে পুলিশ কার্যত ‘দর্শকের’ ভূমিকায় ছিল। হুগলির বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধ করছেন বিজেপি কর্মীরা। বন্ধ সফল করতে রাস্তায় রাস্তায় দেখা যায় পদ্ম-পতাকা নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন বিজেপি সমর্থকেরা। শ্রীরামপুরে প্রায় আধ ঘণ্টা চলে অবরোধ। তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষ থামাতে পরে পুলিশবাহিনী আসে। দু’পক্ষকে বুঝিয়ে দিল্লি রোডে যান চলাচল স্বাভাবিক করে তারা। বিজেপির যুব সংগঠনের রাজ্যের মুখপাত্র হরি মিশ্র বলেন, ‘‘আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ নবান্ন অভিযান করেছে। সেখানে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। তারই প্রতিবাদে আমাদের বন্ধ। আমরা রাস্তা অবরোধ করেছিলাম। সেই সময় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এসে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা সাগর সিংহের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘বিজেপির ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধ সম্পূর্ণ বেআইনি। এই বন্ধ ডাকার কোনও যুক্তিও নেই। রাস্তা অবরোধ করেছিল বিজেপির গুন্ডাবাহিনী। তার প্রতিবাদ করতে গেলে গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমাদের বেশ কয়েক জন কর্মী আহত হয়েছেন। আমরাই যান চলাচল স্বাভাবিক করিয়েছি।’’
বন্ধকে কেন্দ্র করে অশান্তির ছবি দেখা গিয়েছে উত্তরবঙ্গে। কোচবিহার রাজ্যসড়কে এনবিএসটিসির বাস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বন্ধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বন্ধের বিরোধিতা করে কোচবিহারে পথে নামে জেলা তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকের নেতৃত্বে একটি মিছিল শহরের বিভিন্ন বাজার পরিক্রমা করে। মাইকিং করে দোকানপাট খুলে রাখার আবেদন করা হয়। পাল্টা পথে নামে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy