গোলমালের পর বিপ্রদাস পালচৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউশনের অধ্যক্ষের ঘরে বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগরে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি রুখতে প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও বার্তা দিচ্ছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। অথচ সেই বার্তার পরেও রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে অশান্তি অব্যাহত।
নদিয়ার চাপড়া বাঙালঝি কলেজের রেশ মিটতে না মিটতেই বৃহস্পতিবার ফের নকল করতে দেওয়ার দাবিতে উত্তেজনা ছড়াল ওই জেলারই কৃষ্ণনগর বিপ্রদাস পাল চৌধুরী আইটিআই কলেজে। অভিযোগ, নকল করার অপরাধে ফুলিয়া কলেজের এক পরীক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেছেন ওই কলেজের শিক্ষকেরা। ওই ছাত্রের মাথায় চোট লাগে। অন্য সহপাঠীরা তাঁকে বাঁচাতে গেলে তাঁদের উপরেও শিক্ষক ও বিপ্রদাস কলেজের কয়েকজন ছাত্র চড়াও হন বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
বিপ্রদাস কলেজের অধ্যক্ষ শরদিন্দু কর অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের কোনও শিক্ষক কোনও পরীক্ষার্থীকে মারধর করেননি। ওই পরীক্ষার্থীরাই উল্টে আমাদের কলেজের শিক্ষকদের উপরে চড়াও হয়েছিলেন।” তাঁর দাবি, ওই ছাত্র এক শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন, চেয়ার তুলে মারতেও চান। অধ্যক্ষ বলেন, “সেই দৃশ্য দেখে আমাদের কলেজের ছাত্ররা হয়তো উত্তেজিত হয়ে প্রতিরোধ করেছিল। তাতেই কোনও পরীক্ষার্থী পড়ে গিয়ে আঘাত পেতে পারেন।” এই ঘটনায় ফুলিয়া কলেজের ছাত্রছাত্রীরা গণস্বাক্ষর করে বিপ্রদাস কলেজের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এ দিনও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কী ঘটেছে তা না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে বারবারই বলা হচ্ছে পরীক্ষার হলে কোনও বেআইনি কাজকে শিক্ষকরা অনুমোদন দেবেন না। যে আচরণ ছাত্রসুলভ নয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।” তবে শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, এই ধরনের প্রবণতা ক্রমশ কমছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
কলেজ সূত্রে খবর, ফুলিয়া আইটিআই কলেজ, বিশপ মরো টেকনিক্যাল স্কুল, ডন বসকো টেকনিক্যাল স্কুল ছাড়াও বিপ্রদাস কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এ দিন পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দ্বিতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা ছিল। বুধবার থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সে দিন থেকেই ফুলিয়া আইটিআই কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নকল করার চেষ্টা করতে থাকেন। অভিযোগ, মোবাইল ফোনে এসএমএসে আসা উত্তর দেখে পরীক্ষা দিতে দেওয়ারও দাবি করেন তাঁরা। বুধবার সাতটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি। বৃহস্পতিবারও পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে।
অধ্যক্ষ জানান, শিক্ষকরা নকল করতে দিতে রাজি ছিলেন না। বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রীর খাতাও কেড়ে নেওয়া হয়। যদিও পরে সেই খাতা ফিরিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু ফুলিয়া আইটিআই কলেজের পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে বিপ্রদাস কলেজের শিক্ষকদের গন্ডগোল শুরু হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, পরীক্ষার পরে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকদের কাছ থেকে উত্তরপত্র কেড়ে নিতে গেলে তাঁদের সঙ্গে শিক্ষকদের ধস্তাধস্তি হয়।
ফুলিয়ার কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অবশ্য দাবি, পরীক্ষা চলাকালীন তাঁদের ঘাড় ঘোড়াতে না দিলেও বিপ্রদাস কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নকল করার সুযোগ করে দিয়েছেন কলেজের শিক্ষকরা। তাঁদের দাবি, অহেতুক অনেকের কাছ থেকে খাতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, এই ঘটনার প্রতিবাদ করাতেই তাঁদের উপরে কলেজের শিক্ষক ও ছাত্ররা চড়াও হয়ে মারধর করেন। আহত ছাত্র রনি দাসকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রনি বলেন, “আমি কিছুই করিনি। আমার এক সহপাঠীর খাতা কেড়ে নিয়েছিল। আমি তার প্রতিবাদ করাতেই তিন জন শিক্ষক আমাকে টানতে টানতে টিচার্স রুমের ভিতরে নিয়ে গিয়ে মোটা লাঠি দিয়ে মারধর করতে থাকেন।” ফুলিয়া কলেজের ছাত্রী জয়া সরকার বলেন, “যে ভাবে শিক্ষকরা রনিকে লাঠি দিয়ে মারলেন, তা চোখে দেখা যায় না।” এই ঘটনায় কলেজের গেটের বাইরে অভিযুক্ত শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান অন্য কলেজের পরীক্ষার্থীরাও।
এ দিনই কৃষ্ণনগরের দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের বিষয় পরিবর্তন করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে। পরে জেলাশাসক বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলেই অভিযোগ পড়ুয়াদের। মেদিনীপুর কমার্স কলেজেও দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবসে পতাকা তোলাকে ঘিরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্র পরিষদ এবং টিএমসিপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। ওই ঘটনায় জখম হয়েছেন দু’পক্ষের চার জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy