Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
NRC

সিএবি-এনআরসি একই মুদ্রার দু’পিঠ, এক জনকেও তাড়াতে দেব না: খড়্গপুরে হুঙ্কার মমতার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আসুন জোট বাঁধি। একটা লোককেও দেশ থেকে তাড়ানো চলবে না। নো এনআরসি। কোনও বিভাজন হবে না, নো ডিভাইড অ্যান্ড রুল।’’

সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ফের জানিয়েছেন, এনআরসি হতে দেবেন না। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া

সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ফের জানিয়েছেন, এনআরসি হতে দেবেন না। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৪৮
Share: Save:

সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল (সিএবি) পেশ হওয়ার দিনেই ফের বিভাজনের অভিযোগ তুলে তোপ দাগলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা আজ সংসদে পেশ হল, তা আসলে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-রই অন্য পিঠ বলে এ দিন দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। খড়্গপুরে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে ফের জানিয়েছেন, এনআরসি হতে দেবেন না।

সম্প্রতি বিধানসভা উপনির্বাচনে ৩টি আসনের সব ক’টিতে তৃণমূল জেতার পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে, কৃতজ্ঞতা জানাতে খড়্গপুর, করিমপুর এবং কালিয়াগঞ্জ যাবেন তিনি। কথা মতো ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী খড়্গপুরে গেলেন। বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে চড়া সুরেই যে তিনি কথা বলবেন খড়্গপুরে, রাজনৈতিক শিবিরে তা প্রত্যাশিতই ছিল। দেশের ‘বেহাল অর্থনীতি’ বা ‘কর্মসংস্থানের অভাব’ প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে তিনি আক্রমণ তো করলেনই, কিন্তু সবচেয়ে চড়া সুরে আক্রমণ করলেন সিএবি এবং এনআরসি প্রসঙ্গেই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আসুন জোট বাঁধি। একটা লোককেও দেশ থেকে তাড়ানো চলবে না। নো এনআরসি। কোনও বিভাজন হবে না, নো ডিভাইড অ্যান্ড রুল।’’

আরও পড়ুন: পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী, যদুবাবুর বাজারে হঠাৎ পরিদর্শন

এনআরসি বা সিএবি আসলে দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটানোর অস্ত্র— এই অভিযোগ যতই তোলা হোক, বিজেপি কিন্তু তাতে বিচলিত নয়। বিজেপির ঘোষিত রাজনৈতিক লাইন অনুসারেই সিএবি পেশ হয়েছে সংসদে, এনআরসির পথেও এগনো হবে এর পরে— বার বারই বলছেন দেশের শাসক দলের নেতারা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির নাম করেননি এ দিন। কিন্তু স্পষ্ট ইঙ্গিতে বলেন, ‘‘যার যতই রাজনৈতিক স্লোগান থাক, মনে রাখবেন দেশের থেকে বড় কিছু নয়।’’

সিএবি এবং এনআরসি আলাদা বিষয় বলে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার বার বারই ব্যাখ্যা করছে। এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা বোঝাতে চাইছেন, যাঁদের নাগরিকত্ব এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যই সিএবি আনা হচ্ছে, কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়। পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান এবং পার্সি সম্প্রদায়ের যাঁরা ভারতে চলে এসেছেন, তাঁদের সকলকে ভারতের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নেওয়ার জন্যই এই বিল আনা হয়েছে বলে কেন্দ্রও জানাচ্ছে। এই বিল পাশ হয়ে গেলে ওই তিন দেশ থেকে আসা শরণার্থীরা যে হেতু নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন, সে হেতু এনআরসি হলে তাঁদের নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা আর থাকবে না— এই ব্যাখ্যাই দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রের তরফে।

আরও পড়ুন: জোটের কাঁটা তুলতে পথে সূর্য-মান্নান-প্রদীপ

কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সেই ব্যাখ্যাও নস্যাৎ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সিএবি বলুন, আর এনআরসি বলুন, কয়েনের এ পিঠ আর ও পিঠ।’’ মমতা বলেন, ‘‘আমরা সবাই নাগরিক, সবাই ভোট দিই। সবারই রেশন কার্ড আছে। কারও একটা স্কুল সার্টিফিকেট আছে, কারও একটা কাজ করার সার্টিফিকেট আছে, কারও জমির পাট্টা আছে। কিছু না কিছু তো আছে। তা হলে আবার নাগরিকত্ব নিয়ে কিসের প্রশ্ন?’’

কেউ ৭০ বছর ধরে এ দেশের নাগরিক, কেউ স্বাধীনতার পর থেকেই নাগরিক, এখন আবার তাঁদেরকে নতুন করে কোন নাগরিকত্ব দেবে সরকার? এই প্রশ্ন এ দিন আরও জোর দিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষণে স্বভাবসিদ্ধ ঝাঁঝ নিয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনি কে, যে ঠিক করবেন, এ পাবে আর ও পাবে না?’’

অসমে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে কী ঘটেছে, সে কথা এ দিন মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে ১৯ লক্ষ নাম অসমের এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে, তার মধ্যে ১৪ লক্ষ হিন্দু বাঙালি বলে তিনি এ দিন দাবি করেছেন। ১ লক্ষ বিহারির নাম বাদ পড়েছে, বহু গোর্খার নামও বাদ পড়েছে— বলেন মমতা। কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, ‘‘আগে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান দিন। জনতাকে ভাগাভাগি করবেন না।’’

লোকসভা এ দিন যখন সিএবি পেশ করছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, তখনও তৃণমূল সাংসদরা তুমুল বিরোধিতা শুরু করেন। অমিত শাহের ভাষণকে নির্বিঘ্নে এগোতে দেননি তাঁরা। সিএবি-কে বাধা দিতে তৃণমূল কতটা তৎপর, তা বেশ বুঝিয়ে দিয়েছে লোকসভার এ দিনের ছবিটাই। তার পরে খড়্গপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেজাজও এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছে, সিএবি নিয়ে ফের বড়সড় সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে।

অন্য বিষয়গুলি:

NRC CAB Mamata Bandyopadhyay citizenship amendment bill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy