ব্যারাকপুর কোর্ট চত্বরে তেজস্ক্রিয় কাণ্ডে ধৃত অসিত ঘোষ ও শৈলেন কর্মকার। নিজস্ব চিত্র
ছাই রঙের ‘পাথরগুলি’ অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করছে। দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হচ্ছে, সেগুলি তেজস্ক্রিয়। কিন্তু সেগুলি সত্যিই তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যালিফর্নিয়াম কি না, সেই বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় সিআইডি। বাজেয়াপ্ত ওই সব পদার্থ আসলে কী, তা জানতে তার নমুনা ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার বেঙ্গালুরু থেকে ট্রেনে পদার্থগুলি কলকাতায় আনার পরে বিমানবন্দরের কাছে এক ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিক্রির জন্য। সেই ধাতব বস্তু দেখে সন্দেহ হওয়ায় ওই ব্যক্তি পুলিশে খবর দেন। পরে সিআইডি সেখানে পৌঁছে হুগলির সিঙ্গুরের বাসিন্দা শৈলেন কর্মকার এবং পোলবার অসিত ঘোষকে গ্রেফতার করে। তাঁদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা চারটি ছাইরঙা পাথর অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করায় সেগুলি আসলে কী, ধৃতদের কাছে তা জানতে চান পুলিশ আধিকারিকেরা।
আন্তর্জাতিক বাজারে এক গ্রাম ক্যালিফর্নিয়ামের দাম ১৭ কোটি টাকা বলে সিআইডি সূত্রের খবর। বিমানবন্দরে ২৫০.৫ গ্রাম ওজনের মোট চারটি টুকরো বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সিআইডি জানায়, ক্যালিফর্নিয়াম হলে আটক করা ওই পদার্থের দাম প্রায় ৪২৫৮ কোটি টাকা! মে মাসে লখনউ এটিএস সেখান থেকে ৩৫০ গ্রামেরও বেশি ক্যালিফর্নিয়াম বাজেয়াপ্ত করেছিল। গ্রেফতার করা হয় আট জনকে। সেখানকার সেই চক্রের সঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দর এলাকা থেকে ধৃতদের কোনও যোগাযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ সাদা এমপিভি (জ়াইলো) থেকে ব্যারাকপুর আদালত-চত্বরে নামানো হয় শৈলেন ও অসিতকে। তত ক্ষণে রটে গিয়েছে, পরমাণু বোমা তৈরির উপকরণ-সহ ধরা পড়া দু’জনকে আদালতে তোলা হবে। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গেই ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে ধৃতদের ছবি তুলতেও দেখা যায় এলাকার বাসিন্দাদের। বেলা ৩টে নাগাদ এসিজেএম মহম্মদ রফিক আলমের এজলাসে মামলাটি ওঠে। সরকারি আইনজীবী লোপামুদ্রা দাস নন্দী ধৃতদের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। অভিযুক্তদের জামিনের জন্য আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবী। বিচারক পুরো বৃত্তান্ত শোনার পরে পরমাণু শক্তি-১৯৬২, ৪০৬, ৪২০ এবং ৪১১ (১৪/১৭) ধারায় অভিযুক্তদের আট দিনের পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
সিঙ্গুরের আন্দননগরে শৈলেনের বাবার কামারশালা ছিল। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে শৈলেন গয়নার কাজ শিখতে মুম্বই যান। সেখান থেকে দুবাই। পরে কোয়ম্বত্তূর। মায়ের অসুস্থতার কারণে দু’মাস আগে বাড়ি ফেরেন। বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যায় অসিতের মোবাইল ফোন থেকে জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ফিরবেন। পড়শিরা জানান, শৈলেন মাটির বাড়ি ভেঙে পাকা দোতলা বাড়ি তুলেছেন। তাঁর মা, স্ত্রী এবং এক ছেলে আছেন। শৈলেনের স্ত্রী বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে। ও যদি এমন কাজ করত, তা হলে জমি বিক্রি করে বাড়ি মেরামত করত না।’’ শৈলেনের বাড়িতে অসিতের যাতায়াত ছিল।
বছর পঞ্চাশের অসিত ওরফে খোকনের বাড়ি পোলবার পাওনান বিশ্বাসপাড়ায়। স্ত্রী রিতা, কলেজপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে থাকেন পৈতৃক বাড়িতে। পরিবারে অভাবের ছাপ। স্ত্রী জানান, অষ্টম শ্রেণি পাশ অসিত ট্রাকের ব্যবসা করতেন। পরে ট্রাক বেচে কৃষিজমি কেনাবেচা এবং টেলারিংয়ের কাজ শুরু করেন। এলাকায় বিশেষ মেলামেশা করতেন না। এক সপ্তাহ আগে আরামবাগ ও তারকেশ্বরে জমি কেনাবেচা সংক্রান্ত কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ‘‘স্বামীর ব্যবহারে কোনও দিন অন্য রকম কিছু চোখে পড়েনি। এত কিছু যদি করত, তা হলে বাড়ির এই হাল হত না,’’ বলেন অসিতের স্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy