Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

স্ত্রীকে মাসে ৭,০০০ টাকা খোরপোশের নির্দেশ শুনেই ফেরার স্বামী, তিন বছর পর ধৃত হাসনাবাদের মনোজ

কোর্টের নির্দেশ মেনে প্রথম দু’মাস ৭,০০০ টাকা করে দিয়েছিলেন স্বামী। তার পর আর দেননি। কেন, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন স্ত্রী। জানা যায়, স্ত্রীকে খোরপোশ দেওয়ার ‘ভয়ে’ ওই ব্যক্তি নিরুদ্দেশ।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ভাস্কর মান্না
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৩৬
Share: Save:

স্ত্রীকে খোরপোশ দেওয়ার ‘ভয়ে’ বেপাত্তা স্বামী। কয়েক বছর ধরে খুঁজেও ব্যর্থ পুলিশ। শেষমেশ ওই ব্যক্তিকে খুঁজতে আদালত সিআইডির ‘মিসিং স্কোয়াড’কে দায়িত্ব দিয়েছিল। তিন বছর পরে অভিযুক্ত স্বামীকে ধরে আদালতে হাজির করিয়েছে সিআইডি। আলিপুর আদালতের নির্দেশে আপাতত তিনি জেলবন্দি। আদালত জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিকে জানাতে হবে, কেন তিনি এত দিন ধরে নিরুদ্দেশ ছিলেন? কেন মামলায় যুক্ত হয়ে আদালতকে সহযোগিতা করেননি? কেন তিনি স্ত্রী-সন্তানের খোরপোশের দায়িত্ব নিতে চান না?

চলতি মাসে আলিপুর আদালতে আবার ওই মামলার শুনানি রয়েছে। সে দিন ওই সব প্রশ্নের উত্তর ধৃত স্বামীকে জানাতে বলেছে আদালত।

২০১৩ সালে প্রেম-বিবাহ হয়েছিল মনোজ কুমার ঘোষ ও অঞ্জলি ঘোষের। অঞ্জলির বাড়ি কলকাতার হাজরায়। মনোজের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদে। ২০১৫ সালে তাঁদের এক কন্যাসন্তান হয়। পরে দাম্পত্যকলহের কারণে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন ওই দম্পতি। শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন অঞ্জলি। সংসার চালাতে স্বামীর কাছে খোরপোশ দাবি করেন। মনোজ জানান, তিনি যে আয় করেন, তা থেকে খোরপোশ দেওয়া সম্ভব নয়। এর পরে স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন স্ত্রী। ২০১৭ সালে বালিগঞ্জ থানার ওই মামলাটি ওঠে আলিপুর আদালতে। মামলা দু’বছর চলার পরে আদালত অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানায়, আপাতত স্ত্রী-সন্তানের খরচ চালাতে মাসে ৫,০০০ টাকা করে দিতে হবে মনোজকে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আদালত জানায়, প্রতি মাসে ৭,০০০ টাকা করে স্ত্রী অঞ্জলিকে দিতে হবে মনোজকে।

অঞ্জলির আইনজীবী সন্দীপন দাস জানান, আদালতের ওই নির্দেশ মেনে প্রথম দু’মাস ৭,০০০ টাকা করে দিয়েছিলেন মনোজ। তার পর থেকে আর টাকা দেননি। কেন মনোজ টাকা পাঠাচ্ছেন না, সেই মর্মে খোঁজখবর শুরু করেন অঞ্জলি। জানা যায়, মনোজকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অঞ্জলির করা মামলায় একাধিক বার নোটিস দেয় আদালত। তাতেও সাড়া দেননি মনোজ। তাঁকে হাজির করাতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আলিপুর আদালত। কিন্তু অনেক খুঁজেও মনোজের হদিস দিতে পারেনি পুলিশ। আদালত তখন সিআইডিকে দায়িত্ব দেয়। মনোজের খোঁজ শুরু করেন রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের আধিকারিকেরা। ২০২১ সালের অগস্ট থেকে প্রায় তিন বছর পরে সিআইডির ‘মিসিং স্কোয়াড’ মনোজকে পাকড়াও করে। দিন কয়েক আগে তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত মনোজকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

সিআইডি সূত্রের খবর, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাইরে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন মনোজ। দিনমজুরের কাজ করে দিন কাটাতেন। অনেক খোঁজার পরে তাঁকে পাওয়া যায়। কেন এত দিন নিরুদ্দেশ ছিলেন মনোজ? খোরপোশের ভয়েই কি তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন? ওই মামলার সঙ্গে যুক্ত বিপরীত পক্ষের এক আইনজীবীর বক্তব্য, স্ত্রীকে খোরপোশের নির্দেশ দিয়ে আদালত মনোজের উপর যে আর্থিক দায়িত্ব দিয়েছিল, তা তাঁর পক্ষে কার্যকর করা সম্ভব ছিল না। মনোজ পৈতৃক জমিতে চাষবাস করে দিন কাটাতেন। কিন্তু স্ত্রীর করা মামলায় জড়িয়ে পড়েন। আদালত এবং আইনের ভয়েই তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন। কিন্তু রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের জালে ধরা পড়ে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court CID Crime arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE