রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা এ বার মিলবে ভেলোরের হাসপাতালেও।
তামিলনাড়ুর ভেলোরের ক্রিশ্চান মেডিক্যাল কলেজে (সিএমসি) প্রতি মাসে যত রোগী চিকিৎসার জন্য যান, তার একটা বড় অংশই এ রাজ্যের। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সেখানে রোগীর স্রোত এতটাই যে, দক্ষিণগামী কয়েকটি ট্রেন লোকমুখে রীতিমতো ‘মেডিক্যাল এক্সপ্রেস’ নামেও পরিচিত। সেই সিএমসি এ বার চলে এল এ রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায়। অর্থাৎ এ বার থেকে স্বাস্থ্যসাথীর উপভোক্তারা ভেলোরের ওই হাসপাতালে গেলে ক্যাশলেস পরিষেবার সুবিধা পাবেন। তবে তা নিয়েও এ বার শুরু হয়েছে বিতর্ক।
চলতি বছর জুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে জানিয়েছিলেন, ভেলোরের সেই সিএমসি এবং নয়াদিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-কে (এমস) রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। সেই ঘোষণার তিন মাসের মধ্যে, চলতি মাসে প্রায় নিঃশব্দেই ভেলোর সিএমসি চলে এসেছে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায়। গত ৬ অক্টোবর থেকে স্বাস্থ্যসাথীর পোর্টালে ভেলোরে চিকিৎসার জন্য নাম নথিভুক্ত করা শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ছ’জন সেখানে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। ট্রেন চলাচল শুরু হলেই তাঁরা ভেলোরে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় চিকিৎসা করাবেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। যদিও যাতায়াত বা ভেলোরে হোটেলে থাকার খরচ এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবে না।
তবে ভেলোর সিএমসি স্বাস্থ্যসাথীর আওতাভুক্ত হওয়ামাত্র সমালোচনা শুরু করেছে বিরোধী বিজেপির চিকিৎসক সেল। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এক সময়ে বলেছিলেন রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা এতটাই উন্নত যে চিকিৎসার জন্য কাউকে কষ্ট করে ভিন্ রাজ্যে যেতে হবে না। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক প্রবীণ হেপাটোলজিস্ট কিছু দিন আগেও সরকারি হাসপাতালে নিজের ঘরে লিখে রেখেছিলেন যে, দক্ষিণ ভারত থেকে ঘুরে আসা রোগীদের তিনি পরিষেবা দিতে চান না। কারণ সেখানে অবস্থা আরও জটিল করে অধিকাংশ রোগী ফিরে আসেন। বিজেপিপন্থী চিকিৎসকদের প্রশ্ন, তা হলে এখন কেন ভিন্ রাজ্যে চিকিৎসা করাতে যাওয়াকে কার্যত সমর্থন করে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে? তা হলে কি এ রাজ্যে জটিল চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা যাচ্ছে না?
আরও পড়ুন: এফআইআর নিয়ে নাটক, আদালতে প্রশ্ন, ‘আপনার মেয়ে হলে পারতেন’
এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা রূপায়িত হয়েছে। ভেলোরে কিছু লোক যেতে চান, তাঁদের তো আটকানো যাবে না। বরং সেখানে গেলে যাতে চিকিৎসার জন্য নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করতে না হয়, সরকার সেই ব্যবস্থাই করেছে।’’ স্বাস্থ্য ভবনের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামোর যথেষ্ট উন্নতি সত্ত্বেও কিছু মানুষের মনে ভেলোর সম্পর্কে একটা বিশ্বাস কাজ করে, তাই তাঁরা সেখানে যান। এর সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার মানের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
আরও পড়ুন: জিএসটি কাউন্সিলে ঐকমত্য অধরাই, ধারের পথে ২১টি রাজ্য়
বিজেপিপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ন্যাশনালিস্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব তথা বিজেপি মেডিক্যাল সেলের কোর কমিটির সদস্য সোমনাথ সরকার আবার অভিযোগ করেছেন, ‘‘কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে চালু করতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী, মানুষকে বঞ্চিত করেছেন। এ জন্য মানুষ ক্ষুব্ধ। কারণ এটি চালু হলে ভারতের প্রায় সব রাজ্যের বহু হাসপাতালেই মানুষ ক্যাশলেস পরিষেবা পেতেন। এখন ভোটের আগে মুখরক্ষা করতে এবং মানুষের মন পেতেই ভেলোরের সিএমসি-কে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা হয়েছে।’’ এর পাল্টা হিসেবে তৃণমূল সাংসদ তথা ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেনের বক্তব্য, ‘‘আয়ুষ্মান ভারতের থেকে স্বাস্থ্যসাথী যে কোনও দিক দিয়ে একশো গুণ ভাল। এই মডেল সারা দেশে অনুসরণ করা উচিত। তাই বিজেপির চিকিৎসক সেল হীনম্মন্যতা থেকে এই ধরনের মন্তব্য করছে।’’
এ দিকে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, নয়াদিল্লির এমস-কে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনার ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথীতে রাজ্যের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বিমা সংস্থার একটি কাউন্টার এমসে থাকবে। স্বাস্থ্যসাথীর কোনও উপভোক্তাকে ভর্তি করার সময়ে এমসে কোনও টাকা জমা দেওয়ার প্রয়োজন হলে তা দেবেন ওই কাউন্টারের প্রতিনিধিই। উপভোক্তার চিকিৎসা সম্পূর্ণ ক্যাশলেসই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy