Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Sabar Community

সাদা কাগজে স্বপ্ন-উড়ানের গল্প শোনাল শবরকন্যারা

বান্দোয়ানের চাঁদড়া জুনিয়র হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির গীতা শবর স্বপ্ন দেখে আমবাগান গড়ে স্বাবলম্বী হবে। তার বাগানের হরেক প্রজাতির আম সবার সুখ্যাতি কুড়োবে।

girls.

রাজনওয়াগড়ের শিবিরে শবর মেয়েরা। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
কেন্দা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৩ ০৯:০৯
Share: Save:

‘অপরাধপ্রবণ’ জনজাতির তকমা ঘুচলেও শবরদের মন থেকে সেই ক্ষত পুরোপুরি মোছেনি। তাই সম্প্রদায়ের অনেকে এখনও সমাজের মূলধারা থেকে নিজেদের দূরে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু শিক্ষার আঙিনায় আসা শবরদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ভাবনা যে পাল্টাচ্ছে, তা ধরা পড়ল পুরুলিয়ার রাজনওয়াগড়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’-র আবাসিক শিবিরে। সেখানে সাদা কাগজে শবর কন্যারা লিখল তাদের স্বপ্নের কথা। শিক্ষার আলোয় সেই স্বপ্নের ভ্রূণ একদিন মহীরুহ হয়ে শবর সমাজকে ছায়া দেবে, আশাবাদী আয়োজকেরা।

২-৫ মে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন থানা থেকে আসা ৩০ জন শবর ছাত্রীকে নিয়ে ওই শিবিরে বাল্যবিবাহ রোধ, মদ-বিরোধী আন্দোলন মজবুত করা, স্কুলছুট ঠেকানো, প্রাথমিক চিকিৎসা ও আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়। শিবির শেষে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত লিখতে বলা হয়। লেখার ঝাঁপি শনিবার খুলতেই বাঁধ ভাঙে স্বপ্নের।

বান্দোয়ানের চাঁদড়া জুনিয়র হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির গীতা শবর স্বপ্ন দেখে আমবাগান গড়ে স্বাবলম্বী হবে। তার বাগানের হরেক প্রজাতির আম সবার সুখ্যাতি কুড়োবে। ওই থানার হেতাকোল হাই স্কুলের দশম শ্রেণির জয়ন্তী শবরের আশা, সে পশুপালনের মাধ্যমে স্বনির্ভর হবে। কেন্দা থানার কোনাপাড়া হাই স্কুলের দশম শ্রেণির অপর্ণা শবর ও রানিবাঁধ হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ভূমিকা শবর পুলিশ হতে চায়। ছোটবেলা থেকে তারা দেখেছে পুলিশের কি ক্ষমতা! গ্রামে কেউ মদ খেয়ে অশান্তি করলে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারা পুলিশ হয়ে তাদের অগোছালো সমাজটাকে পাল্টে দিতে চায়। আবার মানবাজারের কাশীডি সিআরসিজি বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির কবিতা শবর শিক্ষক হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তুলনায় গভীর ভাবনা বোরো থানার বসন্তপুর হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণির মালা শবরের। সে লিখেছে, অধিকারবোধ জন্মালে আলোর দিশা দেখতে পাওয়া যায়। তাই সেটাই আগে দরকার।

সমিতির সভাপতি রত্নাবলী শবরের কথায়, ‘‘একটা সময় যে কোনও অপরাধে শবরদের নাম জড়ানো হত। মিথ্যা চুরির অপরাধে শবরকে পিটিয়ে মারার নজির রয়েছে। পুলিশের গাড়ি দেখলে শবরদের গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে যেত। রোগ হলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চাইতেন না। আমরা নানা ভাবে শবরদের এগিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’’

কয়েক বছর আগে খেড়িয়া শবরদের মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন বরাবাজারের ফুলঝোরের রমণিতা শবর। সে কথা উল্লেখ করে সমিতির অন্যতম পরিচালক প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, ‘‘শবরদের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই এগিয়ে এসেছে। নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখছে ওরা। তাদের স্বপ্নকে সার্থক করতে সমিতি পাশে আছে, থাকবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Children Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE