Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Child Marriage

দেশে বাল্যবিবাহ কমে গেলেও বালিকাবধূর সংখ্যা বাড়ছে বাংলায়, বলছে ল্যানসেটের প্রতিবেদন

২০১৯-২০-র জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্টেও পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণে দুরবস্থার ইঙ্গিত ছিল। ল্যানসেটের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টেও গভীর উদ্বেগ উঠে এসেছে।

child marriage

—প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:০৩
Share: Save:

দেশে পাঁচ জনের মধ্যে এক জন নাবালিকার বিয়ে এখনও ঘটছে। নাবালকদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ছ’জনে এক জন। তবে সারা বিশ্বে মান্য ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে গত তিন দশকে সার্বিক ভাবে বাল্যবিবাহ কমলেও উল্টো পথে হাঁটছে ‘প্রগতিশীল’ পশ্চিমবঙ্গ। ১৯৯৩ থেকে ২০২১ পর্যন্ত বালিকাবধূর সংখ্যাবৃদ্ধিতে দেশে সত্যিই ‘এগিয়ে বাংলা’। এবং সংখ্যাটা আনুমানিক পাঁচ লক্ষাধিক।

২০১৯-২০-র জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্টেও পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণে দুরবস্থার ইঙ্গিত ছিল। ল্যানসেটের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টেও গভীর উদ্বেগ উঠে এসেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায়, ২০৩০ সালের মধ্যে নাবালিকা বিবাহ নির্মূল করার কথা রয়েছে। ল্যানসেটে প্রকাশ, ১৯৯৩ থেকে ২০২১-এর মধ্যে ভারতে নাবালিকা বিয়ের হার ৪৯.৪% থেকে ২২.৩% হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি রাজ্যের পরিস্থিতি না-পাল্টালে এই সঙ্কট মুক্তির সম্ভাবনা এক কথায় শূন্য। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে না দিলে কন্যাশ্রী বা রূপশ্রী প্রকল্পে থোক অর্থপ্রাপ্তির নানা সম্ভাবনা রাজ্যবাসীর সামনে মেলে ধরেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ১৩-১৮ বছরের মেয়েদের পড়াশোনার জন্য নানা বৃত্তি ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বাল্যবিবাহ রোধে বঙ্গ সরকারের চেষ্টা রাষ্ট্রপুঞ্জেও প্রশংসিত। কিন্তু পরীক্ষার নিট ফল নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন। ল্যানসেটের রিপোর্টেও নাবালিকা বিয়ে রুখতে আর্থিক অনুদানের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়ের সুর।

এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বা সংশ্লিষ্ট কর্তাদের থেকে সাড়া মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গে সরকারের কাজের শরিক ইউনিসেফ-কর্তারাও এই রিপোর্টের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ না-করে কিছু বলতে নারাজ। তবে শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী বাল্যবিবাহ নিয়ে বেশ কয়েকটি রাজ্যের পরিসংখ্যানে সংশয় প্রকাশ করছেন। তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহ যত রিপোর্ট হয়, ততটা অনেক রাজ্যেই হয় না।” ল্যানসেটের রিপোর্ট বলছে, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে বালিকা বধূরা ১৯৯৩ সালে ৩৩ লক্ষের ঘর থেকে কমেও এখন ১৬-১৭ লক্ষ। তবে পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক পিছিয়ে থেকেও বাল্যবিবাহ হ্রাসে তারা উন্নতি করেছে। রিপোর্টে ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থানের পরিস্থিতিও ঢের ভাল। বিহারেও নাবালিকা বিয়ে বৃদ্ধির হার বাংলার থেকে কম।

তবে বাল্যবিবাহ অনেক সময়ে শিক্ষা বা আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে না বলেই অনেকে বলছেন। এ এক জটিল মনস্তত্ত্বের প্রতিফলন বলেও ল্যানসেট মানছে। সরকারি রিপোর্টও বলছে, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমানের মতো ‘শিক্ষিত জেলায়’ নাবালিকা বিয়ে বাড়ছে। অনন্যার বক্তব্য, “বাংলার মেয়েরা অনেক স্বাধীনচেতা। এখানে ‘অনার কিলিং’ বা তথাকথিত সম্মান রক্ষায় খুন হয় না। কম বয়সে প্রেম, পালিয়ে বিয়ের প্রবণতাও প্রবল।” মেয়েদের ক্ষমতায়ন নিয়ে নানা কাজে সক্রিয় সমাজকর্মী দোলন গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বাংলার মনকে এত দূর শংসাপত্র দিতে রাজি নন। তিনি বলছেন, “বিয়ে বরং এখনও এখানে সর্বরোগহর ওষুধ। মেয়েরা প্রেম করছে, অপছন্দের বা ভিন্ন জাতের কাউকে ভালবাসছে, এমনকি কেউ সমকামী বা রূপান্তরকামী বলে জানা যাচ্ছে, তাকেও কোনও পুরুষের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকেই এত নাবালিকার বিয়ে।”

পাচার বিষয়ে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি দেবরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ইদানীং কয়েকটি জেলায় পাচার রোধে সরকারি সক্রিয়তায় খুশি। তবে তিনিও বলছেন, “বিয়ের ফাঁদে পাচার এখনও বিপজ্জনক প্রবণতা।” ল্যানসেটের রিপোর্টে অতিমারির পরের ছবি নেই। তখন নাবালিকা বিয়ে আরও বেড়েছে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। ২০০৬ থেকে ২০১৬, এই সময়পর্বে নাবালিকা বিয়ে একটু কমেছিল। ল্যানসেট বলছে, এর পরে ফের বেড়েছে। সেই বৃদ্ধিতে বড় রাজ্যগুলির মধ্যে এগিয়ে বাংলা। তবে কিছু স্বস্তির দিক, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বা প্রসূতির পরিচর্যা বাংলায় ভাল। কিন্তু কিশোরীদের রক্তাল্পতার সমস্যা বাড়ছে। জাতীয় সমীক্ষা বলছে, রাজ্যে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অংশীদারিও ধাক্কা খাচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage West Bengal Marriage The Lancet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy